আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

Revolution 2020: কাশী থেকে হবিগঞ্জ

বিপ্লব কর্মকার  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে অনেকেই ১৯৮১ সালে প্রকাশিত একটা বইয়ের পৃষ্ঠা শেয়ার করে , যেখানে দাবি করা হয় , ২০২০ সালে পৃথিবীতে এমন একটি রোগ আসবে— হুবহু করোনা উপসর্গের বর্ণনা। ফেসবুকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বইটির বক্তব্য সত্য নয়। এখন পুরনো সেই পোস্টে ক্লিক করলেই ফেসবুকের সতর্কবার্তা উঠে আসে, false Information, Checked by Independent fact checker. কিন্তু ২০১১ সালে প্রকাশিত চেতন ভগতের Revolution 2020 বইয়ের সাথে হবিগঞ্জের সুশান্ত দাশ– স্থানীয় সাংসদের বিরোধের ঘটনা পুরোপুরি মিলে যায়।

চেতন ভগত, ভারতের একজন তারকা খ্যাতি পাওয়া জনপ্রিয় লেখক। ভারতের নতুন প্রজন্মের কাছে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তার লেখা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে বলিউডে সিনেমা হয়েছে, প্রত্যেকটি উপন্যাস জনপ্রিয় হয়েছে। তার লেখায় একটা সাধারণ বাণী থাকে- দেশপ্রেম, অনিয়মের বিরুদ্ধে আশু পরিবর্তন, আর দুর্নীতিকে তীব্রভাবে কটাক্ষ। অনিয়ম ও দুর্নীতিকে কটাক্ষ করতে গিয়ে অনেক সময় সরকারের ও সরকারি (অ)নিয়মের বিরুদ্ধে লিখে ফেলেন। এজন্য মোদি সরকার তাকে জেলে পাঠায়নি কিন্তু প্রতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কাহিনী সংক্ষেপ: কাশিতে
বইটির কাহিনী সহপাঠী দুই বন্ধুকে নিয়ে অগ্রসর হয় যারা তাদের একই সহপাঠিনীকে ভালোবাসে, ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। তাদের ছাত্রজীবনকে উপলক্ষ করে কাহিনী অগ্রসর হয়, সংগত কারণেই ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার অনিয়ম-দুর্নীতি এই উপন্যাসের কাহিনীর উপজীব্য হয়ে উঠে। গোপাল, রাঘব আর আরতি সমবয়সী, সহপাঠী। ছাত্র হিসেবে তিনজনের সামর্থ্য তিনরকম। রাঘব ভালো ছাত্র, সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রথম চেষ্টাতেই সফল। আরতি চায় বিমানবালা হতে আর গোপাল যে কোন উপায়ে টাকা কামাতে।

মাতৃহীন গোপাল অসুস্থ পিতার তত্ত্বাবধানে বড় হয়। পিতার ইচ্ছা তাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বড় করা। প্রথমবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য না এলেও, দ্বিতীয়বারের জন্য পিতা নিজের চিকিৎসা না করে, টাকা পয়সা ধার করে গোপালকে ভালোমত প্রস্তুতির জন্য অন্য একটি শহরে কোচিংয়ের জন্য পাঠায়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও গোপালের ভাগ্য খুলেনি। পুত্রের অন্ধকার ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তাতায় মারা যায় গোপালের বাবা। বহুপক্ষের মালিকানা মামলার কারণে ত্রিশ একর ভেজাল কৃষি জমির উত্তরাধিকার হয় গোপাল। পিতা জীবিত থাকতে সেই জমি ভোগ করতে পারেনি। একদিন বন্ধুর মাধ্যমে স্থানীয় সাংসদের কাছে যায় গোপাল। সাংসদের কাছ থেকে প্রস্তাব আসে সেই কৃষি জমিতে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করার। যে গোপাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষা পাস হতে পারেনি, স্নাতকের গণ্ডি পার হয়নি, সেই গোপাল হবে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ডাইরেক্টর।

সাংসদ অন্য একটা সরকারি প্রজেক্টের টাকা মেরে এই কলেজ স্থাপনের পেছনে ব্যয় করেন। কৃষি জমিকে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরের জন্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় ঘুষ। ভবন নকশা পাসের জন্য দিতে হয় ঘুষ। কোর্স কারিকুলাম পাশের জন্য মঞ্জুরি কমিশনকে দিতে হয় ঘুষ। মোটা অংকের বেতনে নামজাদা অধ্যাপক নিয়োগ দিতে হয়। আর পত্রিকায় বড় বড় বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়, সেই সাথে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য স্থানীয় পত্রিকাওয়ালাদের সাথে বাড়তি খাতির বাবদ ব্যয়। এছাড়া সময়ে সময়ে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কারণে টাকা ভর্তি খাম, সততার তকমা লাগানো অফিসারদের দিতে হয় সিমেন্টের ব্যাগের ভিতর টাকা। ঘুষ লেনদেনের বর্ণনাগুলো আমাদেরও পরিচিত, মনে রাখার মত।

অপরদিকে রাঘব চিন্তা করে তাকে ভারতবর্ষের সব অনিয়ম ২০২০ সালের মধ্যেই দূর করতে হবে। এজন্য তাকে অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতে হবে। এ আন্দোলন শুরু হবে তার পবিত্র শহর কাশি থেকে। পরে ছড়িয়ে পড়বে সারা ভারতবর্ষে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষে মোটা অংকের বেতনের চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়ে, স্থানীয় পত্রিকায় চাকরী নেয়। রিপোর্ট করে অনিয়মের মাধ্যমে নির্মিত গোপালের কলেজের বিরুদ্ধে। শুরু হয় সংঘাত। পত্রিকা অফিসের চাকরি হারায় রাঘব। শুরু করে নিজের অর্থায়নে দু’পাতার পত্রিকা Revolution 2020। সেটাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায়, স্থানীয় সাংসদ পত্রিকা অফিস গুড়িয়ে দেয়, রাঘবের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

কাহিনীর অন্ত্যমিল হবিগঞ্জে
সুশান্ত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা ছোট পত্রিকা চালু করে। তার লক্ষ্য এবং এত পত্রিকার ভিড়ে সেই পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য আমরা জানি না। কিন্তু পত্রিকার বয়স একমাস না যেতেই স্থানীয় সাংসদের সাথে সংঘাত এবং পরিণতিতে মামলা। মামলার বিবরণীতে দেখা যায়, সুশান্তের বিরুদ্ধে মুল অভিযোগ চারটা। আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় প্রকাশিত চারটা সংবাদ। সংবাদের শিরোনামগুলো হল-
১. বন্ধের দিন হবিগঞ্জ আদালতে নারীসহ ধরা পড়ে এপিপি আবুল কালাম
২. হবিগঞ্জের রাজনীতিতে ভূমিকম্প
৩. মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী লিয়াকতের পরিবারবর্গের আওয়ামী লীগে যোগদান
৪. সাহায্যপ্রার্থী ৩০০ জনের নামের বিপরীতে মোবাইল নাম্বার চারটি।
চারটি সংবাদেই উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় এমপির যোগসাজশ অথবা অপরাধীর সাথে সহাবস্থান।

যেই ডিজিটাল এক্টে এই মামলা হয়েছে , সেই আইনই সারাদেশে বিতর্কিত। যে কেউ চাইলে যে কারো বিরুদ্ধে এর ব্যবহার করতে পারবে। যেমন, বাদীর বিরুদ্ধেও চাইলে মানহানির মামলা করতে পারে অন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি। অভিযোগের শেষ পাতায় স্থানীয় সাংসদকে বড় করতে গিয়ে লেখা হয় –“যেখানে বাংলাদেশের অনেক জনপ্রতিনিধি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা তৈরির জন্য নিজ এলাকায় অবস্থান করেন না .........” এই লাইনের মাধ্যমে অন্য এলাকার জনপ্রতিনিধিদের হেয় করা হয়েছে। যার মানহানি হয়েছে, মানহানির মামলায় তাকেই বাদী হতে হয়- এটাই প্রচলিত নিয়ম। এই মামলায় বাদী অন্যজন হওয়াটাই বড় দুর্বলতা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ঘটনায়, রাঘবের মত সুশান্তের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে না অটুট আছে সময়ই বলে দেবে।

বিজ্ঞাপন

বিতর্কিত ভূমিকায় ঐক্য পরিষদ
শায়েস্তাগঞ্জে রবিদাস সম্প্রদায়ের এক নারী খুন হয় কয়েকবছর আগে। সেই সময় হবিগঞ্জের হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের কোন নেতাকে দেখা যায়নি নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। তেমনি সারা বাংলাদেশে খুব কম শাখা আছে যারা নির্যাতিত হিন্দুর পাশে দাঁড়ায়। বরং নির্যাতিত হিন্দুর কাছ থেকে বিভিন্ন আইনি সহায়তার নাম করে টাকা-পয়সা নিয়ে সর্বস্বান্ত করে দেয়। একুল ওকুল সবকুল হারিয়ে নির্যাতিত লোকজন দেশান্তরি হয় অথবা শহরে ছিন্নমূল মানুষের স্রোতে ভিড়ে যায়।

অপরাধের সাথে জড়িত হওয়া বা অপরাধীর সাথে সখ্যতায় কারো মানহানি হয় না। মানহানি হয় ছবি সহ সেই সংবাদ প্রকাশিত হলে। সেইদিন হয়ত আর বেশি দূরে নয়, যেদিন ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের নৃশংসতার কথা আর বলা যাবে না। কারণ, ওইসবে তাদেরও মানহানি হয়! অতএব এখন যারা ফেসবুকে শেয়ার করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন তাদের নামেও মানহানি মামলা হলেও হতে পারে।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ