প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ২৬ মে, ২০২০
এবারের ঈদ-উল-ফিতরের দিন বাংলাদেশের একটি গ্রামে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার প্রতিবাদ করতে একদল গ্রামবাসী জলাবদ্ধতায় দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। একে জলাবদ্ধতা বললে তাদের বিপন্নতার ভয়াবহতা হ্রাস পায়। এটা জোয়ারের পানি। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভাঙার পানি এই বিষাদসিন্ধু।
এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে; চর্বিওয়ালা নরভোজিরা তাদের গত দশবছরে কেনা স্মার্ট ফোনে গত দশবছরে সঞ্চিত "ডিনাইয়াল বা অস্বীকার"-এর অক্ষর উগরে দিয়ে তাদের বহুব্যবহারে জীর্ণ 'যন্ত্র ঐ একটাই- ষড়যন্ত্র" বের করে ঠাকুরমার ঝুলি থেকে।
বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের তার প্রাধিকার বা এনটাইটেলমেন্ট বুঝিয়ে দেবার জন্য রাষ্ট্রের কাছে নিজের অসুবিধার কথা জানানোর অধিকার রয়েছে। সংবিধান এই অধিকার নিশ্চিত করে।
এটা গোটা পৃথিবীর নিয়ম। এর ব্যতিক্রম কেবল জিডিপির পরিসংখ্যানের ডানা ঝাপটানির বাংলাদেশে। এইখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের উত্তরাধিকারকে "যা খুশি করার ও বলার লাইসেন্স" ভেবে নিয়ে যে কোন প্রতিবাদের গলা টিপে ধরে।
বিজ্ঞাপন
অথচ এই বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদের স্বতন্ত্র ভাষা ছিলো। ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া তরুণ মুজিব "অনশন" করেছিলেন। পাকিস্তানের শাসক জান্তা এই প্রতিবাদের মুখে মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
এই মুজিব একবার ভাসানীর নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। ভাসানী তখন রাজপথে নামাজ পড়তে শুরু করেন; আর প্রার্থনায় "প্রতিবাদে"র কারণগুলো বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল রাইটস মুভমেন্টের নায়ক মার্টিন লুথার বলেছিলেন, সারাক্ষণ প্রতিবাদে সক্রিয় থাকো। যদি দৌড়াতে পারো তবে দৌড়াও। যদি হাঁটতে পারো তবে হাঁটো; আর যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হও; তবে পা মাটিতে ঠোকো; তবু প্রতিবাদে সক্রিয় থাকো।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন। তার রাজনৈতিক দ্রোহের উত্তরাধিকার আজকের বাংলাদেশ।
সূর্যসেন-তিতুমীর-বঙ্গবন্ধুর দ্রোহের বারুদে ঠাসা বাংলাদেশে কোন উপনিবেশ টিকতে পারেনি। কোন শাসকগোষ্ঠী অন্যায় করলে; তার প্রতিবাদ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন মানুষের বসবাস বাংলাদেশে।
ফলে এইখানে যে কোন নাগরিক তার অসুবিধার কথা বলবে। একটি জলাবদ্ধ গ্রামে পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়তে দেখলে; ঐ জলাবদ্ধতার কারণ নিরসন করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা কেন, এই জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনের কাজে অবহেলা করেছে; তার তদন্ত হতে হবে। কী করে বেড়িবাঁধ ভাঙলো; কেন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করে ভাঙলেই কেবল জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হয় এ অবহেলা কাদের তা জানা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখলেই ক্ষমতাসীন টাইম মেশিন লীগ তাদের "যন্ত্র ঐ একটাই-ষড়যন্ত্রটি" পকেট থেকে বার করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়; ঐ যে দেখো জামাত-শিবির; পরাজিত শক্তির বাঘ এসেছে। এদিকে "টাইম মেশিন লীগের" বুক পকেটে হেফাজত আর হিপ পকেটে শিবসেনা; অথচ সে একটি কাল্পনিক বিশুদ্ধতার টুপি বা টিকি লাগিয়ে "ঐ যে দ্যাখো; ওরা কতো নোংরা; আমাদের পুতপবিত্র "দেশপ্রেমে"র সাদা দিলে কাদা লাগাইতে আসছে" বলে আর্তনাদ করে। ঐ সেই মিথ্যাবাদি রাখালের "বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে" চিক্কুরের মতো ভাটিয়ালি এই ছলাকলা।
জাস্টিফিকেশান রত্ন এসে সেই যে ফেইক "বাসন্তির জাল পরা ছবির" গপ্পোটি তুলে এমন একটা ধারণা দেয়; সেসময় বাসন্তীরা কাতান-বেনারসি পরিয়া নাইওরে যাইতো।
বিজ্ঞাপন
সেসময় অবস্থাটা এমন অসহ্য অবস্থায় পৌঁছেছিলো যে, বঙ্গবন্ধু ব্যথা-বিদীর্ণ হয়ে বলেন, সব দেশ পায় সোনার খনি; আর আমি পেলাম চোরের খনি।
ত্রাণের কম্বল চুরির ধূসর বাস্তবতায় জাতির জনক বলেন, ৭ কোটি মানুষের জন্য সাত কোটি কম্বল এলো; আমার কম্বল গেলো কই?
জাতির জনকের কম্বল চুরি করতে পারে যে কুসন্তান; সে যে অনাম্নী প্রান্তিক বাসন্তির কম্বল চুরি করেছে; এটা বুঝতে মহাশূন্যে স্যাটেলাইট উড়ানোর জ্ঞান দরকার নাই। বঙ্গবন্ধু যেন গ্রিক যোদ্ধা ও লেখক থুসিডাইসিসের মতো; নিজেই লিখে গেছেন "চাটার দলের" মহাচুরির ফাঁদে আটকে পড়া বাংলাদেশের বেদনার কথা।
সেই "চাটার দলটি" বঙ্গবন্ধুর সত্যভাষণ সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করে। সেই খুনিদের নরভোজি সংস্করণ আজকের পেটমোটা কিংবা ডায়াবেটিসে চুষে ফেলা আমের মতো প্রোপিক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে নাগরিক প্রতিবাদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চেষ্টা করে।
লক্ষ্য করে দেখুন; এই একবিংশের ঠগিদের কথাও বঙ্গবন্ধু লিখে গেছেন। উনি বলেছিলেন, আমার নিজের গড়া রাজনৈতিক দলটি আদর্শ বিচ্যুত হলে; তখন আমার দ্বিতীয় মৃত্যু হবে।
কাজেই মানবতাবাদী মুজিব, যিনি বলতেন, আমার আবার জন্মদিন কীরে বাপু! যার চিন্তা জগত জুড়ে মানুষের মুক্তি; তিনি কেবল ভৌগলিক মুক্তিতে খুশিতে গদগদ হবার মানুষ ছিলেন না। সোশ্যালি ইনটেলিজেন্ট মানুষ কখনো মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে দেখে; নিজে রাজপ্রাসাদে ঝাড়বাতি প্রজ্বলন করতে পারে না।
কিন্তু এই মানুষের বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের দোকানদারির বিলবোর্ডের মডেল বানিয়ে; করোনার মৃত্যু উপত্যকায় তাঁরই জন্ম শতবর্ষে আতশবাজি পুড়িয়েছে। এইসব আত্মকেন্দ্রিক; মানবতা বোধ বর্জিত নরভোজিরাই; সব বিপর্যয়ে জনগণকে দায়ী করে। দশবছরের "বালিশের ব্যাপারীকাণ্ডে" বস্তি থেকে দালানে উঠে; আজ শেখাতে এসেছে প্রতিবাদের ভাষাজ্ঞান।
পলিটিকসের এইসব স্লামডগ মিলিওনিয়ারদেরকেই বঙ্গবন্ধু চাটার দল বলতেন; আর তাদের সৃজিত অপ-রাজনৈতিক আখড়াটিকে বলতেন, চোরের খনি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য