আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Advertise

মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ভালোবাসার ১০ কারণ

আরিফ রহমান  

মুহম্মদ জাফর ইকবাল; কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। এরবাইরেও আরও পরিচয় আছে তাঁর। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের এক ফেরিওয়ালা। তাঁর লেখনি আর তাঁর জীবনযাপনে তিনি ধারণ করেন একাত্তরকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তিনি নিরপেক্ষ নন, তিনি বাংলাদেশের পক্ষে। দেশের বড় বড় লেখকেরা নিজের লেখক পরিচিতি আর জনপ্রিয়তার কথা ভেবে কোনো পক্ষ এমনকি দেশের পক্ষও নেন না কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জাফর ইকবাল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। এজন্যে বাংলাদেশপ্রেমি মানুষ যেমন আছেন তাঁর বন্ধু হয়ে, তেমনি আছেন অগুন্তি শত্রু। তাঁকে ভালোবাসা যায় অনেক কারণে। তবে যে ১০ কারণে তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা তার মধ্যে আছে-

চেতনার বাতিঘর
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে লিখেছিলেন হুমায়ূন আজাদ। সময়ে সময়ে নষ্টদের অধিকারে আসলেই সবকিছু চলে যায়। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কাউকেই হয়তো শতভাগ শুদ্ধ দাবী করা যায় না। ব্যতিক্রম একজন জাফর ইকবাল। তাঁর লেখা, হ্যাঁ একমাত্র তাঁর লেখাই এই দীর্ঘ সময় ধরে লাইনচ্যুত হয়নি। আজকের প্রজন্মের জন্য একজন জাফর ইকবাল হচ্ছেন চেতনার মূর্ত লাইট হাউজ।

আশাবাদের প্রতীক
সম্প্রতি সাস্ট সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে আমি সিলেট যাই বিজয় দিবসের একটা প্রোগ্রামে। সেখানে আমার প্রায় দেড় ঘণ্টার একটা সেশন ছিল এবং স্যার পুরোটাই দেখেছেন। আমার বক্তব্যে আমি জোর দেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সামান্যীকরণ নিয়ে। এই প্রজন্মের অনেকের ইতিহাস লঘূকরণের বর্ণনা কিংবা ইতিহাস নিয়ে হাসি/তামাশা করা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে যাই এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। প্রোগ্রামের শেষে স্যার মঞ্চে উঠে বলেন ‘দেখ বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে, ওরা ঠিকই পড়বে, ওদেরকে একটু-আধটু ফেসবুক চালাতে দাও, এই প্রজন্মই কিন্তু শাহবাগ করে দেখিয়েছে…!’

এই যে আশাবাদ, এই যে প্রেরণা এটা বোঝানোর জন্যই ঘটনাটা উল্লেখ করলাম। স্যারের প্রতিটা লেখা শেষ হয় আশাবাদ দিয়ে। যখন শাহবাগের ওপর আক্রমণ চলছিল একের পর এক, যখন একটার পর একটা ব্লগার হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে, যখন গুম খুন হচ্ছে, যখন প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, যখন শিক্ষা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে সবসময়েই তিনি সামনের দিনে আশাবাদের কথা বলেছেন। দিয়েছেন সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

ন্যায্যতা
২০০৮ সালের বই মেলায় নজরুল মঞ্চের সামনে স্যারের অটোগ্রাফ শিকারিদের ভিড় বরাবরের মত। স্যারের ভক্তকুল লাইন ধরে সুশৃঙ্খল ভাবে অটোগ্রাফ নিচ্ছে। লাইন ভেঙে এসে এক মহিলা সামনে গিয়ে স্যারকে বলছেন- “স্যার, আমার ছেলে আপনার অন্যরকম ভক্ত। একটা অটোগ্রাফ দেন…”। স্যার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন- “দেখি তুমি আমার কেমন ভক্ত, একেবারে লাইনের শেষে চলে যাও। লাইন ধরে এসে অটোগ্রাফ নিয়ে যাও, তাহলে বুঝবো আসলেই তুমি আমার ভক্ত!”

কাউকে ফেরান না
প্রায় দশ বছর আগের কথা। আমার বন্ধুর ছোট বোন স্যারকে চিঠি লিখবে। আমার কাছে ঠিকানা খুঁজছে। আমি মনে মনে ভাবি স্যারের উত্তর পাওয়া কি এত সহজ, তাও দিলাম ঠিকানা। একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে আমিই পোস্ট করলাম। সপ্তাহ-খানেক পর উত্তর আসলো। এভাবে কত-শত বাচ্চা-কাচ্চা যে জাফর ইকবালের কাছ থেকে একটা চিঠি পেয়ে ধন্য হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের পোস্ট করা চিঠিটাতে ডাকটিকেটে কোন একটা গণ্ডগোল হয়েছিলো, ফলে দ্বিগুণ মাশুল দিয়ে স্যারকে চিঠিটা সংগ্রহ করতে হয়।

শাহবাগ আন্দোলন
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক সম্বন্ধে অনেকে বলেন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতিগণের মধ্যে পড়েন। কেউ কেউ বলেন আওয়ামী লীগ-প্রণীত ঐতিহাসিক ছয়দফার মূল ধারণা তাঁরই চিন্তার ফসল, এর সত্য মিথ্যা জানি না। তবে ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের পেছনে যেই বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা সেটা মাঠ পর্যায়ে তৈরি করার পেছনে যদি কয়েকটা নাম আসে তাহলে সবার আগে স্যারের নাম আসবে। নব্বই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার, ঘাতক-দালালদের কর্মকাণ্ডের বয়ান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এসবকিছু একেবারে ইঞ্জেক্ট করে দেয়ার পেছনে সবচাইতে বড় ভূমিকা যদি কারো থেকে থাকে তাহলে তিনি জাফর স্যার। আর সেই চিন্তা চর্চার ফসল হচ্ছে ২০১৩।