প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রেজা ঘটক | ৩০ জুলাই, ২০১৫
পত্রিকায় দেখলাম, সাকা চৌধুরী আপিল বিভাগের রায় রেডিওতে শুনেছেন। কারাবিধি অনুযায়ী নাকি কারাবন্দি আসামিরা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক ব্যান্ডের রেডিও সঙ্গে রাখতে পারেন! কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীও যদি কারাবিধির এতো হাজার হাজার সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, তাহলে দেশের আইন সত্যি সত্যি কোন পর্যায়ে আছে?
তাহলে এত ঢাক ঢোল বাজিয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে এত নাটক করার কি আছে? যুদ্ধাপরাধীও তো কারাগারে বেশ আরাম আয়াসে আছে। বেশ দাপট নিয়েই আছে।
আইন সবার জন্য সমান, এই কথাটি আমি বিশ্বাস করি না। আমার তো সব সময়ই মনে হয়, দেশে আসলে ধনি ও ক্ষমতাবানদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এক ধরনের আইন। আর গরিব ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য আরেক ধরনের আইন। এক্ষেত্রে গরিব ও সুবিধা বঞ্চিত যে গ্রুপ, তারাই আইনের সকল দুর্ভোগ ভোগ করে।
পত্রিকায় যা পড়লাম তার উপরও আমার পুরোপুরি আস্থা নাই। আমার তো মনে হয়, এসব অপরাধীরা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিফোন ও ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা শুরু থেকেই ভোগ করেন। রাষ্ট্রের যে কারোর সঙ্গেই এরা প্রয়োজনে কথা বলেন। কারণ টাকায় যে দেশে সব কিছু মেলে, সেখানে এসব অপরাধীরা সেই সুবিধা নেবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
নইলে মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে রায়ের কপি এরা নেয় কি জীন বা বায়বীয় পদ্ধতিতে? মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার পর, বাংলাদেশের পুলিশ ও উকিল-মোক্তারদের নতুন একটা ইনকাম সোর্স তৈরি হয়েছে বলেই আমি মনে করি। আর এটা এরা খুব ভালো ভাবেই অপব্যবহার করেও চলেছে। আমরা বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারির কথাই যদি বলি, তাহলে নিশ্চয়ই এ বিষয়ে আর কারো দ্বিমত থাকার কথা না।
মানবতাবিরোধী অপরাধী, যুদ্ধাপরাধীদের মামলা শুরু হবার পর থেকে বরং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, উকিল, ব্যারিস্টার, মোক্তার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এই যজ্ঞে যারাই জড়িত, তাদের প্রায় সবারই একটা আউট সোর্সিং ইনকামের রাস্তা তৈরি হয়েছে। আর যারা এই আউট সোর্সিং পদ্ধতি ইতিমধ্যে সফল ভাবে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করেছেন, এই প্রক্রিয়াটি যাতে যুগ যুগ টিকে থাকে সারাক্ষণ তারা সেই কামনা করেন।
আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামীদের সুপ্রিম কোর্ট-হাই কোর্টের সিড়িতে হুইল চেয়ারে বা নরমাল হাঁটিয়ে নেবার ক্ষেত্রে যেভাবে, যে ভঙ্গিতে, যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ওঠানামা করায়, এটা দেখলেই আমার মনে হয়, এরা যা চাইবে টাকার বিনিময়ে তাই এদের কাছে হাজির করার জন্যই একশত ভাগ প্রস্তুত এসব পুলিশ সদস্যরা। এসব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যেই এক ধরনের অপরাধ প্রবণতার সুস্পষ্ট ছাপ আমি দেখতে পাই। টাকা হইলে কোনো ব্যাপার না, এমন একটি ভঙ্গি এদের সবার মধ্যে।
বাস্তবে আমাদের পুলিশের চরিত্র মনে হয় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সবাই জানেন। পুলিশ মানুষের উপকারে লাগে এটা বাংলাদেশে বিশ্বাস করানো কঠিন। পুলিশের সামনে ছিনতাই হলে পুলিশ চুপ থাকে। পুলিশের সামনে অবাধে নারী নিপিড়ন করে একদল শকুন, তখনো পুলিশ চুপ থাকে। আবার ভিকটিম স্বয়ং থানায় গিয়ে পুলিশের সরাসরি সহযোগিতা পেয়েছে, এমন উদাহরণ বের করতে হলে ‘বাটি চালান’ দিতে হবে। বাংলাদেশের পুলিশের চরিত্র যখন এই, তখন সাকা-নিজামী-মুজাহিদদের সেলে কি ধরনের সুযোগ সুবিধা পৌঁছাতে পারে, সেটা অনুমান করে নিতে নিশ্চয়ই কারো কষ্ট হবার কথা নয়।
কথা সেটাও নয়, শুধু কী পুলিশ আর উকিল-মোক্তারাই যুদ্ধাপরাধী মামলায় বাড়তি একটা আয়ের সন্ধান পেয়েছে? মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী মামলায় রাষ্ট্রের অনেক বড় বড় কুতুব অনেক বড় বড় দান মারছেন এখন। এসব যারা ধরার কথা, তারাও টাকার পেছনে ছুটছে। এসব লেনদেনের খবর জানা যাবে আরো অনেক বছর পর। যখন এসব কুতুবরা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য