প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ১৯ এপ্রিল, ২০২০
সরকার সমর্থক সেক্যুলার লোকজন খুব করে বলছে, এতো লোককে আটকানো সম্ভব ছিল না, ওদেরকে আটকাতে গেলে খুনোখুনি হয়ে যেত, সরকারের কোন দোষ নাই ইত্যাদি। এটা ভুল কথা, একটা বাজে কথা, ফালতু কথা। দশ হাজার বিশ হাজার বা পঞ্চাশ হাজার লোক একসাথে আসমান থেকে পড়ে একটা ময়দানে জড়ো হয় না। এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে তারপর বিশাল জনতা তৈরি করেছে। সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট দলে আসতে দিয়েছে। বিডিনিউজের খবরে দেখলাম সরাইলের পুলিশ কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন সেকথা। ঢাকা থেকেও মানুষজন গেছে সেখানে। বাইরে থেকে যারা গেছে, ওদের সবাইকে আটকানো যেতো। সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই এই জমায়েতটি হতে সহায়তা করেছে।
কেউ বলছে না যে জানাজার জন্যে জমায়েত হওয়া জনতার উপর গিয়ে পুলিশ কেন হামলা করলো না। সরকার যেখানে বলছে এইসব সমাবেশ ইত্যাদি করা যাবে না সেখানে পুলিশের দায়িত্ব ছিল সেখানে যেন এই সমাবেশটা না হয়। সেটা কি সম্ভব ছিল? হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব ছিল। কীভাবে? সেটা পুলিশ অতি উত্তমরূপে জানে। ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট নামে পুলিশের একটা বিশেষ বিদ্যা আছে। যতটুকু জানি আমাদের পুলিশেরও এই বিদ্যা শিক্ষার জন্যে একটা প্রতিষ্ঠানও আছে মিরপুরের দিকে। এইটা হচ্ছে জনতা সমাবেশ ইত্যাদি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেই সম্পর্কিত সামাজিক বিজ্ঞান। পুলিশ এই বিদ্যা জানে। এই বিদ্যা না জানলেও আপনার আমার মত সাধারণ মানুষও বলতে পারবেন যে নানান কায়দায় এই জমায়েতটা না হতে পারে সেই ব্যবস্থা করা যেতো। যারা জানাজার আয়োজন করেছে ওদেরকে বলা যেত জমায়েতের কর্মসূচি বাতিল করতে। যারা বাইরে থেকে সেখানে গেছে ওদেরকে পথেই থামানো যেত।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ইচ্ছে করেই থামায়নি। পুলিশ জানতো যে সমাবেশ হবে, পূর্বঘোষিত সমাবেশ ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দলে দলে লোকজন গেছে, অন্যান্য জায়গা থেকেও গেছে। পুলিশ কোথাও বাধা দেয়নি। দোষ বলেন বা দায় দায়িত্ব বলেন বা অবহেলাই বলেন- এর পুরোটাই সরকারের। সরকারের পুলিশ সরকারের প্রশাসন বা সরকারের যে কোন অঙ্গই হোক না কেন- এদের সকলের কাজের জন্যে সরকারই দায়ী হয়।
২
আমরা যখন ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি, যখন বলি যে সরকার এবং সরকারি দল সাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণ করেছে এবং এই জন্যে যখন সরকার এবং সরকারি দিলে নিন্দা করি তখন আপনাদের মধ্যে অনেককে দেখি বিরক্তি প্রকাশ করেন। এরা ভুলে যান বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুল ভিত্তি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। এছাড়া গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ এই দুইটারও অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে গিয়ে সরকার যখন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম হিসাবে পালন করবে এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকাণ্ডে সেই ধর্মের আচার আচরণের প্রতিফলন ঘটাবে তখন সেই সরকার আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার থাকে না।
আদর্শগতভাবে যখন আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে গিয়ে একটি ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাবেন এবং রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে সেই ধর্মের আচরণের প্রতিফলন ঘটাবেন তখন কি হয়? তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সেই ধর্মটিকে এবং সেই ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মানুষ ধর্মীয় নেতা ধর্মীয় অনুষ্ঠান এইসবকে একটু বিশেষ গুরুত্ব দিতে থাকবে। দেশের সরকারপ্রধান যদি মোল্লাদেরকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দিতে থাকেন, তাইলে দেশের পুলিশ দেশের প্রশাসন ও দেশের নানান গোষ্ঠী ও অংশীজনের কাছে একটা বার্তা যায়। বার্তাটা কী? বার্তাটা হচ্ছে এই যে, এদেরকে বিরক্ত করা যাবে না। এরা সরকারের বন্ধু, এরা সরকারের মিত্র, এরা সরকারের মুরুব্বি ইত্যাদি।
ভারতের দিকে দেখেন। বিজেপি সরকারে আসার পর কি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে যে আরএসএস বা অন্যান্য সাম্প্রদায়িক গ্রুপ ইত্যাদিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে? না, খুব সম্ভবত এইরকম কোন নির্দেশ সরকার দেয়নি। বরং উল্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতা বিবৃতি পাবেন যেখানে তিনি বলছেন যে দেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোন বৈষম্য করা যাবে না। এরপরও দেখবেন পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক ভূমিকা গ্রহণ করে। কেন? কারণ ওই যে সরকারের সাম্প্রদায়িক ক্যারেক্টার সেটার প্রতিফলন ঘটে পুলিশের মধ্যে। আমাদের এখানেও এটা ঘটেছে। আমাদের পুলিশ জানে, মোল্লা-মৌলানাদের কাজে বাধা দেওয়া যাবে না।
বিজ্ঞাপন
৩
সরাইলে যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে সরকারের এইরকম নীতির প্রতিফলন। মোল্লা-মৌলানাদের প্রতি সরকারের একধরনের আনুগত্য থেকেই পুলিশ এই আচরণটা করে- ওদেরকে বাধা দেওয়া যাবে না।
নাইলে পুলিশ যে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে নিষ্ঠুরতা করছে না সেটা তো নয়। একটা উদাহরণ দিই। কয়েক দিন আগে মাত্র চট্টগ্রামে কর্মরত কয়েক হাজার আদিবাসী নারী পরুষ বাড়ি ফেরার জন্যে খাগড়াছড়ি দিকে রওনা হয়। পুলিশ ওদেরকে মানিকছড়ির ওখানে আটকে দেয়। এরা বাড়ি ফিরছিল কারণ চট্টগ্রামে ওদের কাজ নাই, বেতন নাই, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পয়সা নাই, দুবেলা খাবার ব্যবস্থাও নাই। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে ওরা কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ি ফিরছিল। মানিকছড়িতে এইসব অসহায় শ্রমজীবী নারী পুরুষকে পুলিশ অমানবিকভাবে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে- খাগড়াছড়িতে ওদেরকে প্রবেশ করতে দেবে না। কেন? কেননা খাগড়াছড়িতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
আপনি পাশাপাশি মিলিয়ে দেখেন। সেইসব অসহায় আদিবাসী নারী পুরুষকে পেটাতে পুলিশের একটুও দ্বিধা হয়নি। সরকারি দলের লোকজনও মনে করেন না যে ওদেরকে ওইভাবে পেটানো পুলিশের উচিৎ হয়নি। সেখানে নারীরা ছিল বিপুল সংখ্যায়। আমি ছবি দেখেছি ছোট শিশু কোলে মায়েরা রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসে আছে। ওদেরকে পুলিশ পেটাতে পারলো। কেউ আপনারা নিন্দা করলেন না। নিতান্ত প্রাণের দায়ে গিয়েছিল লোকগুলি। আর এইখানে মোল্লাগুলি জড়ো হয়েছে ওদের ক্ষেত্রে আপনারা এসে সুরেলা কণ্ঠে গেলা সরু করে বলছেন যে সরকারের কিছু করার ছিল না, পুলিশের কিছু করার ছিল না ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
৪
শোনেন, সরকারের সমর্থক হয়েছেন আপনারা ভাল কথা। আপনার পছন্দ হলে আপনি জামায়াতেরও সমর্থক হতে পারেন, আপনার ইচ্ছা। কিন্তু এখন আমরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি অন্তত এই সময়ে তো একটু যুক্তি বুদ্ধি ভদ্রতা এইসব রেখে কথা বলবেন। সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন বলছে যে সেখানে পুলিশের ব্যর্থতা হয়েছে, পুলিশের দোষ হয়েছে, সরকার সরাইলের ওসির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার জন্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, আর আপনারা গলা উঁচিয়ে বলছেন যে না সব ঠিকঠাক আছে, কারো কোন দোষ নাই ইত্যাদি। এইটা তো দালালি ধরনের কথা হয়ে গেল!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য