প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মোনাজ হক | ২১ জানুয়ারী, ২০২০
কৌতুক অভিনেতা ভানুর সেই কৌতুকটা মনে আছে নিশ্চয়ই! ভানু পুলিশের কাছে গেলো একটা নালিশ নিয়ে। গতরাতে তার বাড়ি চুরি হয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞেস করলেন- চোর কে সেটা কি আপনি দেখেছেন? ভানু বললো- হ্যাঁ দেখেছি। চোর ব্যাটা তো আমার সামনেই সব চুরি করলো। ঘরে চোর ঢুকলে, ভানু টের পেয়েও নিঃশব্দে পড়ে রইলো বিছানায়। ভাবলো ‘দেখি না কী করে’। সিঁদ কেটে চোর ঘরে ঢুকে, মূল্যবান জিনিস নিলো; ভানু ভাবছে ‘দেখি না কী করে’। চোর কাজ শেষ করে যাওয়ার আগে ভানুর খাটের মশারি তুললো যেখানে ঘুমন্ত স্ত্রীসহ ভানু ঘাপটি মেরে পড়ে ছিলেন; চোর ভানুর বৌয়ের গলার সোনার হার খুলে নিলো। দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো, ভানু তখনও ভাবছেন, ‘দেখি না কী করে’। এবার পুলিশ বললেন, আপনার নিজের ঘরে চুরি হয়েছে আপনি যদি জেগে থেকে ‘দেখি না কী করে’ ভেবে চুপটি করে বসে বসে দেখতে পারেন, তবে পুলিশকেও দেখতে হবে, ‘দেখি না কী করে’!
বাঙালিরা এখন ভানুর মতই ‘দেখি না কী করে’ সিনড্রোম ভুগছে। সব বাঙালি এখন এক-একজন ভানু হয়ে গেছে। সেই ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক রাজাকারের লিস্টে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঢুকিয়ে যে অপরাধটি করেছেন তার ক্ষমা নেই। প্রধানমন্ত্রীও এভাবেই জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, 'কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা' বলে। মুক্তিযোদ্ধারা ফুঁসে ওঠেছিলেন, একসময় মন্ত্রী নিজেই বললেন "আমি কতবড় এক ব্যাক্কল যে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের লিস্টে ডুকাইছি" এর পরেও জনগণ সেই "দেখি না কী করে" ভেবেই সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
আর কতদিন জনগণ ভানু'র মতোই ‘দেখি না কী করে’ এই কৌতুক নিয়ে পড়ে থাকবে? প্রতিটি ব্যাপারেই জনগণ সরকারের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবে ‘দেখি না কী করে’।
এই প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক বিশ্বের খবরাখবর আমি তুলনা করে প্রায়ই লিখে থাকি, এই কারণেই যে রাষ্ট্রের কর্তব্য আর জনগণের দায়িত্ববোধ কতখানি সরাসরি সংযুক্ত, আর আমরাও সভ্যতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় রাষ্ট্র আর জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলি বুঝে নিতে চাই।
সম্প্রতি শরণার্থীদের সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে ডাচ ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মার্ক হার্বারস তার চাকরি হারিয়েছেন। গত জুলাই মাসে এই প্রতিবেদনের সমালোচনার আলোকে হার্বারস পদত্যাগ করেছেন, রিপোর্টটি অসন্তুষ্টির কারণ হয়েছিল যেহেতু পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে তুলনামূলক ভাবে নিষ্পাপ অপরাধ যেমন দোকানে চুরি করার বিষয়টি বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, যৌন নিপীড়ন, হত্যা বা হত্যাযজ্ঞের মতো আশ্রয়প্রার্থীদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর অপরাধকে অপরাধ হিসেবে লিস্টে স্থান পায়নি। তুমুল সমালোচনা হলে মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
ভুল তালিকা করায় মন্ত্রী নিজে 'সম্পূর্ণ দায়িত্ব' নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। আর বাংলাদেশের 'ব্যক্কল' মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাজাকার বানিয়েও এখনো ক্ষমতার চেয়ারে বসে আছে কেনো?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য