আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দূরত্ব বজায়

খুরশীদ শাম্মী  

বিশ্বের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করতে ধ্বংসাত্মক করোনাভাইরাস, বিশ্বব্যাপী মহামারী, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যেটাই বলা হোক না কেন, ভুল হবে না কোনো। কেননা লাশের মিছিলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে শহর, দেশ, পুরো বিশ্ব।

এখনও সঠিক চিকিৎসা নেই এর কোনো। বিজ্ঞানীরা চিকিৎসার জন্য ঔষধ ও প্রতিরোধক টিকা আবিস্কারের জন্য রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। মানবতার পতাকা তুলে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসকেরা, বিভিন্ন পেশার প্রথম সারীর কর্মীরা এবং বিশ্বের বড় বড় শহর, প্রদেশ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ। ব্যক্তি ও কমিউনিটি পর্যায়েও সাধারণ জনগণ স্বেচ্ছায় সেবা দিচ্ছেন অসহায় ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রায় শুরু থেকেই ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখ – চোখ- কানে হাত না দেয়া, হাঁচি–কাশি দেয়ার সময় নিজের বাহুতে মুখ ঢেকে নেয়া এবং সোশ্যাল ডিসটেন্সের কথা বলে আসছে। প্রথম থেকে কেন ফিজিক্যাল ডিসটেন্স অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব না বলে সোশ্যাল ডিসটেন্স অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছেন, সেটা নিয়ে অনেকের ভিন্ন মতামত দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। ভিন্ন মতামত থাকা মোটেও অন্যায়ের কিছু নয়, বরং ভিন্ন মতামত ব্যক্ত হলে যুক্তির খাতিরে ছোট ছোট অনেক বিষয় ভাবনায় যোগ হওয়ার সুযোগ পায়।

আমি মনে করি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শারীরিক শব্দটি ব্যবহার না করে সামাজিক শব্দটি ব্যবহার করে ভুল করেনি। কেননা, করমর্দন, আলিঙ্গন করা যেমন শারীরিক স্পর্শ তেমন সামাজিক আচরণও। শুধু কী তাই? কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জন্মদিন-বিয়ের অনুষ্ঠানসহ জনসমাবেশগুলোও কিন্তু অধিকাংশই সামাজিক রীতির মধ্যে পড়ে। একত্রে দাঁড়িয়ে বন্ধুর সাথে ধূমপান, আড্ডা, বসে চা, কফি, খাবার খাওয়াও সামাজিক কাজ। বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে ঘন জনবসতি চোখে লাগার মতো। আবার ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হলে পরস্পর শারীরিকভাবে দুই মিটার অর্থাৎ ছয় ফুটের একটু বেশি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এর পেছনে তিনটি কারণ মিশে আছে ১) পর্যাপ্ত যায়গার অভাব ২) মানুষের অভ্যাস ৩) আচমকা ভুলে যাওয়া।

এছাড়াও, সামাজিক শব্দ ব্যবহারের আরেকটা কারণ পরিবার প্রথা। বিভিন্ন প্রমাণ সাপেক্ষে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করা হয় যে পরিবার মানুষের সব থেকে আপন ও নিরাপদ স্থান। প্রায় প্রতিটি মানুষ নিজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাগুলো পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগাভাগি করেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। যার পরিবার নেই তার হয়তো ভালোবাসার কেউ একজন থাকে, যাকে আপনজন মনে করে। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন যখন শতকের ঘর ছাড়িয়ে সহস্র সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য খুব আপনজনের পাশাপাশি বসেই মানুষ নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। আর সেই যুক্তিতেই, প্রায় প্রতিটি দেশে নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিংবা নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রায় সবগুলো দেশেই বিদেশ ফেরতদের বলা হয়েছে ১৪ দিন সবার থেকে আলাদা থেকে নিজ নিজ পরিচর্যা করতে ও সতর্কতার সাথে শারীরিক অবস্থা অবলোকন করতে। এখন পর্যন্ত ১৪ দিনেও রোগের কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে ধরে নেয়া হয় যে ব্যক্তিটি করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নয়। আবার কেবলমাত্র তাদেরই তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে এবং পরীক্ষা দ্বারা তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া কিন্তু একই বাড়িতে থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে ও বাইরে যাতায়াত না করলে আপনজনের থেকে তেমন দূরত্ব বজায় রাখার দরকার হয় না। কাছাকাছি বসা ও থাকা যায়।

একবার যদি এভাবে ভেবে দেখি, শিশুরা সব ঘরের মধ্যে এক প্রকার বন্দী জীবন যাপন করছে। এমতাবস্থায় আমরা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হয়েও যদি ওদের সম্পূর্ণভাবে ছয় ফুট দূরত্বে রাখি সর্বক্ষণ, তখন শিশুদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। শিশুদের মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে আপনজনের আদর, আলিঙ্গন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে এটা বলছি না, সর্বক্ষণ শিশুদের জড়িয়ে বসে থাকার কথা। যতোটুকুন দরকার হবে ঠিক ততটুকুন দরকার আছে। সুতরাং এই সকল বিবেচনায় সোশ্যাল ডিসটেন্সিং কথার যুক্তি ছিল এবং আছে বেশ।

দুই মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার যুক্তিকে আমি এভাবে দেখছি, যেহেতু বিশ্ব জুড়ে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক উপকরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সুতরাং সবার জন্য সর্বক্ষণ মাস্ক ব্যবহার সম্ভব নয়। আবার মানুষের হাঁচি-কাশি ও কথার সময় যে তরল পদার্থ নির্গত হয়, অনুমান করা হচ্ছে তা দুই মিটার অর্থাৎ ছয় ফুটের একটু বেশি দূর পর্যন্ত যেতে পারে মাত্র। যেহেতু আমরা সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ ঠিক মতো মানছি না, সুতরাং দুই মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে।

যেহেতু প্রতিটি মানুষ ভিন্ন, ভিন্নতা মানুষের ভাবনায়। গ্রহণ ও ধারণ ক্ষমতাও ভিন্ন। এসব কারণে কোনো এক শিক্ষা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিস্তার লাভ করে। সুতরাং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাও মানুষ বিভিন্নভাবে গ্রহণ করেছে এবং বিষয়টা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা হচ্ছে। যতভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দূরত্ব বজায় রাখা এখন পর্যন্ত অন্যতম উপায়।

যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনও পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি, সুতরাং প্রতিরোধই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্য। আর সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলাই আমাদের প্রধান কর্তব্য। সেগুলো অনেকটা এমন:

১) ঘন ঘন সাবান পানিতে হাত ধোয়া।
২) হাঁচি কাশির সময় বাহুতে নিজের মুখ ঢেকে রাখা।
৩) মুখ, চোখ, কান স্পর্শ না করা।
8) বাড়ির যে সকল স্থান ও বস্তু খুব ব্যবহার করা হয়, সেগুলো জীবাণুমুক্ত করতে বারবার পরিষ্কার করা।
৫) প্রতিটি জেলা, প্রদেশ ও রাষ্ট্র প্রধানের বিশেষ করে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট যুক্তিযুক্ত নির্দেশ ও পরামর্শ অনুসরণ করা।
৬) সকল প্রকার সামাজিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৭) নিজে ঘরে থাকা ও অন্যকে ঘরে থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করা।
৮) যেখানে সেখানে থুতু ও কফ না ফেলা।
৯) নিজের মন ও শরীরের যত্ন নেয়া।
১০) নিজের শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া।

খুরশীদ শাম্মী, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ