আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মুহম্মদ জাফর ইকবাল: প্রজন্মের মধ্যে যিনি আলো ছড়াচ্ছেন নিরন্তর

আলমগীর শাহরিয়ার  

এদেশে নতুন প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের যখন বলা হয় তোমার প্রিয় মানুষ বা ব্যক্তিত্ব কে? তাদের অনেকেই চোখ বুজে একবাক্যে উত্তর দেয়—মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এটা এক শ্রেণির মানুষকে ভীষণ পীড়া দেয়।—কেন পীড়া দেয়? সে উত্তর সহজ সরল বা সোজা নয়। কিছুটা ইতিহাস সাপেক্ষ ও জটিল।

একজন মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় কতটা সফল তাঁর নিন্দুকের সংখ্যা দেখলে বুঝা যায়। শিক্ষাবিদ, জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক, লেখক জাফর ইকবালের সদাজাগ্রত নিন্দুকের সংখ্যা দেখেও আমরা তা আন্দাজ করি। এই সদাজাগ্রত নিন্দুকের দল এই মানুষটিকে বিতর্কিত করতে, বাতিল করতে, এমনকি খুন করতে মরিয়া। কারণ এরকম একজন মানুষ নিজেই যখন তাঁর কালে অনতিক্রম্য একটি বিশাল প্রভাবক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেন, সেই রাষ্ট্রের প্রজন্মের চিন্তা, আদর্শ, বিশ্বাস ও মানসগঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন, তখন গোষ্ঠী বিশেষের শিরঃপীড়া হয় বৈকি।

আমাদের প্রজন্মের মানস গঠনে, আদর্শ ও ভাবনায় একজন জাফর ইকবালের বিস্তর প্রভাব। বলাবাহুল্য, এদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, আদর্শ ও লক্ষ্য বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী কোনকালেই এটা সুনজরে নেয়নি। তারা তাকে সুযোগ পেলেই নিন্দামন্দা করেছে, গালাগালি করেছে, তাদের চেয়ে এক স্তর অধমেরা উদ্যত খড়গ তাকে খুন করতে চেয়েছে। কিন্তু বিপরীতে এদেশের কিশোর-তরুণেরা একজন জাফর ইকবালকে অকল্পনীয় রকম ভালোবেসেছে।

এদেশে জাফর ইকবালের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় রকম তুঙ্গস্পর্শী। এটাও তাঁর ভাবাদর্শের বিপরীতে থাকা শত্রু শিবিরের চক্ষুশূল হয়েছে বারংবার। জাফর ইকবাল একটা প্রজন্মকে তাঁর লেখা দিয়ে, সাংগঠনিক তৎপরতা দিয়ে (যেমন—বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, প্রথম আলোর 'গণিত অলিম্পিয়াড', 'ভাষা প্রতিযোগ', 'মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো' ইত্যাদি) এদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার জন্ম দিয়েছেন। এরাই একদিন এক সমুদ্রগর্জনে শাহবাগে জেগে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। যেখানে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ছিল নির্বিকার, উদাসীন। বিএনপি তাদের নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ক্ষমতার ভাগ দিয়েছিল। শহীদের রক্তজমাট হৃদপিণ্ডের মত লাল পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে উড়তে দিয়েছিল। শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধের কংক্রিটের স্থাপনার অন্তরালে লাখো শহীদের হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছিল সেসময়। আহত বিক্ষুব্ধ প্রজন্ম ক্ষমতার পাদপ্রদীপ থেকে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালের নির্বাচনে।

এভাবে স্বৈরাচার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের শাসনামলে বেড়ে ওঠা একটা প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তো নয়ই, বিকৃত ও অতি সংক্ষিপ্ত দায়সারা ইতিহাস জেনে বড় হয়েছে। তাদের বোধের জমিন স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় কর্ষিত হয়েছে, মননে বিষবৃক্ষ বড় হয়েছে। এদের ভার বাংলাদেশকে বইতে হচ্ছে, বইতে হবে অনেককাল।

ভাবী প্রজন্মের কেউ যাতে স্বাধীনতা বিরোধীদের মত মন ও মানস নিয়ে বেড়ে না উঠে, বড় না হয়— এজন্য একজন জাফর ইকবাল নিরলস কাজ করে চলেছেন। নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ পেশা শিক্ষকতা করেও ছুটে গেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। ভাষা আন্দোলনের বছর আজকের দিনে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর সিলেটে জন্ম নিয়ে তিনি বাংলাদেশের জন্য রচনা করেছিলেন অন্যরকম এক বিজয়গাঁথা। ব্যক্তি একাই যেখানে সে বিজয় সংগ্রামের সম্মুখ সারির সেনানী হয়ে থাকেন। ব্যক্তি নিজেও কখনো প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেন। জাফর ইকবাল তেমনি এক প্রাচুর্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

এদেশে মেধাবীদের নিশ্চিত নিরাপদ গন্তব্য বিদেশ। ‘ব্রেন ড্রেইন’—যে দেশের মেধাবী তরুণদের নিয়তি সেখানে তিনি অনিশ্চিত অনিরাপদ জেনেও অনেকের স্বপ্নের দেশ আমেরিকার নিরাপদ জীবন পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদ, শহীদ পিতা ফয়জুর রহমান ঘুমিয়ে আছেন যে মাটির বুকে—সেখানেই ফিরে এসেছিলেন। বিদেশ বিভূঁইয়ে হারিয়ে যাননি।

শহীদ পিতার আত্মত্যাগ, রক্তস্নাত মাটি, মা আর দেশকে নিরঙ্কুশ, নিঃশর্ত ভালোবেসেই এ ফিরে আসা। বিপরীতে প্রায়ই দেখেছেন শত্রুর রক্তচক্ষু। কিন্তু এদেশের তরুণদের অনিঃশেষ ভালোবাসা ছিল তাঁর কর্মপ্রেরণা। জীবনের রসদ।

বইমেলায় যারা নিয়মিত যান তারা জানেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কোনো প্রকাশকের স্টলে নয় আম, বট বা কোনো এক উন্মুক্ত স্থানে বসে আছেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাঁর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর কোনো বই, 'ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' কিংবা 'আমার বন্ধু রাশেদ' নিয়ে অসংখ্য সপ্রতিভ, কোলাহল ও স্বপ্নমুখর আগামীর বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা অটোগ্রাফের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, ছেয়ে যায় কল্পনায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।

জাফর স্যার, জন্মদিনে আপনাকে প্রণতি, সশ্রদ্ধ সালাম। আপনার জন্য আমার প্রজন্মের অন্তরতম ভালোবাসা—সবসময়।

আলমগীর শাহরিয়ার, কবি ও প্রাবন্ধিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ