প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ০৯ জানুয়ারী, ২০২০
তার মানে দাঁড়ালো, ধর্ষক হতে হলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রদলের নেতা-কর্মী হতে হবে। ধর্ষক হতে হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক কিংবা ধর্ষিতার সাবেক প্রেমিক হতে হবে। ধর্ষক হতে হবে সুঠামদেহী।
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়ে যে, মেয়েটি যদি লাইভে এসে ‘মজনু’-কে চিহ্নিত করে, তবুও আপনারা বিশ্বাস করবেন না এই ভাঙাদেহী যুবক ধর্ষক হতে পারে।
কারণ, এই দেশের পত্র-পত্রিকায় ধর্ষণ বিষয়ক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আমরা এইসব চরিত্রের সংবাদ দেখেই অভ্যস্ত। যেকারণে, দেশে রাস্তার হকার, মাদকাসক্ত কিংবা যানবাহনের সহকারী কিংবা ড্রাইভারকে ধর্ষক ভাবতেই বড়ই কষ্ট দেয়। মাদ্রাসার হুজুরদের ধর্ষক ভাবতে এই দেশের মানুষদের বড় ভাবনায় ফেলে দেয়।
যেদেশে দুধের শিশুরা তাদের নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, ছেলে শিশুরা ধর্মীয় উপাসনালয়ে ‘ধর্ষিত’ হচ্ছে, সেই দেশে ধর্ষকদের জন্য মায়াকান্না হবে সেটাই স্বাভাবিক।
একটা মেয়েকে গোধূলির আভায় রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ে ‘পৈশাচিক’ যৌনাচার করা হলো, আর সেই ধর্ষককে আপনারা ভাবছেন, রাজনৈতিক নেতা কিংবা স্যুট পরা ভদ্রলোক হল না কেন?
যার মানসিকতা এমন নিম্ন, যে একটি জনাকীর্ণ রাস্তার পাশে যৌনকর্ম লিপ্ত হতে পারে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা আর মানসিক দৈন্য যে কত উঁচু হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ধরুন, মজনুকে ফুটপাতের হকার না হয়ে তার বাবা হলেন কোটিপতি, মজনু মিয়া রাজনৈতিক নেতা কিংবা মজনু মিয়া শিল্পপতি। তাহলে, এইসব মজনু মিয়ার কী কী শাস্তি দেখে আপনি অভ্যস্ত হয়েছেন?
সমাজের এই মজনু মিয়াকে রাষ্ট্র বিচারের টোপে প্রতিহত করতে পেরেছে? আপনি কতটা আপনার ধর্ষক বন্ধুকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে পেরেছেন?
এই যে আপনাদের উঁচুতলার ধর্ষক ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী ঘটনায় আমি, আপনি কতটায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলাম কিন্তু এর ফল কি হয়েছে জানেন?
‘সন্দেহ’ থাকা না থাকার বিষয় আপনার নিজস্ব। কিন্তু আপনাদের ধর্ষক নিয়ে কাল্পনিক’ চিত্র বড়ই পীড়াদায়ক।
এই সন্দেহবাজদের একটি বড় অংশ, ‘ধর্ষণের’ বিস্তারিত বর্ণনা পত্রিকায় পড়তে অভ্যস্ত তেমনি, এরা পদ্মাসেতুতে মাথা লাগাতে পারে, লবণ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড বাঁধাতে পারে তেমনি রসরাজদের কাঁধে বন্দুক রেখে উপাসনালয় ভাঙতে দ্বিধা করে না। এদের বড় একটি অংশ পরোক্ষভাবে ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করতে যেমন পারে, তেমনি সুযোগ পেলে নিজেদের ‘কামরিপু’-কে জাগিয়ে নারীকে বানিয়ে ফেলে তেঁতুল।
মজনুকে নিয়ে সন্দেহ করার আগে, আসুন ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন তৈরি করার দাবি তুলি। ঘর ও ঘরের বাহিরে নারীকে ‘নারীর’ মর্যাদাটুকু দিই। বাসে-ট্রেনে নারীর নিতম্ব ঘষাঘষি না করে, ‘বোন’ হিসেবে মনে আসন দেন। দেখবেন, আজকের মজনুরা ধর্ষকরূপে নয়, মজনুরা নারীদের দেখলে পিতা-ভাই হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে।
আগে নিজের ঘরে মা, বোন কিংবা স্ত্রীকে ‘মানুষ’ ভাবতে শিখুন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য