আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ব্যতিক্রমী এক বিপ্লবের কথা বলছি

বদরুল আলম  

চিন্তা করছি একটি বিপ্লবের। যদি বিপ্লবটা হতো আমাদের দেশে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে; ‘‘পাঠ বিপ্লব’’। যে বিপ্লবে দেখা যেত, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাস, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক এবং চণ্ডীদাসকে সরাসরি। শোনা যেত -অ, আ, চিৎকার সমস্ত আযর্শ্লোকের চেয়েও পবিত্র অজর স্লোগান।

বিপ্লবটি ছড়িয়ে পড়ুক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ফেব্রুয়ারি মাসে (বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারি) সকল ছাত্র-ছাত্রী অথবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হোক এই প্রতিজ্ঞা। পাঠ করার প্রতিজ্ঞা। যাকে আমরা বলি 'পাঠ বিপ্লব'। বিপ্লবে বিপ্লবে আলোকিত হোক সমস্ত জাতি। যে জাতির জন্য অপেক্ষমাণ এ বিশ্ব।

গেল মাসে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এ সময় যারা রাজনৈতিক নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন, স্বপ্ন দেখেন তাদের প্রত্যেকেরই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়া উচিত।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা পাঠ’র প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এই ফেব্রুয়ারিতে বলি, বইয়ের কাছে যেতে বারবার। বই হচ্ছে জ্ঞানের বাহক। বই ছাড়া জ্ঞান অর্জন সম্ভব না। তাই আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। যখন লেখা ছাপার অক্ষরে, বই আকারে প্রকাশিত হয়নি তখনও জ্ঞান—পিপাসু মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছুটে বেরিয়েছে, অর্থ ব্যয় করে জ্ঞানী মানুষদের একসঙ্গে জড়ো করে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছে।
এখন আর সে প্রয়োজন নেই। মানুষ তার লব্ধ জ্ঞান যুগ যুগ ধরে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে বিপুল জ্ঞানের আধার গ্রন্থাগার। তবে মানুষ যেমন খাবারের জন্য বেঁচে থাকে না, বেচে থাকার জন্য-ই খায়, তেমনি মানুষ বই পড়ার জন্য বেঁচে থাকে না, বেঁচে থাকার জন্য বই পড়ে। কাজেই বেশি করে বই পড়তে হবে।

প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় ওমর খৈয়ামের কথা জেনেছি। তিনি বলেছিলেন—

Here with a loaf of bread
beneath the bough.
A flash of wine, a book of
verse and thou,
Beside me singing in the wilderness
And wilderness is paradise enow.
‘‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা-যদি তেমন বই হয়’’।

সুতরাং বইয়ের কাছে যেতে হবে আমাদের। চলুন উপহার হিসেবে বইকে বেছে নেই। বই উপহার দেই।

একবার অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মানুষের চেতনাজগতে নাড়া বা হৃদয়সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটা করছেন কিভাবে? শুধু বই পড়িয়ে? তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ। বইয়ের দিকে আমাদের এত যেতে হল কেন? আমাদের সমাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। আমাদের ছোট বেলা যদি জিজ্ঞেস করা হত, তুমি কার মত হবে? তখন নাম আসত বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি সুভাষ বোস, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের। আজকে আমরা চোখের সামনে কাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরব? কার নাম বলব? শিক্ষকদের দেখে ছাত্রছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে, বড় স্বপ্নে উদ্দীপ্ত হবে। আজকে শিক্ষকদের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা তো সেটা পাচ্ছে না। অথচ মনে রাখতে হবে জৈবিকভাবে যেমন, আত্মিকভাবেও তেমনি, মানুষ মানুষের কাছ থেকেই জন্মায়। এখন আমাদের নতুন প্রজন্ম আগের যে মানুষের কাছ থেকে জন্মাবে সেই মানুষটা তো নেই। তাই আমাদের চলে যেতে হল বইয়ের কাছে।

বেশ আগে খবরের কাগজে দেখেছিলাম ভেনিজুয়েলার বামপন্থী রাষ্ট্রনায়ক হুগো শাভেজ তার দেশে "পাঠ বিপ্লব" শুরু করেছিলেন। এর অংশ হিসেবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একটি বাম বিপ্লবাত্মক বইও উপহার দিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বারাক ওবামাকে তিনি যে বইটি উপহার দিয়েছেন তা এডুয়ার্ড গ্যালিয়ানোর একটি বিখ্যাত বাম বিপ্লব ক্লাসিক। হুগো শাভেজ বেশ আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত এক ভাষণে তার দেশের জনগণকে পাঠে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। তিনি তার বিপ্লবে, ভাষণে নির্দিষ্ট করে একটি স্লোগান জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তা হল 'পাঠ' এবং 'পাঠ'।

এতদিন বিশ্বনেতারা তাদের জনগণকে কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন, কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো নেতা জনগণকে পড়াশুনার নির্দেশ দিয়েছেন, তাও আবার সরাসরি প্রচারিত ভাষণে। এমনটা বিশ্ব আর কখনো অবলোকন করেনি।

আমাদের দেশে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঠ বিপ্লব খুবই প্রয়োজন। সেই স্বপ্ন দেখি।

বদরুল আলম, প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ, সিলেট; এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ