প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ৩০ অক্টোবর, ২০১৯
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসি এন্টি করাপশন কোডের অধীনে যে সিদ্ধান্তটি, আমি সেই সিদ্ধান্তটি পড়েছি। এইটা নিয়ে টেলিভিশনে একটা সংবাদ পর্যালোচনা ধরণের অনুষ্ঠান দেখেছি, আশেপাশের বন্ধুবান্ধব চেনা পরিচিত লোকজনের কথা শুনেছি। আমি এই বিষয়ে আমার কথাটা বলে রাখি।
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্তটি হয়েছে সেটা তো আমাদের জন্যে সেরকম আনন্দদায়ক কোন সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের জাতীয় দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আর সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড় যে ছেলেটি তাকেই যদি এক বছরের জন্যে খেলা থেকে বাইরে থাকতে হয় তাইলে সেটা আমাদের জন্যে কতোটুকু কষ্টের হতে পারে সে তো সকলেই বুঝতে পারেন। আর সেই নিষেধাজ্ঞাটি যদি হয় ক্রিকেটের দুর্নীতি বিরোধী বিধানের অধীনে তাতে তো আমাদের জন্যে ব্যাপারটা আরও বেশী দুঃখজনক হয়। সবচেয়ে যে ভাল ছেলেটি আমাদের, তার বিরুদ্ধেই কিনা এইরকম সিদ্ধান্ত!
কিন্তু সিদ্ধান্তটি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন কেন এই শাস্তি। ইতিমধ্যে খবরগুলিতে তো দেখাচ্ছেই, আপনারাও দেখেছেন, সাকিবের বিরুদ্ধে শাস্তিটা দুর্নীতির জন্যে নয়। ওর বিরুদ্ধে শাস্তি হয়েছে দুর্নীতি প্রস্তাব বা সেরকম সন্দেহজনক প্রস্তাব যে ওর কাছে এসেছিল, সেগুলি সময়মত আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে না জানানোয়। এই সংক্রান্ত বিধান হচ্ছে যে এরকম কোন পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়টির কাজ হচ্ছে বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষকে জানানো। সাকিব এই বিধান উত্তমরূপে জানতো। কিন্তু দীপক আগরওয়াল নামক এই লোকটির কথা সাকিব রিপোর্ট করেনি।
সাকিবের জায়গায় যদি অন্য দেশের অন্য কোন খেলোয়াড় হতো, বিশেষ করে আপনার পছন্দ নয় এরকম কোন খেলোয়াড় যদি হতো, তাইলে হয়তো আমাদের মধ্যে অনেকেই ঐ সিদ্ধান্তে বর্ণিত ঘটনাগুলির সাথে নানারকম অনুমান ইত্যাদি যোগ করে নানারকম নিন্দা মন্দ করতে শুরু করে দিতাম। কিন্তু সাকিব আমাদের ছেলে, আমরা ওকে চিনি, আমরা ওকে জানি। আমরা ওকে অন্তর থেকেই ভালোবাসি। আমরা ওকে ভালোবাসি। এজন্যে আমাদের জন্যে সাকিবের দায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। এজন্যেই আমাদের অনেকে এর মধ্যে ষড়যন্ত্র ইত্যাদি খুঁজতে চেষ্টা করি।
এইরকম ষড়যন্ত্র খুঁজতে যাওয়াটা আমার কাছে কোন কাজের কাজ মনে হয় না। ঘটনা যেটা ঘটেছে সেটা সত্যি। সাকিব স্বীকার করেছে এটা সত্যি, তদন্তেও দেখা গেছে এটা সত্যি। দীপক আগরওয়ালের সাথে এইসব যোগাযোগ সাকিব এর আগে এন্টি করাপশন ইউনিটকে জানায়নি। সাকিব জানতো যে এইরকম না জানানোটা শাস্তিযোগ্য কাজ। জানার পরেও সাকিব সেটা কেন জানায়নি কি বুঝে চেপে গেছে সেটা সেই ভালো বলতে পারবে। আমি সেটা নিয়ে কোন অনুমান কল্পনাও করতে চাইনা। আমি এইটাকে সাকিবের একটা ভুল হিসবেই দেখতে চাই। সে একটা ভুল করেছে, ভুলটার জন্যে শাস্তি হয়েছে ওর। এই সবকিছুই ক্রিকেট নামক এই মহান খেলাটিরই অনিবার্য অংশ। চলেন এইটা মেনেই নিই।
এখন তো সামনের একবছর সাকিব কোন ধরণের ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে পারবে না। সামনের এক বছর আমাদের টাইগাররা যখনই খেলতে নামবে আমাদের পরম ভরসার এই খেলোয়াড়টি আর মাঠে থাকবে না। দল যখন চূড়ান্ত বিপদের মধ্যে পড়বে আমরা হয়তো তখন অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলবো, হায় আমাদের সাকিব যদি থাকতো। কিন্তু সে তো কেবল একটি মাত্র বছর।
আমি এই ছেলেটিকে খুবই ভালোবাসি। এই ছেলেটা নিজের ভুলের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছে। সে আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে, আমাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল যে ছেলেটি সে যদি তার ভুল স্বীকার করে আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আমরা কি করবো? এই ছেলেটি তো আমাদেরকে অনেক গৌরবের মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। কতবার কতবার কতো খেলায় দেশে বিদেশে কতো মাঠে সাকিবের ব্যাট হেসেছে, ওর বলে উইকেট পড়েছে- আমাদের বুক গর্বে স্ফীত হয়েছে। আজ একটা ভুলের জন্যে ওকে শাস্তি পেতে হচ্ছে- সারা দুনিয়া ওকে শাস্তি দিতে চায় দিক, আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা ওকে বুকে টেনে নিব।
আমরা সকলে মিলেই সাকিবের পাশে দাঁড়াবো। কেননা আমাদের প্রিয় সন্তানটির সবচেয়ে কঠিন সময়ে যদি আমরাই ওর পাশে না দাঁড়াই তাইলে আর আমরা কিসের আপনজন! কি এমন করেছে সে? পাকিস্তানী ঐ প্লেয়ারটার, মোহাম্মদ আমির, ওর মতো চুরি করে তো আর জেলে যায়নি? আর কতো প্লেয়ার নিশ্চিত ম্যাচ ফিক্সিংয়ে ধরা পড়েছে- নামের লিস্টি করে দেখেন। ওদের তুলনায় আমাদের সাকিবের এইটা তো একটা নিষ্পাপ ভ্রান্তি মাত্র। আমরা তো সাকিবকে জানাবো যে, ভাই, ভুল যেটা হয়েছে হয়েছে। শাস্তি যেটা হয়েছে হয়েছে। এই সবকিছুই এখন ইতিহাসের অংশ।
আমাদের সাকিব এই এক বছর পর আবার ঠিকই ফিরে আসবে। ঠিকই আবার ব্যাট হাতে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে দুনিয়ার সামনে। আবার ঠিকই বল হাতে মুড়ি মুড়কির মতো উইকেট ফেলবে সব দলের। আমরা চাইবো এক বছর পড় আবার দ্বিগুণ ধার নিয়ে ফিরে আসবে আমাদের সাকিব আল হাসান।
আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল? ওয়েল, সাকিব আল হাসানকে তো আমরা আর আগামী একবছর ধরে পাবো না। সাকিব ছাড়াই খেলবে বাংলাদেশ দল। একটা দেশের ক্রিকেট টিম তো আর একজন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয় না- অন্যরা খেলবে। অন্যরা দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। দেখবেন সাকিবের এই অনুপস্থিতিতেই বেরিয়ে আসবে নতুন প্রতিভা, জ্বলে উঠবে অপেক্ষাকৃত নতুন খেলোয়াড়রা। সাকিবকে ছাড়াই ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ দল- ভালো খেলবে। আর সাকিবকে ছাড়াই এরকম ভালো খেলাটাই হবে আমাদের ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে সাকিবের জন্যে অনন্য ট্রিবিউট।
আমাদের সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আমরা আগেও গর্ব করেছি, এখনো করবো। আর, আমি নিশ্চিত, একবছর পর যখন সে ফিরে আসবে সাকিব সাকিব বলে চিৎকারে গগন বিদীর্ণ করার আর অনেক সুযোগ সে আমাদের করে দিবে।
সাকিব আল হাসানকে আমরা ভালোবাসি। আমরা ওর পাশে আছি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য