আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

লকডাউন, হার্ড ইমিউনিটি ও অনাগত দিনের লাশের বোঝা

ফরিদ আহমেদ  

বাংলাদেশে লকডাউন ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে গিয়েছে। সত্যিকারের লকডাউন বলতে যেটা বোঝায়, সেটা বাংলাদেশে কখনোই ছিলো না। সরকার লকডাউনের যে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছিলো, সেগুলো মূলত ছিলো দ্বিধান্বিত সিদ্ধান্তের ফসল। করোনা মোকাবেলায় সরকারের সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা যে ছিলো না, সেটা ওই দ্বিধান্বিত সিদ্ধান্তগুলো দেখলেই বোঝা যায়। এখন আর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশে লকডাউন আর কার্যকর হবে না। কার্যকর হলেও যে কারণের জন্য লকডাউন ছিলো, সেই অভীষ্ট আর সিদ্ধ হবে না কখনোই।

সরকারের সুস্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব, সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, মুনাফাখোরদের সীমাহীন লোভ, ব্যাপক সংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষ, বিপুল পরিমাণে অসচেতন জনগোষ্ঠী, তাদের বিচিত্র আচরণবিধির কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে লকডাউন ব্যবস্থা চালু রাখাটা কষ্টকর। বাংলাদেশের এই বাস্তবতার কারণেই এটা অনিবার্যভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সারাবিশ্ব মূলত দুটো পদ্ধতিতে এগিয়েছে। এর একটা হচ্ছে মিটিগেশন এবং অন্যটা হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি। প্রথম পদ্ধতিটাই মূলত বিশ্বের সব দেশ অনুশীলন করেছে। ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে এগিয়েছিলো। ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস অবশ্য মাঝপথে হার্ড ইমিউনিটির রাস্তা থেকে সরে গিয়ে মিটিগেশনের দিকে চলে যায়। একমাত্র ব্যতিক্রম হিসাবে থেকে যায় সুইডেন।

ব্যতিক্রম হিসাবে সুইডেন থাকলেও, সুইডেন যে হার্ড ইমিউনিটির রাস্তায় হাঁটছে, সেটা সরকারিভাবে কখনোই স্বীকার করেনি। তবে লকডাউনের মতো যে সমস্ত কঠোর ব্যবস্থা অন্যান্য দেশ নিয়েছে, সে রকম কঠোর কোনো ব্যবস্থাতে তারা যায়নি। খানিকটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে সুইডেন করোনার মোকাবেলা করে চলেছে। পঞ্চাশজনের বেশি মানুষের জনসমাগম সুইডেন নিষিদ্ধ করেছে। হাই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। বয়স্ক মানুষ এবং যাদের কোনো মেডিকেল কন্ডিশন আছে, তাদেরকে আইসোলেশনে থাকার উপদেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু, প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিভিন্ন অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রেস্তোরাগুলো খোলা রয়েছে।

করোনার বিরুদ্ধে সুইডেনের এই কোমল আচরণের ফলাফল কী? ভবিষ্যতে কী হবে, সুইডেন কি হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে কী করবে না, সেই আলোচনায় আমরা না যাই। সেটা জানতে গেলে আমাদের দীর্ঘ একটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। সুইডেনের পদক্ষেপের কারণে আপাতত কী ধরনের ফলাফল আসছে সেটাকেই দেখি আমরা।

সুইডেনে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ২২,৭২১ জন। এর মধ্যে মারা গিয়েছে ২৭৬৯ জন। শতকরা হিসাবে এটা বারো শতাংশের বেশি। এই হার বেশ উচ্চ একটা হার। সুইডেনের প্রতিবেশী তিনটা দেশকে তুলনায় আনলে এটা আরও পরিষ্কার হবে। ডেনমার্কে রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৯৬৭০ জন। সেখানে মারা গিয়েছে ৪৯৩ জন। মৃত্যুর হার ৫.০৯ ভাগ। ফিনল্যান্ডে এই হার ৪.৫০ শতাংশ আর নরওয়েতে মাত্র ২.৭১ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনাতেই বোঝা যাচ্ছে সুইডেনের অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। সংক্রমণই শুধু সেখানে বেশি হচ্ছে তাই নয়, উচ্চ হারে মানুষও মারা যাচ্ছে করোনাক্রান্ত হয়ে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে যেহেতু লকডাউন অকার্যকর হয়ে গেছে, একে পুনঃপ্রতিষ্ঠার আর কোনো সুযোগ নেই, বা করলেও কোনো লাভ হবে, সেহেতু আমাদের হার্ড ইমিউনিটি ছাড়া অন্য কোনো পথই আর খোলা নেই। হার্ড ইমিউনিটির জন্য জনসংখ্যার আশি শতাংশকে আক্রান্ত হতে হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সতেরো কোটি হলে, আশি শতাংশে সংখ্যাটা দাঁড়ায় তেরো কোটি ষাট লক্ষ। এর মধ্যে যদি পাঁচ শতাংশও মারা যায়, তবে সেটা হবে আটষট্টি লক্ষ। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সরকারি হিসাবে মৃতের শতকরা হার হচ্ছে ১.৭৭ (এই পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয়, এর সঙ্গে করোনা উপসর্গকে হিসাবে নিতে হবে আপনাদের)। এটাকেও যদি আমরা ধরে নেই মৃতের হার হিসাবে, সেক্ষেত্রেও হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের আগেই আমাদের হারাতে হতে পারে চব্বিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই চব্বিশ লাখ লোক হুট করে এক সাথে মরে যাবে না, একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মারা যাবে তারা।

এখন দেখা যাক, এই বিপুল পরিমাণ লাশের বোঝা আমরা বইতে পারি কি না আসন্ন সময়ে, অনাগত দিনে?

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ