প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ২৭ মে, ২০২০
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সৈনিক, উপনিবেশিক শোষণমুক্ত স্বাধীন ভারত বিনির্মাণ এবং বাঙালির জাতিগত জাগরণের অগ্রনায়ক কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কবি। ক্ষুধা-দারিদ্র, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রামের মাঝে কবি নজরুলের বিদ্রোহী বীণ বারবার ঝংকৃত হয়েছে। কবি নজরুলের সৃষ্টিশীলতার বাঁক-পরতে বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে স্রোত বয়েছে তার প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শে প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কাছে কবি নজরুলের বিশেষত্ব ছিল,কবির বিদ্রোহী চেতনা।
পিআইবি’র মহাপরিচালক শব্দশিল্পী জাফর ওয়াজেদ তাঁর ফেসবুক ওয়ালে প্রতিদিন যে সমস্ত তথ্য পোস্ট করেছেন তাতে,“বঙ্গবন্ধু কলকাতায় পড়াশোনাকালে তাঁর রুমমেট কবি গোলাম কদ্দুছের কাছে কবি নজরুল সম্পর্কে জেনেছেন। কবি জসিম উদ্দীনের কাছ থেকেও বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলকে চেনার এবং জানার সুযোগ পেয়েছেন। অপর শুভানুধ্যায়ী কবি লূৎফুল হায়দার জুলফিকারের সাথে বঙ্গবন্ধুর সখ্যতা ছিল প্রবল। যাঁকে সম্পাদক করে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৮, ১৯৬৯, ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বের করতেন সাপ্তাহিক নতুনদিন। ট্যাবলেট আকৃতির নতুন দিনের লোগো ছিল লাল রঙের।
পাকিস্তান জাতীয় গণপরিষদেও ৫০ দশকে প্রথম শেখ মুজিব দাবি তোলেন কলকাতায় বসবাসরত কবিকে মাসিক ভাতা প্রদানের। বঙ্গবন্ধুর দাবি গৃহীত হয়। তবে টাকা কেন্দ্রীয় নয় প্রাদেশিক সরকার দেবে। সে অনুযায়ী তৎকালীন কবি পেতেন ১০০ টাকা। ১৯৬৫ সালে ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৮, ৬৯, ৭০ সালে দলের লোক পাঠিয়ে কবি ও তাঁর পরিবারের জন্য কাপড়, খাবার ও টাকা পাঠাতেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, কবি নজরুলকে সমাদর-কদর করতেন। কবির বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন কবিকে নেতাজি সম্মাননা প্রদান করেন। নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু কবির সংবধর্না সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে কবিকে ভারতবর্ষের কবি অভিধা প্রদান করেন। ১৯২৯ সালে এবার্ট হলে কলকাতাবাসীর পক্ষ হতে কবিকে নাগরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। কবি অনুষ্ঠানে নেতাজির প্রিয় গান ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু।’ গানের সাথে গলা মেলান নেতাজি। ৮৯ বছর আগেই কবি নজরুলকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় যার বাস্তব রূপ দেন বাঙালির জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।
ব্রিটিশ ভারত আইন অনুযায়ী কবি সাহিত্যিকরা সম্মানী পাওয়ার অধিকারী। সে মতে,কবি নজরুল তৎকালীন দুইশ টাকা করে সম্মানী পেতেন। দেশভাগের পর প্রথমে সমস্যা হয়। পরে দুদেশ থেকেই তিনি ভাতা পেতেন। (তথ্যসূত্র হাবিবুল্লাহ বাহারের ভূমিকা) মুজিবনগর সরকার প্রতি মাসে প্রতিনিধি পাঠিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ২৫০ টাকা করে সম্মানী ভাতা প্রদান করতেন। ১৯৭২ এর বঙ্গবন্ধু সরকার তা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করে দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ইন্দিরাকে অনুরোধ করে কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় কবির নামে বাড়ি বরাদ্দ দেন। পিজিতে দেওয়া হয় চিকিৎসা।
বঙ্গবন্ধুর পাঠ্য তালিকায় কবি নজরুল ছিলেন অবারিত। জেলখানায় পেয়েছেন নিবিড় করে। জেনেছেন, কবি বাংলার জয় চান। স্বাধীন দেশের রণসংগীত করা হয় কবির গান, ‘চল চল চল’। বঙ্গবন্ধুর নজরুলকে নিয়ে যাঁরা গবেষক তাঁরা পেতে পারেন অন্য এক শেখ মুজিবকে, যিনি সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সংগ্রামের সহায়ক করে তুলতে পেরেছেন। এদেশে আসার পর হতে কবি নজরুলকে জাতীয় কবি বলা হয়। নেই কোনো গেজেট।” ২০১৯ সালে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলা একাডেমির সাধারণ সভায় এক প্রবীণ সদস্য দাবি তোলেন কবি কাজী নজরুলকে জাতীয় কবি হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে গেজেট প্রকাশ করার।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য