প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আমিনা আইরিন | ২৩ মার্চ, ২০২০
নেড়া বেলতলায় একবার যায় আর আমরা বাঙালি নেড়া দেখতে বেলতলায় বারবার যাই। নিউ ইয়র্ক লকডাউন ঘোষণা করেছে আর আমরা এতেই আমাদের সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছি৷ আমি জানি এই কথাবলার পর আমিও আওয়ামী লীগার হয়ে যাবো কারো কারো কাছে। কিন্তু কিছু কথা জানা আসলেই দরকার।
এটা সত্যি নিউ ইয়র্ক লকডাউন কিন্তু আমরা লকডাউনের যে অর্থ দাঁড় করিয়েছি সেটা কতটা সত্যি। নিউ ইয়র্কের মেয়র সমস্ত non-essential business বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তার মানে এই না যে সমস্ত দোকান গাড়ি সব বন্ধ। সরকার সবচেয়ে প্রথমে বড় বড় ব্যবসাগুলো বন্ধ করেছে। ম্যানহাটনের সব রেস্টুরেন্টে, শপিং মল, অফিস, ক্লাব বার বন্ধ। ছোট ছোট গ্রোসারি কিছু ফাস্ট ফুডের দোকান এখনো খোলা। সেই খোলা থাকারও একটা মানে আছে। কেউ বসে খেতে পারবে না। খাবার অর্ডার দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লাইন করে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাড়িয়ে অর্ডার করতে হবে, এমনকি একটা দোকানে একি সময়ে কতজন কাস্টমার, কতজন ক্রু কাজ করতে পারবে তাও নিদিষ্ট করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হল সেনিটাইজেশন। প্রত্যেক খোলা থাকা দোকানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা। এত কিছুর পর ও যারা নিজেদেরকে সুরক্ষিত মনে করছেন না। বাইরে গিয়ে কাজ করা তারা চাইলেই ছুটি নিয়ে ঘরে থাকতে পারেন। এতে আপনার চাকরি যাবে না। এই পদক্ষেপগুলো ঠিক মত সবাই মানছে কি না তার উপর চলছে কড়া নজরদারি।
এবার আসি নিউ ইয়র্কবাসির সচেতনতা আর অসচেতনতায়। এই মানদণ্ডে হয়ত আমাদের দেশের জন্য নিউ ইয়র্কবাসি সচেতনতায় ১০০-তে ২০০ পাবে, কিন্তু বাস্তবে তা হল ৮০/১০০। কারণ বোধহীন লোকগুলো দেশে দেখে জন্মায় না। সবখানেই জন্মায়। তবে ওই দেশের মানুষের সবচে বড় গুণ হল তারা বিশ্বাস করে নিয়ম বানানো হয়েছে তাদের ভালোর জন্য। হয়ত তারা নিয়মের দ্বিমত করবে কিন্তু তবু অধিকাংশই সেই নিয়ম মানার চেষ্টা করবে। তারা তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। তারাও আতঙ্কিত। অধিকাংশের কাছেই এটা দুঃস্বপ্নের মত। যে যতটা সম্ভব নিজেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে। কারো যদি খুব সাধারণ সর্দি-জ্বর হয় তবু সে নিজেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি করেছে। এই মানুষগুলো সরকারের কাঁধে বন্দুক দিয়ে বসে নেই কিছুটা নিজের কাঁধেও নিয়েছে।
এখন আসি নিউ ইয়র্কীয় বোধহীন লোকগুলোর কথায়। আমাদের দেশের মানুষের কাছে যারা সম্পূর্ণ অপরিচিত কিন্তু তাদের সাথে আমাদের দেশের মানুষের অসম্ভব মিল। এইখানেও কিছু বোধহীন লোক এখনো বিচে গিয়ে পার্টি করছে, ভাইরাস নিয়ে প্রাঙ্ক ভিডিও বানাচ্ছে। ভাইরাসের কথা বললে এমনভাবে তাকাবে মনে হবে এরা এক একজন হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকা, কোন কিছুই যাদের মারতে পারে না। আমাদের দেশের সমস্ত মানুষ যেভাবে আতঙ্কিত ওইখানেও ঠিক তাই। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এমনভাবে কিনছে যে আগামী কয়েক বছর আর কিছু কেনার দরকার পড়বে না। আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই। এখনকার পরিস্থিতি মারবেল স্টুডিওর যেকোনো সুপারহিট ছবিকে হার মানাবে।
আমরা মানি আর না মানি এই কথাটা খুব সত্যি যে, যেমন দেশ তেমন বেশ। নিউ ইয়র্ক এমন করছে তেমন করছে আমরা কেন করছি না বলে যে বানর নাচটা দিচ্ছি একবার কি ভেবে দেখেছি আমাদের ক্ষমতা কতটুকু? আমাদের সরকারের ক্ষমতা কতটুকু? আর আমরা নিজেই বা কতটুকু করছি? যে দেশে একদিন বৃষ্টি দিলে দিনমজুরকে না খেয়ে থাকতে হয় সে দেশে কীভাবে আশা করা সম্পূর্ণ লকডাউন করে রাখার?
যেখানে আমাদের বাঙালির আকর্ষণের নিউ ইয়র্কই সম্পূর্ণ লকডাউন নয়। একবার ভাবুন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করলো; সব বন্ধ, দিনমজুর না খেয়ে মরুক আমার কী! বুকে হাত দিয়ে বলুন তো তখন আপনি কী করবেন। হয় বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়ি যাবেন, নয়ত প্রতি সন্ধ্যায় সরকার কী করতে পারত বলে লিভিং রুমে চৌদ্দগোষ্ঠীর সাথে আলোচনায় বসবেন। যে রিসোর্ট নিরাপত্তার কারণে বন্ধ, সেই রিসোর্টে অবকাশ কাটাতে যাবেন! তাই সরকারের দোষ খোঁজার আগের নিজেকেও একবার আয়নায় দাড় করান। কথাটা, যেমন রাজা তেমন তার প্রজা নয়; কথাটা হল- যেমন প্রজা তেমন তার রাজা।
আমরা কেন নিজেরা সচেতন হতে পারছি না। নির্বাচন হতে আমরা কেন দিলাম। নির্বাচন প্রার্থীরা কেন অংশগ্রহণ করল? ঐ প্রার্থীর পরিবার কেন ঐ প্রার্থীকে বেঁধে রাখল না। কেন পারলাম না মাস্ক আর গ্লাভস পরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বোধহীন লোকগুলাকে একটু সেনিটাইজ করতে। গ্লাভসের কারণে তো মুখ চেনা যেত না।
ওয়াজে আর দোয়া মাহফিল যেই হুজুর আর যেই লোক আয়োজন করেছে আর যারা গেছে আমরা কেন তাদের বাধা দিতে পারলাম না। তাদের মূর্খতা নিয়ে নিউজ না করে কেন তাদের প্রতিবাদ করে সেই নিউজ করা গেলো না? বিদেশ ফেরত যে লোকগুলো সানন্দে ঘুরছে তাদেরকে জোর করে ঘরে ফেরানোর একটা লোকও কেন নেই এই দেশে? কেন একটা পরিবার একটা দিনমজুর পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছে না এই কয়েকটা দিনের জন্য? যাতে নিজে পরিবার এবং সেই পরিবারের মানুষগুলো অন্তত বেঁচে থাকতে পারে। এটা কি খুব বেশি কিছু?
মনে রাখা উচিত থুথু উপরের দিকে ছুড়লে দিনশেষে সেটা নিজের মুখেই এসে পড়ে। আমরা নিজে যে ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না তা হলো- নিজে সুরক্ষিত থাকেলেই যে আপনি বেঁচে থাকবেন তা কিন্তু নয়। যদি বাঁচতে যান তবে আশেপাশের সবাইকেও নিজের সাথে সাথে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এই সহজ কথাটা সবাই বুঝতে পারছে না, আর যারা পারছে তারা তাদের সাধ্যের উপরে গিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তেমন কিছু প্রতিষ্ঠান আর মানুষের মানবিকতায় আমার বাংলাদেশটা এখনো বেঁচে আছে।
আমার সোনার বাংলার মানুষেরা ভালো থেকো, অন্তত বেঁচে থেকো...
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য