আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ব্যক্তির স্বপ্ন, অন্যের ইচ্ছা এবং আমাদের শিক্ষা

রহিম আব্দুর রহিম  

বিশ্বকাপ ফুটবল তারকা নেইমারের ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে খেলার মাঠে চুল ছাঁটার একটি স্টাইল স্বপ্নময় শিশু-কিশোরদের প্রচণ্ডভাবে আকৃষ্ট করে। যে স্টাইলটি এখন স্কুলবয়দের অন্যতম সৌখিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্টাইল, শিক্ষক-অভিভাবক ও সমাজের তথাকথিত সুধীমহল মেনে নিতে পারছেন না। ফলে যা হবার তাই। স্টাইলিস্ট মার্কা ছেলেটিকে শিক্ষক হয় ন্যাড়া করে দিয়েছেন, না হয় একচোট কানমলা দিয়ে ঝাল মিটিয়েছেন। সর্বোপরি ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে প্রতিষ্ঠানে ডেকে এনে মানসিকভাবে ধোলাই করে ছেড়ে দিয়েছেন। দেশের কোন কোন জায়গায় থানা পুলিশ স্যালুন মালিককে স্টাইলিশ মার্কা চুল ছাঁটার কারণে ৪০,০০০ টাকার জরিমানা করার হুমকি দিয়েছেন। এক উপজেলায় স্টাইলিশ চুল ছাঁটার বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা শেষে কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলো ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শহর গ্রামে রীতিমত ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের তুলশিপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র নেইমার স্টাইলে চুল ছাঁটায়; ওই শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষক মিলে শিক্ষার্থীকে ন্যাড়া করে দেয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দুঃখজনক কাজের প্রতিবাদ করে গ্রাম অঞ্চলের পথ-ঘাট অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। প্রশ্ন, যে শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে নেইমার হওয়ার স্বপ্ন সাধ পূরণে পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা, যে শরীরচর্চা শিক্ষক, শিক্ষার্থীর মাঠে খেলাধুলা নিশ্চিতকরণে নেইমার স্টাইলিস্টদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে যাওয়ার কথা, তিনি তা না করে, নিজেই ক্যাঁচি হাতে নিয়ে নরসুন্দরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। স্টাইলিস্ট মার্কা ছেলেটি কোন অন্যায় করেনি, সে বিশ্বতারকা হওয়ার স্বপ্ন সাধ লালন করে।
আমরা শিক্ষার্থীর মনে ‘আইকন’ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ বলেই শিক্ষার্থী আনন্দঘন খেলার মাঠ থেকে সে ‘আইকন’ সংগ্রহ করেছে। এটাকে কোনক্রমেই অপরাধের পাল্লায় ফেলা যাবে না। তবে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তার চুল ছাঁটা আদর্শিক বিষয়। কারণ, এটা প্রতিষ্ঠানের আইন। এই নিয়ে কোন পুলিশ কিংবা ইউএনও’র বাড়াবাড়ির প্রয়োজন মোটেই নেই। আমরা জানি, জাপানের শিশুরা নিয়মিত স্কুল আঙ্গিনা পরিস্কার করে, ক্লাসরুম ঝকঝকে ও তকতকে রাখার কাজটি শিক্ষার্থীরা’ই করে থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই এর উল্টো কাজটি করে যাচ্ছে। এর কারণ কী? উত্তর সোজা, পাঠ্যসূচির বাইরেও যে পরিবেশ-প্রতিবেশ শিক্ষার প্রয়োজন আছে, তা আমাদের পরিবার, প্রতিষ্ঠান কিংবা সমাজ দিতে পারেনি।

আমরা এও জানি, উন্নত বিশ্বের মানুষরা খেলার মাঠে তার পছন্দের দল হেরে গেলে, তারা খেলা শেষে খেলার মাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে মাঠ ত্যাগ করে। অথচ আমাদের পছন্দের দল হেরে গেলে, আমরা স্টেডিয়ামের সহায়-সম্পত্তি বিনষ্ট, প্রতিপক্ষের সাথে মারদাঙ্গা করি। যে যুগে সুইজারল্যান্ডের জেলখানাগুলো যখন শিশু পার্কে পরিণত হয়েছে আসামি শূন্য হওয়ায়, সেই যুগে আমাদের জেলখানাগুলোতে ঠাসা-ঠাসি, গাদা-গাদিতে পরিপূর্ণ। কি অপূর্ব! নেদারল্যান্ডের পথচলা মন্ত্রীরাও রাস্তায় পড়ে থাকা পশুপাখির মল-মূত্র, আবর্জনা নিজ হাতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে, ওই সময় আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাই রাস্তায় রাজার হালে চলে। উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের আচরণগত এত বড় তফাতের কারণ কী? উত্তর, তাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গবেষণালব্ধ, প্রকৃতি, পরিবেশ এবং পেশাগত। যেখানে শারীরিক শ্রম, মানসিক মেধার সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়, যোগ্য, দক্ষ, সৃজনশীল, মানবিক ও আদর্শিক মানবসম্পদ।

অথচ আমরা শিক্ষায় শুধু গুণগতমান বৃদ্ধির কথাই বলে যাচ্ছি। যা নিশ্চিত করার জন্য, প্রতি বছর সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। অথচ কোটি কোটি শিক্ষিতদের এই দেশে, টিয়া পাখি ভাগ্য গণনা করে, জ্যোতিষ দ্বারা ভবিষ্যৎ নির্ণয় হয়; জিনের বাদশাহ ভূত-পেত তাড়ায়। তেলপড়া, নূনপড়া এবং পানিপড়ায় আমাদের রোগ সারে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মানুষ মরে, চাঁদেও দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীকে দেখা যায়। অদৃশ্য রোগে আক্রান্ত সন্দেহে সন্তানরা মা’কে জঙ্গলে ফেলে দেয়, দুর্যোগ মহামারীকে পুঁজি করে মজুদদাররা পণ্যের দাম বাড়ায়, দরিদ্রের ত্রাণ চুরির উৎসবে জনপ্রতিনিধিরা মেতে ওঠে। পার্শ্ববর্তী দেশে রোগ-ব্যাধি সারার জন্য গো-মূত্র পানের হিড়িক পড়ে। বিশ্বের পরম আধুনিক যুগের অন্তরালে অন্ধত্ব, কু-সংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, চাপিয়ে দেওয়া আধুনিক শিক্ষা প্রায় অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার সময় ও যুগের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শিক্ষা ব্যবস্থার সময় উপযোগী উন্নয়ন ঘটানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলাতে, কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন অথবা শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করার কোন গবেষণালব্ধ, প্রস্তাব সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ যাবত কোন শিক্ষামন্ত্রীই তুলে ধরেননি। যা হয়েছে, তাতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সময়ের আশাতীত ফলাফল আসেনি।

গত ৫ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা সম্বন্ধে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, “দেশের অপ্রতুল সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কারণ গবেষণা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে শুধু গবেষণা করলেই হবে না। গবেষণার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে; তার ফলাফলটা কী সেটাও জানতে হবে। গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে দেশ ও মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই সে গবেষণা সার্থক। আমাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রেই গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।” তাঁর এই ভাষণে স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি চান বর্তমান শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষাধারা নিয়ে একটি গবেষণা হোক। প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য এমন সময় দিয়েছেন, যখন আমাদের দেশে জোড়া-তালি দেওয়া, অন্যের থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে অথবা অনলাইনে বিদেশ থেকে টাকার বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের হিড়িক পড়েছে। পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিটও হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের এক শিক্ষক ৯৮% হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের মাধ্যমে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রেজিস্টার আবু হানিফা পুরোপুরি অন্যের অভিসন্দর্ভ চুরি করে ডক্টরেট বনে চলে গেছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া, প্রকৃতি, পরিবেশ, অবস্থা বিবেচনায় যে শিক্ষার দরকার তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। হাজার বছরের পুরোনো ধ্যান-ধারণা টেবিল ওয়ার্ক করে কিংবা ব্যক্তি মানুষের একক চিন্তার প্রতিফলন যাতে, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে সময় উপযোগী শিক্ষা এবং শিক্ষা পদ্ধতি, নীতি, মান-গুণের আমূল পরিবর্তন সময়ের দাবি। যে শিক্ষায় থাকবে জীবন সম্পৃক্ততা, আনন্দঘন পরিবেশ, শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। যার যতটুকু শিক্ষার প্রয়োজন ততটুকু। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে তার মেধা অনুযায়ী ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তবেই ডাক্তার, প্রকৌশলী, উকিল-মোক্তার, জজ-ব্যারিস্টার সৃষ্টিতে মেধা সাথে ইচ্ছার সমন্বয় ঘটবে। কোনক্রমেই শিক্ষার্থীর স্বপ্নের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত শিক্ষক, অভিভাবক গ্রহণ করতে পারবে না। কারণ, মানুষের বৈচিত্র্যময় ইচ্ছায় কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ উকিল-মোক্তার, কেউ আবার জজ-ব্যারিস্টার হতে চায়।
আমাদের অভিভাবকরা সন্তানকে তার ইচ্ছা বা স্বপ্নের বিপরীতে প্রভাবিত করছে, ঠিক তেমনি আধুনিক শিক্ষার নামে প্রতিষ্ঠান কর্তারা শিক্ষার্থীদের কোন কোন ক্ষেত্রে ইচ্ছা বা স্বপ্নের বিরুদ্ধে শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করে। ফলে মেধাবী ওই শিক্ষার্থীটি অতি দ্রুত গোবর্ধনে পরিণত হয়। প্রত্যেকটি মানুষের এক একটি স্বপ্ন রয়েছে। এই স্বপ্ন যেন বাবা মা’র ইচ্ছার বলি হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে পরিচ্ছন্ন নজর রাখতে হবে। অন্যের ইচ্ছার চেয়ে নিজের স্বপ্নটা অনেক বড়। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, তার একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন,“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে। ৯৩% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে হতাশ। ৭৯% শিক্ষার্থী নিজ পছন্দের পেশার কাজ পায় না। ১৭% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউটের খাতায় নাম লেখায়। বাবা মা’র ইচ্ছা পূরণ করতে ৬০% শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারে না।”

শিক্ষার্থীরা তাদের ইচ্ছা বা স্বপ্নমাফিক পড়তে পারছে না বলেই, শিক্ষিত বেকারের মিছিল বেড়েই চলছে। আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে এমন, যেখানে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, পেশাগত শিক্ষিতের হার বাড়বে, কর্মসংস্থান খুঁজবে না বরং কর্ম সৃষ্টি করবে। আর এটা করতে হলে, আমাদের হ-য-ব-র-ল শিক্ষাব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। আমরা গর্বের সাথে বলতে যেমন পারি, পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ১ জানুয়ারি থেকে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। চালু করেছেন উপবৃত্তি ও বৃত্তি। আবার ঘৃণার স্বরে বলা যায়, এত টাকা ব্যয় করার পরও তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গাইড-নোট কিনতেই হচ্ছে।

প্রাথমিক শাখায় একজন ছাত্রের ৮০০-৯০০ টাকা, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্রের ১৬০০ টাকা, নবম দশম শ্রেণির একজন ছাত্রের ২০০০ টাকার নোট গাইড না হলেই চলে না। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীকে বলে দেন, কোন প্রকাশনার কোন বই কিনতে হবে। ফলে সৃজনশীল শিক্ষার দেশে যা হবার তাই হচ্ছে। দেশের ইউনিয়ন থেকে শুরু করে শহর রাজধানী পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। অথচ কর্মসংস্থান নেই, সৃষ্টি হয়নি উদ্যোক্তা, পেশাগত শিক্ষার বালাই নেই। প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন যেখানে আনন্দঘন প্রকৃতি-পরিবেশ এবং মৌলিক শিক্ষার মহাস্বর্গ থাকবে, সেখানে ভুতুড়ে নিরানন্দ বইয়ের বোঝা ঘাড়ে রেখে চলছে আমদের ভাবী প্রজন্ম। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে বিতর্ক, অভিনয়, আবৃত্তি, জ্ঞান জিজ্ঞাসা, ক্রীড়া বিনোদন এবং ভ্রমণ আড্ডার মধ্য দিয়ে খেলারছলে পেশাগত, পরিবেশগত, প্রকৃত, মৌলিক এবং নৈতিক শিক্ষা অর্জন করে মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ কর্মঠ, যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠবে, সেখানে, শিক্ষার্থীরা মাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনৈতিক শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নানাবিধ, সরকারি-বেসরকারি, জাতীয়-অজাতীয়, প্রাইভেট, দাখিল, কওমি, ইবতেদায়ি সকল প্রতিষ্ঠান এক রশিতে বেঁধে একটি ধারায় সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সকল শিক্ষকদের বিভাগীয় শিক্ষক হিসেবে গণ্য, দেশের সকল প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা অগ্রগণ্য। এরপর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নেই, যাদের ফলাফল সন্তোষজনক নয়, ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত ঘোষণা করে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিভাগীয় শিক্ষক হিসেবে দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে বদলি করার মত আইন করে তা বাস্তবায়ন, একই সাথে বর্তমান যুগে কি ধরনের শিক্ষা, কি প্রক্রিয়ায় বা পদ্ধতিতে হওয়া প্রয়োজন এ ব্যাপারে দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষাগবেষক, শিক্ষকদের কাছে গবেষণাপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। যে পদ্ধতিটি হতে পারে প্রত্যেক জেলা থেকে, যে কেউ শিক্ষা সংস্কারে প্রস্তাবনা রেখে, তার মতামত গবেষণাধর্মী “কি-নোট” আকারে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট জমা করবেন।
প্রত্যেক জেলায় সংগৃহীত প্রস্তাবনার উপর সেমিনার আকারে জেলা সদরে দু’দিনব্যাপী যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনাপত্র গৃহীত হবে। দেশের ৬৪ জেলার ৮টি বিভাগের মোট ৬৪টি প্রস্তাবনা থাকবে। ৮ বিভাগে ৮টি করে প্রস্তাবনা নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সপ্তাহ ধরে যুক্তিতর্ক চলবে। এখানে উপস্থাপিত প্রস্তাবনার যৌক্তিক পরিমার্জন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে একটি পরিচ্ছন্ন প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। যে প্রস্তাবনাটি জাতীয় পর্যায়ে জমা হবে। ৮ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবনা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পুনরায় সপ্তাহব্যাপী যুক্তিতর্ক চলবে। প্রত্যেকটি যুক্তিতর্কে প্রস্তাবনা জমাদানকারী প্রত্যেক জেলার একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিজ্ঞাপন প্রচার করবে। যে বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন।

শিক্ষা সংস্কারে এই গঠনমূলক কাজটি করা যেতেই পারে। বাঙালি জাতির ইতিহাস অত্যন্ত প্রখর এবং সমৃদ্ধ। যে জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে দক্ষ শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন, সেই জাতির শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হলেই, এই দেশ পৃথিবীর সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে এতে কোন সন্দেহ নেই। মুজিবশতবর্ষে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের কাছে, জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা সংস্কারের গঠনমূলক একটি কাঠামো এখন সময়ের প্রত্যাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ