প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আবু সাঈদ আহমেদ | ১২ জুলাই, ২০১৫
বেশ কিছুদিন ধরেই সচিবালয়সহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল বতর্মান ক্যাবিনেট থেকে কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়বেন। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে এবং দলে সমালোচনা থাকলেও তিনি যে বাদ পড়বেন- এটা কারো ধারণায় ছিল না। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন করার মাধ্যমেই হয়তো বতর্মান ক্যাবিনেট থেকে কয়েকজন বির্তকিত মন্ত্রীকে ছাটাইকর্মের প্রক্রিয়া শুরু হল।
২.
সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রণালয়ে এবং দলে কখনই সমালোচনার উর্ধে ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদে আলোচিত অভিযোগগুলো ছিল- ১. তিনি মন্ত্রণালয়ে ঠিকমত উপস্থিত থাকেন না, ২. মন্ত্রণালয়ের জরুরী সভাগুলোতে তাকে পাওয়া যায় না, ৩. তিনি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলসব সকল কাজই বাড়িতে নিয়ে যান, ৪. তাকে ফোনে পাওয়া যায়না, ৫. সন্ধ্যার পরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলে তিনি মন্ত্রীপরিষদের সভা্তেও উপস্থিত থাকেন না, ৬. কখনো কখনো অস্বাভাবিক অবস্থাতে সভায় বা মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন (উল্লেখ্য, তিনি মিডিয়ার সামনেও একাধিকবার অস্বাভাবিক অবস্থায় উপস্থিত হয়েছিলেন)। তবে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর হতেই তার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগগুলো ছিল। এই অভিযোগ সত্বেও পাঁচ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পরে তিনি পুনরায় মন্ত্রী হয়েছিলেন।
৩.
ওয়ান ইলেভেনের সময়কালে সৈয়দ আশরাফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মূলত এই সময়ে্ই তিনি লাইমলাইটে আসেন। বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতায় সফল হন। দলে প্রভাব বিস্তার করেন এবং সাধারণ নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পরবর্তী সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেব ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন। সারা দেশের সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে তিনি রীতিমত অমাবস্যার চাঁদে পরিণত হন। খোদ তার এলাকার নেতাকর্মীরা বলেন আশরাফ সাহেব ভালো লোক কিন্তু তার দেখা সাক্ষাত পাওয়া যায় না- এভাবে পার্টি চলেনা।
৪.
মন্ত্রণালয় এবং দলে সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে বর্তমানে যে সকল অভিযোগসমূহ আলোচনায় আসছে তার সবগুলোই বহুদিনের পুরাতন অভিযোগ। এই অভিযোগগুলোকে সংগী করেই তিনি দ্বিতীয়বারের মত মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ এই সকল অভিযোগের জন্য তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হতে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয় নাই। একনেকের বৈঠকে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
একথা সত্য যে, একনেকের বৈঠকে তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল, কারণ আলোচ্যসূচীতে তার মন্ত্রণালয়ের ফাইল ছিল। একটি সূত্র জানায়, একনেকের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী নাখোশ হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু শুধু একনেকের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার কারণে ব্যবস্থা নেবার মত রেওয়াজ আমাদের দেশে নাই।
প্রধানমন্ত্রী গত ছয় বছর ধরেই সৈয়দ আশরাফের এই ধরণের আচরণে অভ্যস্ত। ইতিপূর্বে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে সৈয়দ আশরাফকে বলেছিলেন তার ফোনটা যেন অন্তত আশরাফ সাহেব রিসিভ করেন। একনেকের বৈঠকে উপস্থিত না হবার জন্য তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দফতর বিহীন করা হয়েছে- এটা পুরোপুরি সঠিক নয়।
৫.
একজন সাংসদ বিশাল অংকের টাকা ব্যয় করে নমিনেশন কেনেন এবং তার থেকেও বেশী টাকা ব্যয় করে নির্বাচন করেন। স্বাধীনতার পর হতে ক্ষমতাসীন প্রতিটা সরকার বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচীর মাধ্যমে নির্বাচিত সাংসদের নির্বাচনী ব্যয় মিটিয়ে দিতে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের টু-পাইস ইনকামের ব্যবস্থা করে দিতে হরিলুটের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছে। ট্যাক্স ফ্রি গাড়ির মত এমনই একটি কর্মসূচী হচ্ছে স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সাংসদের মাথাপিছু বিশকোটি টাকা বরাদ্ধ। এই বরাদ্ধকৃত অর্থ নিজের ইচ্ছেমত নিজ নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নের নামে ব্যবহার করতে পারবেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আশরাফ এই বরাদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তার অধীনেই এই অর্থ ব্যয় হউক। প্রধানমন্ত্রী একজন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অপেক্ষা্ সকল সাংসদদের খুশী রাখাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। মূলত: তিনি সাংসদদের সাথে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সংঘাত এড়াতেই তাকে দফতরবিহীন করেছেন।
৬.
পাঁচ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনকে সাংবিধানিক বৈধতা হিসেবে মুরুব্বী রাষ্ট্রগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত করতে সৈয়দ আশরাফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অবশ্য, তিনি একই সাথে মুরুব্বী রাষ্ট্রগুলোকে মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। কিছুদিন যাবত দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপ আর মুরুব্বী রাষ্ট্রগুলো মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।
সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত এই বার্তাই দিলেন যে- সরকার আর মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহী নয়। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অলিখিতভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা হতে সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রতিশ্রুত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে চাইছে সরকার। আসন্ন কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক পদ হতে বাদ পড়লে বিস্মিত হবার কিছু নেই।
৭.
শেখ হাসিনা রাজনীতি বেশ ভালো করেই বুঝেন। তিনি দারুণ সমালোচিত কামরুল ইসলামকে অব্যাহতি না দিয়ে সৈয়দ আশরাফকে সরকার এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থেই দফতরবিহীন করেছেন। চরম ব্যর্থ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীকে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তবে বর্তমানে দফতরবিহীন মন্ত্রী হলেও আস্থাভাজন সৈয়দ আশরাফকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন কাজে লাগাবেন অথবা আব্দুর রাজ্জাকের মত আউট-অফ-ফোকাসে পাঠাবেন সময়ই সেটা বলে দেবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য