আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

দৃশ্যমান বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বার্থে

রণেশ মৈত্র  

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ষাটের দশক একটি অবিস্মরণীয় স্থান দখল করে নিয়েছে। এ দশকের মুখায়িত অবদান, তার উদ্দামতা, তার ব্যাপকতা এত দ্রুতলয়ে অগ্রসর হচ্ছিলো যে তার একটি উল্লম্ফন ঘটেছিল ১৯৭২ এ যখন মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলাম। এই মুক্তিযুদ্ধের সকল পরিণতির জন্য যে ভিত্তিভূমির অর্থাৎ ব্যাপক গণ-ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ছিল অসীম, ৭ মার্চের অসাধারণ ভাষণ এবং তার পশ্চাতে ২৩ বছরের ধারাবাহিক গণসংগ্রাম তা প্রবলভাবে গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ষাটের দশক কি কোন পূর্ব ইতিহাস ব্যতিরেকেই ষাটের দশকে পরিণত হতে পারতো? সূচনা করতে পারতো কি ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের?

বস্তুত: ইতিহাসও একদিনে বা এক বছরে সৃষ্টি হয় না। গণ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানও না। বিস্মৃত পঞ্চাশের দশককে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের কোন আন্দোলনই দৃশ্যমান হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না ষাটের মত উত্তাল একটি দশকেরও। পঞ্চাশের দশক বাঙালি জাতির তাবৎ গৌরবোজ্জ্বল উত্থানের ভিত্তিভূমি গড়ে তুলেছিল তার ধাত্রীর কাজটি সাফল্যের সাথে হয়েছিল ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ ও ১৯৭১। যেন একটি আন্দোলনের মালা গাঁথা হয়েছিল আন্দোলন-সংগ্রামে বিকশিত ফুলে ফুলে। তার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে, নগর থেকেই নগরান্তরে শহরে থেকে শহরান্তরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

স্মরণে আনা প্রয়োজন যে চল্লিশের দশকের শেষ প্রান্তে এসে ১৯৪৮ সালের মার্চে করাচী থেকে শহীদ ধীরেন দত্তের জ্বালানো ভাষা আন্দোলনের সলতেটি কম তাৎপর্য বহন করে না। করাচী থেকে ফিরে যখন জননেতা ধীরেন দত্ত ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানান, জানান সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। সেই থেকে শুরু।

অত:পর জন্ম নেয় পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ১৯৪৯ সালে, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫১ তে গড়ে তোলেন পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ আগামী দিনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবার দায়িত্ব নিয়ে।
কিন্তু ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি করাচীর সংসদে শহীদ ধীরেন দত্তের জ্বালানো বাংলা ভাষার সলতেটি দিব্যি স্ফুলিঙ্গে পরিণত হয়ে একটি ঝড় তুলে ফেললো পূর্ববাংলার শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামে, গ্রামান্তরে। বাঙালির কণ্ঠে শ্লোগান উঠলো “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”-“অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” “বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে হবে।” প্রকম্পিত হলো ঢাকা সহ পূর্ব বাংলার রাজপথ।

বাঙালির নবজাগরণের মুহূর্ত হিসেবে, তার ঘরের ফেরার আন্দোলন হিসেবে অসাধারণ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হলো একুশে ফেব্রুয়ারি বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের ইসলামী জোশ, তার দ্বিজাতিতত্ত্ব তার তাবৎ বৈষম্যমূলক বাঙালি ও বাঙলা ভাষা বিদ্বেষী ক্রিয়াকলাপকে এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলো তরুণ সমাজ। সলতে থেকে স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গ থেকে অগ্নিঝড় গ্রাস করলো সমগ্র পূর্ব বাংলায়-চূড়ান্ত পরাজয়ের ঘণ্টা নিনাদিত হতে শুরু করলো যেন।

আন্দোলনকারীরা দেখলেন, ভাষা আন্দোলনকে অমর করে রাখতে হলে সাম্প্রদায়িকতাকে “না” বলতে হবে আঁকড়ে ধরতে হবে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক চেতনাবোধকে কারণ ঐ চেতনাই হলো ভাষা আন্দোলনের মৌলিক প্রাণশক্তি।

কিন্তু এই নবতর চেতনা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিস্মৃত সেই চেতনা হিসেবে অসাম্প্রদায়িকতাকে মজবুত ভিত্তির উপর বাঙালি সমাজে দাঁড় করাতে হলে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তাই ১৯৪৮ এই গড়ে উঠেছিল বামপন্থী পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগ (বর্তমানের আওয়ামী যুব লীগ নয়) এবং যুবলীগ ১৯৪৮ ও ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

অত:পর বাহান্ন সালেই, তার শেষার্ধে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ গড়ে তুললেন বিভাগোত্তর বাংলার প্রথম অসাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদও সামন্তবাদ বিরোধী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের লক্ষ্য ঘোষিত হলো “ঐক্য-শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি”। এই লক্ষকে সামনে রেখে তাকে হাজির নাজির জেনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-নেত্রী ও কর্মীরা ছড়িয়ে পড়লেন দেশের জেলায় জেলায়, মহকুমায় মহকুমায়, থানায় থানায়। উল্কার বেগে ছাত্র ইউনিয়ন ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বহুসংখ্যক ছাত্রীও হলেন এই সংগঠনের সাহসী সংগঠক তাঁরাও ছাত্র নেতাদের সাথে মিলে মিশে সর্বত্র ঘুরে ঘুরে ছাত্র ইউনিয়নে ব্যাপ্তি ঘটালেন।

ছাত্র ইউনিয়ন যে রাজনীতি প্রচারের এক গৌরবোজ্জ্বল বাহনে পরিণত হলো তাই হলো বামপন্থী রাজনীতি এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক প্রসারের সাথে সাথে ঐ রাজনীতি ও তার প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, অর্থনৈতিক বৈষম্য অবসানের সপক্ষে এক নবতর রাজনীতিরও প্রসার। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করা গেল, সারাদেশের ছাত্র যুব সমাজ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হলেন সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরোধিতার আবেদন। দেশের মানুষ যুব সমাজ সহ ঐ আদর্শগুলিকে গ্রহণ করে ফেললেন আগ্রহভরে।

ক্রমশ দাবী উঠতে থাকলো পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম ছাত্র লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগকেও তাদের নাম থেকে মুসলিম শব্দ তুলে দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতা আঁকড়ে ধরতে হবে। দাবীটি জনপ্রিয়তা অর্জনের সাথে সাথে কিছুকাল পরে উভয় সংগঠনই তাদের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দ তুলে দিলে দেশে সার্বিকভাবেই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি একটি স্থান পেয়ে গেল। এবং তার আবেদন এমনই যে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে আর কোন সংগঠন তার নামের সাথে “মুসলিম” শব্দ জুড়ে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে নি।

ছাত্র ইউনিয়ন দেশের জনজীবনের সমস্যাবলী ও ছাত্র সমাজের শিক্ষা সংক্রান্ত এবং শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে সর্বজনীন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা চালুর দাবীতে, ছাত্র সমাজের দৈনন্দিন সমস্যাবলী দূর করার দাবীতেও আন্দোলন গড়ে তুলে ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনে পরিণত হতে পেরেছে। শিক্ষক সমাজের ন্যায় সঙ্গত দাবীগুলিও যথাযথ গুরুত্ব পেয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন সূচিত আন্দোলনগুলিতে।

একই সাথে গড়ে উঠতে থাকলো সাংস্কৃতিক আন্দোলন যাতে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও লেখালেখি প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ অবদান রাখতে শুরু করেন। ভারতের আই.পি.টি. এর চেতনাধারার সাথে ভাষা আন্দোলনের চেতনার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো সমগ্র পূর্ব বাংলাব্যাপী। রচিত হতে থাকল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নতুন এক আবহ। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকলো খেটে খাওয়া মানুষের, অবহেলিত কৃষক, শ্রমিক ও নিম্ন ও মধ্য মধ্যবিত্তের রাজনীতির অঙ্গনে পদচারণা।

সেই থেকে পথ চলতে শুরু করে বামপন্থী রাজনীতি পাকিস্তানের বুক চিরে। কাজটা তখন সহজ ছিল না। তার জন্য জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে প্রগতিশীল নেতা-কর্মীদেরকে যার সিংহভাগই ছিলেন গোপন কমিউনিস্ট পার্টির ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মী।

বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের জয়যাত্রা এই বিশাল কর্মী বাহিনীকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে। পাকিস্তানের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও পরিণত হন বিশ্বসমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশে।

কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত: নিষিদ্ধ ছিল। পার্টির অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে থেকে কাজ পরিচালনা করতেন। কমিউনিস্ট হিসেবে বেশী পরিচিত নন এমন নেতা-কর্মীদেরকে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে একদিকে গণ-সম্প্রীতি বাড়ানো অপরদিকে দুলটিকে অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে রীতিটি ফলপ্রসূ হয়েছিল। সেলিনা বানু, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, ভাষা মতিন সহ অনেক কমিউনিস্ট নেতা আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। দলের সভাপতি মওলানা ভাসানী ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিসমূহের বড় অবলম্বন কমিউনিস্টদেরও। অত:পর সকলের এবং শেখ মুজিবের উদ্যোগটি ভূমিকায় ১৯৫৬ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগে পরিণত হলো। তার আগেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে পরিণত হয়। রাজনীতিতে মূল মূল সংগঠনের অসাম্প্রদায়িকীকরণ পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক নতুন উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পূর্ব বাংলাতেও তখন আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-কংগ্রেস কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতাসীন।

অকস্মাৎ দেখা গেল দেশের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের বিন্দুমাত্র সংশোধন না করেই ঘোষণা করলেন “পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভাগ স্বায়ত্তশাসন” হয়ে গেছে অথচ ঐ স্বায়ত্ত শাসনের দাবীতে আওয়ামী লীগই ছিল চ্যাম্পিয়ন দেখতে পাওয়া গেল আওয়ামী লীগের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতির প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞা-অবহেলা প্রদর্শন করে দলীয় নীতি আদর্শ পরিপন্থী সাম্রাজ্যবাদ ঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতি ও পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি, সিয়াটো-সেন্টো প্রভৃতি সামরিক চুক্তির প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেন। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সমগ্র পাকিস্তানের সকল প্রদেশের প্রগতিশীল, বাম-গণতান্ত্রিক দলগুলির সমবায়ে ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করে। দলটি তখন পাকিস্তানের বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীদলে পরিণত হলো। সর্বত্রই আনন্দের হিল্লোল পরিলক্ষিত হলো।

অত:পর সমগ্রপূর্ব পাকিস্তান ব্যাপী ন্যাপ গড়ে তোলা হয়-এতে মওলানা ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ও অপরাপর বামপন্থী নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভূমিকা অবলম্বন করে সারা প্রদেশে ন্যাপের নানা শাখা প্রশাখা গড়ে তোলেন। সঙ্গে আরও ছিলেন সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মীর হাবিবুর রহমান, চৌধুরী হারুনর রশিদ প্রমুখ দেশবরেণ্য বামপন্থী প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দ। ন্যাপ হয়ে দাঁড়ালো পূর্ব বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এবং পাকিস্তানের বৃহত্তম দল।

স্বভাবত:ই সামরিক শাসনের অবসান, সাম্প্রদায়িকতার অবসান, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী সমগ্র পাকিস্তান ব্যাপী ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো। সেই ১৯৫২ থেকে ১৯৫৯ মাত্র এই ১৭ বছরের মধ্যে দেশের বামশক্তি একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হলো। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সাথে ন্যাপের কোয়ালিশন এবং কেন্দ্র, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ন্যাপের একক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিল।

ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬ দফা তথা বাঙালীর স্বায়ত্তশাসন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় ন্যাপ অনেক সংগঠন হওয়া সত্বেও পূর্ব বাংলার প্রায় সবগুলি আসন পেয়ে গেলেন। ন্যাপ পেল বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। ঐ দুটি প্রদেশেই ন্যাপের একক শক্তিতে সরকার গঠিত হলো।

ধীরে ধীরে ক্ষমতার হাত বদলের দাবী জোরদার হলো আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের নেতৃত্বে। পরিণতিতে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এই পর্যায় সহ সকল পর্যায়েই ন্যাপ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমিউনিস্ট পার্টি অনেক দিন আগে থেকেই ন্যাপের মধ্যে কাজ করার নীতি গ্রহণ করে।

এতটা গৌরবোজ্জ্বল অতীতের দাবীদার ন্যাপ কিন্তু তার সাংগঠনিক ঐক্য ধরে রাখা যায় নি। ১৯৬৭ সালে চীন রাশিয়ার দ্বন্দ্বে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হয় রুশ ও চীনপস্থী হিসেবে। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে চীনপন্থি এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বে রুশপন্থী ন্যাপ গঠিত হয় যা এড়িয়ে গিয়ে ঐক্য বজায় রাখতে পারলে বাংলায় ইতিহাস হয়তো ভিন্নভাবে লিখিত হতো।

মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের সামগ্রিক এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের অসাধারণ ভূমিকা সকল মহলের সশ্রদ্ধ প্রশংসা অর্জন করেছিল। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী গঠন করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমগ্র সমাজ তান্ত্রিক বিশ্বের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থনেই মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য অর্জিত হয়।

প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশের বামপন্থী আন্দোলন আরও দ্রুতগতিতে অগ্রসর হবে, সমাজের সকল স্তরের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তা সম্ভব হলো না কারণ-

প্রথমত: ন্যাপে দীর্ঘকাল যাবত কর্মরত কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীকে কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রকাশ্যে কাজ করার জন্য Open করা;

দ্বিতীয়ত: দফায় দফায় ন্যাপে ভাঙ্গন। পরিণতি দাঁড়ালো ভয়াবহ ও আত্মঘাতি। দুর্বল হতে হতে আজ ন্যাপ ও তার নানা খণ্ডাংশ আজ চোখে দেখা যায় না। দেশে শূন্যতা। বামপন্থী সংগঠনও আন্দোলনে শূন্যতা। প্রগতিশীল সকল সংগঠনই প্রায় অস্তিত্বহীন ও স্থায়িত্ব আজ তাই সর্বাগ্রে ন্যাপের সকল অংশের ঐক্য ও অতঃপর সকল বামপন্থী দলের ঐক্য অপরিহার্য।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ