প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শওগাত আলী সাগর | ০৯ অক্টোবর, ২০১৯
আবরার খুন হওয়ার পর ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা না করা নিয়ে একটা বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বিতর্কটাকে আমি একেবারে অপ্রয়োজনীয় মনে করছি। যেখানে রাজনীতিই নাই, যেখানে ছাত্ররা রাজনীতিই করে না- সেখানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা না করা নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ কোথায়! তার চেয়ে বরং দেশটায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেন। সবকিছু নিয়ম মতো চললে তো কোনো কিছুতেই আর সমস্যা হয় না।
আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে- এটি প্রমাণিত সত্য হলে তো আবরারকে মরতে হতো না।
২.
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে যারা কথা বলেন- তাদের বক্তব্য, যুক্তি তর্কে স্পষ্ট, তারা এখনো ৭০ পূর্ববর্তী সময়ে আছেন। ছাত্ররাজনীতির স্বপক্ষে তাদের যুক্তিগুলোও স্বাধীনতা-পূর্বকালীন সময়ে প্রেক্ষিতকে ঘিরেই। বরং যারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলেন- তারা সমকালের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখেই কথা বলছেন বলে ধারনা করা যায়। সেই প্রেক্ষিতটায় যতোটা না রাজনীতি আছে, তার চেয়েও বেশি আছে দুর্বৃত্তপনা। দুর্বৃত্তপনাকে রাজনীতি ভাবলে সেটিকে বন্ধ করে দেয়ার দাবি তোলাটাই তো স্বাভাবিক।
৩.
আবরার খুন হওয়ার পর ছাত্রলীগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে এবং একদিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটির ফলাফলও প্রকাশ করে ফেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো দ্রুত কোনো তদন্ত কমিটির ফলাফল আলোর মুখ দেখেছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু পত্রিকায় ছাত্রলীগের তদন্তের ফলাফল সংক্রান্ত বক্তব্য পড়ে আতংকিত হয়েছি। আবরারকে পিটিয়ে পিটিয়ে খুন করা ছাত্রলীগের নেতাদের চেয়েও ছাত্রলীগের তদন্তকারীদের বেশি বিপদজনক মনে হয়েছে আমার কাছে।
৪.
ছাত্রলীগ তার তদন্তের উল্লেখ করে বলেছে, ‘বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে, ছাত্রলীগের সেই নেতা-কর্মীরা তখন ‘মাতাল’ ছিলেন বলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।’ এই তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ। তিনি বলেছেন, ‘সেদিন রাতে (রবিবার) যারা এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে তারা পূজায় গিয়েছিলেন। সেখানে তারা মদ পান করেছিলেন। তারা সবাই মারাত্মক রকমের ড্রাঙ্ক ছিলেন।(সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দাবি- যারা আবরারকে খুন করেছে তারা ‘মাতাল’ ছিলো। তারা পূজায় গিয়ে মদ্যপান করেছে। ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যে মনে হতে পারে- পূজা কোনো একটি বার বা মদের দোকান যেখানে গেলেই মদ পান করা যায়।
ছাত্রলীগের নেতারাও পূজায় গিয়ে মদ পান করে অতিরিক্ত মাতাল হয়ে এই কাজটি করেছে। ছাত্রলীগের তদন্ত অনুসারে আবরার হত্যা আসলে মাতালদের কাজ- এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়!
এই যদি একটি ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা এবং বক্তব্য হয়, তা হলে দেশে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আর কোনো বিতর্ক করার অবকাশ থাকে না। একজন শিক্ষার্থী খুন হয়েছে, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, একদিনের মধ্যেই প্রায় সব সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেপ্তার করে ফেলেছে, সেখানে ছাত্রলীগ কী না সেটিকে ‘মাতালদের’ কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়! নিজ দলের সরকারের পালস যারা বুঝতে পারে না কিংবা বুঝতে চায় না- তারা কি আসলেই রাজনীতি করে? তাদের রাজনীতি করতে দেয়াটাও তো বিপদজনক।
‘খুনিরা সবাই মাতাল ছিলো’- এটি প্রমাণ করা গেলে বিচারে কতোটা সুবিধা পাওয়া যায়- সেটা আইনজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আবরার হত্যাকে ’মাতালদের কাজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যে ছাত্রলীগ, তারা আবরার না মরলে- তার পকেটে মাদক ঢুকিয়ে তাকে যে মাদকসেবী বানিয়ে দিতো- তাতে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ থাকে কি!
৫.
তাই বলি, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিতর্কের চেয়েও আইনের শাসন, নিয়মের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে বরং আলাপ হউক। এই যে সরকার একদিনের মধ্যে নিজ দলের নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করার মতো সক্রিয়তা দেখাতে পেরেছে- সেটা যেনো আরও বাড়ে, তা নিয়ে কথা বলি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য