আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

রূপের রাণী চোরের রাজা

মাসকাওয়াথ আহসান  

পত্রিকায় একের পর এক 'টাকা পাচার করে ক্যানাডায়' সেকেন্ড হোম কেনার খবর আসাতে সেখানে 'রূপের রাণী চোরের রাজা'-রা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। ফেসবুকে যারা আগে 'প্রাউড অফ ইউ' লিখতো; তারাই এখন চোর বলে গালি দিয়ে যাচ্ছে।

চোরের রাজা আর্তনাদ করে ওঠে। রূপের রাণীকে ধমক দিয়ে বলে, ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করো। তোমার সব ঢং ছবি দেইখা অগো সন্দেহ আরও মজবুত হইতেছে।

টেনশানে চোরের রাজার ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়তে থাকে। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাকে 'রিচ ফুড' এড়িয়ে চলতে বলে। চোরের রাজা মনে মনে ভাবে, অর্থকষ্টে দশ বছর আগে যা খাইতাম; আবার সেই খাবারের লিস্ট ধরাইয়া দিতাছে ডাক্তার।

ক্যানাডার বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকেরা তাকে একের পর এক ফোন করছে। দু'একটা ফোন ধরে চোরের রাজা তাদের বলে, দেশে আমি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; আপনার মিডিয়াও তো প্রগতিশীল; এর ফান্ডিং-এর একটা গতি আমি কইরা দিমুনে।

কিন্তু এসব প্রলোভনে কাজ হয় না। শুধু সাংবাদিক নয়; অন্য অভিবাসীরাও চোরের রাজাদের চিহ্নিত করে তাদের নামে 'অর্থ পাচারে'র অভিযোগ দিতে থাকে ক্যানাডার সরকারের কাছে।

চোরের রাজা তার স্ত্রী রূপের রাণীকে পাঠায় প্রতিবেশী এক এমপির বাসায়। স্ত্রীকে পরামর্শ দেয়, দেশে যেইভাবে এমপি-আমলা ভাবীগো লাইগা কলাডা-মুলাডা ভেট নিয়া যাইতা; এইখানেও তা করতে হইবো। ক্যানাডারে সিস্টেম কইরা বাংলাদেশ বানাইতে হইবো।

রূপের রাণী ক্যানাডার এমপির বাসায় গিয়ে এমপি ভাবীর দেখা পায়। এটা তাদের ভাড়া বাসা; আর বাসার সব কাজ স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই করে; কোন ন্যানি নাই। এই করুণ অবস্থা দেখে দেশের এমপি-মন্ত্রীর প্রাসাদোপম বাড়ি, চাকর-বাকরের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে রূপের রাণীর মনে হয়, এইদেশে গণতন্ত্র নাই।

রূপের রাণী ক্যানাডার এমপির স্ত্রীকে প্রস্তাব দেয়, আমার বাসার ন্যানি আইসা প্রত্যেকদিন আপনারে একটু হেলপ করবে। আপনি আমার ধর্ম বইনের লাহান। আপনার সাহেবরে যদি একটু কাইন্ডলি বলেন, আমগো এই বিপদ থাইকা উদ্ধার করতে।

রূপের রাণীর কাছে বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপির সুযোগ সুবিধার গল্প শুনে ক্যানাডার এমপির স্ত্রীর মনে হয়, বাংলাদেশ রূপকথার মতো একটা দেশ।

রূপের রাণী ফিরে গেলে ক্যানাডার এমপির স্ত্রী তার স্বামী বাসায় ফেরার অপেক্ষা করে। এমপি সাহেব ফিরলে স্ত্রী গাল ফুলিয়ে বলে, বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশে এমপিরা অনেক সুবিধা পায়। আর এখানে তুমি নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াও। যাও জাস্টিন ট্রুডোকে বলো, সুযোগ সুবিধাগুলো বাড়াতে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও ভাড়া বাসায় থাকি আমরা। আর বাংলাদেশের এমপি-মন্ত্রীদের রীতিমত রাজপ্রাসাদ; তাদের হাতারাই দেখো গিয়ে এ পাড়ার সবচেয়ে বড় বাড়িগুলো কিনেছে।

স্ত্রীর জোরাজুরিতে ক্যানাডার এমপি সাহেব প্রতিবেশী চোরের রাজার পরামর্শ নিতে চেষ্টা করে। তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। জাস্টিন ট্রুডোর বাবা ক্যানাডার সাবেক শীর্ষ নেতা পিয়ের ট্রুডোর সমাধি খুঁজে বের করে। সেখানে অশ্রুসিক্ত চোখে ছবি তোলে।

চোরের রাজার সহায়তায় চালু হয়, পিয়ের ট্রুডো স্মৃতি রক্ষা ফাউন্ডেশন। সেখান থেকে ক্যানাডার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের পদক প্রদান শুরু হয়।

এসব মহতী উদ্যোগ দেখে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে জাস্টিন ট্রুডোর মন আন্দোলিত হয়। তিনি বলেন, উদ্যোগটা ভালো; কিন্তু এতে কোন সহযোগিতা করার আর্থিক এখতিয়ার আমার নেই। একবার এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ঘড়ি উপহার নেয়ায়; মিডিয়ায় সমালোচনা হলো; আদালতের নির্দেশে সে ঘড়ি সরকারি ভাণ্ডারে জমা পর্যন্ত দিতে হলো।

অনুষ্ঠান শেষে চোরের রাজা এগিয়ে এসে বলে, মিডিয়া, বিচার বিভাগ-এসবকে মুখ দিলেই এরা মাথায় ওঠে। একটু টাইট দিন ট্রুডো ভাই। এবার কিন্তু কোন মতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চর্চা না করলে এরপর আপনার দল আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আপনি একটা অ্যাপয়েনমেন্ট দিলে, আপনারে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-টা শিখাইয়া দিতে পারি।

প্রচুর আর্থিক অনুদান দিয়ে কয়েকজন চোরের রাজা ট্রুডোর রাজনৈতিক দলে ঢুকে পড়ে। আর রূপের রাণীরা ক্যানাডার মন্ত্রী-এমপির স্ত্রীদের উন্নয়নের 'কমিশন' আদায়ের কলাকৈবল্য শেখাতে থাকে।

ক্যানাডার বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের চোরের রাজাদের বড় বড় বাড়ি আর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান কিনতে দেখে; ক্যানাডার পেশাজীবীরা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা যা উপার্জন করে সেই অনুপাতে কর দিয়ে এতো বড় বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাতারাতি কেনা তো অসম্ভব।

ক্যানাডার সরকারি কর্মকর্তারা দলে দলে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে শুরু করে। জিডিপি মিরাকল আর সেকেন্ড হোম মিরাকলের সমন্বয় কীভাবে করতে হয়; তা না শিখলে সারাদিন কাজ করে ফিরে বাসন ধুতে ধুতেই তাদের বাকিজীবন চলে যাবে; এ তারা ঢের বুঝে গেছে।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ