প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আব্দুল করিম কিম | ০৩ জুন, ২০২০
লড়াইয়ের সাথীরা মনে রেখেছেন। অসমাপ্ত লড়াইয়ে কেউ থেমে গেছেন। কেউ পথ হারিয়েছেন। কেউ বিভ্রান্ত হয়েছেন। কেউ এখনো ঘোলা চোখে স্বপ্ন দেখছেন। নব্বই দশকের বিশ্ব বাস্তবতায় খেই হারিয়ে ফেলা কমরেড জালাল। সদ্য বিদায় নিয়েছেন। একসাথে মিছিলে হাঁটা দিন বদলের স্বপ্ন দেখা সহযোদ্ধারা প্রয়াত জালালের জন্য একজোট হয়েছেন। তাঁর বিপন্ন পরিবারকে সহায়তা করবেন। তাঁদের এই উদ্যোগে পাশে থাকার থাকছি।
সাম্যবাদের স্বপ্ন নিয়ে পথহাঁটা মানুষগুলো পথ হারালেও নিজের একজনই মনে হয়। এ নিয়ে সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন লিখেছেন, আশির দশকের শেষ। নব্বই দশকের শুরুর দিনগুলো। দেশের পরিবেশটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো। মনে রাখতে হবে সদ্য স্বাধীন দেশের মাত্র এক দশকের মধ্যের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত মাঠ পেরিয়ে আমাদের সদ্য যৌবনে পদার্পণ। দেশ, সমাজ নিয়ে স্বপ্নবিলাসী আহ্বানে বিভোর আমাদের সময়। বাতাসে তখনও লাশের গন্ধ। কৃষকের লাঙলের ফলায় টক করে বাঁধছে দেশ স্বাধীন করতে যাওয়া কোন অজানা মুক্তিযোদ্ধার হাড়। বিশ্বজুড়ে তখনকার রাজনৈতিক ডামাডোলও ভিন্ন। সামাজিক সাম্যের আহ্বান। ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা থেকে বিশ্বের সর্বত্র লড়াকু মানুষের মুক্তির বার্তা, ভিন্ন এক লড়াইয়ের আহ্বান!
প্রাক যৌবনের সে বার্তা আমাদেরও মাতাল করেছিলো। নিজেকে উৎসর্গ করার এ আহ্বান আমাদের যেমন উন্মাতাল করেছিলো, আমরাও একসময় সে আহ্বানের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠি। দলে দলে বেপরোয়া যুব তরুণের যূথবদ্ধতার সময় তখন। সময়ের অগ্রসর যুব তরুণের এমন একজন জালাল উদ্দিন। খেলার মাঠ থেকে জালালদের মতো যুব তরুণ আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় তখন। সব সখীরে ডাক দেয়ার স্লোগান দিতাম। ডাক শুনে যোগ দেয়া মিছিলের প্রিয় মুখ জালালের স্বপ্নও অভিন্ন ছিলো।
বিজ্ঞাপন
মিছিল অনেক আগেই থমকে গেছে। স্বপ্নেরা ঝরে গেছে। মিছিলের মুখেরা যে যার পথে হারিয়ে গেছে। কেন এমন হয়েছে? সে প্রশ্নের বহু উত্তর। বহু ব্যাখ্যা। বহু অপবাদ। সব থমকে গেলেও সময়টা ব্যর্থ হয়ে যায়না। সময়ের খাঁটি মানুষগুলোর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা একেবারে নিষ্ফল হয়ে যায় না। যেতে পারেনা।
কলেজের কদমতলায় দাঁড়িয়ে এক যুবকের মুখ দিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরুতো। আমার মতো দ্রুত উত্তেজিত না হওয়া লোকেরও উত্তেজনার বাঁধ ভেঙেছে বারবার। তখনকার সেই যুবক ছাত্রনেতা মারুফ আহমেদ জালালকে নিয়ে লিখেছেন।
মারুফ আহমেদের কাছে থেকেই জানা যায়, "ব্যক্তিগত জীবনে জালাল চার সন্তানের জনক ছিলেন। ...সদালাপী পরোপকারী, মিষ্টভাষী বহুমুখী গুণের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল তার চরিত্র। দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য যে তার আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। ছোটখাট একটা চাকুরির বেতন দিয়ে অত্যন্ত অভাব অনটন এবং দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন অতিবাহিত করলেও ঘুণাক্ষরে কাউকে জানতে দিতেন না তার বেহাল অবস্থার কথা। জালাল হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। তার অবর্তমানে তার পরিবার আজ দিশেহারা। অথৈ সাগরের বুকে যেন তারা হাবুডুবু খাচ্ছে।"
আজ পূর্ব পশ্চিমে ছড়িয়ে আছেন আমাদের তিন দশকের লড়াই সংগ্রামের বহু সতীর্থ। জানি আমাদের পথ মতের নানা বাঁক আজ। নানা ভ্রান্তি আর বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে থাকা আমাদের অনেকের চলমান সময়। সবকিছু পাশে রেখে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ সময়টাতে একবার দাঁড়াবো। জালালের বিপন্ন পরিবারের পাশে আমাদের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে দাঁড়াবো। জালালের স্ত্রীকে একবার হলেও আমরা বলবো, স্বামীর যৌবনের স্বজনরা তাঁর জীবনের দুর্দিনে খোঁজ নেয়নি, নিতে পারেনি ঠিকই। আজ দাঁড়ালাম। জালালের অবোধ, নিরাশ্রয় সন্তানদের পিঠে হাত রেখে বলবো, আমরা তোমাদের বাবার বন্ধু ছিলাম, স্বজন ছিলাম। তোমাদের পাশে আছি আজকের বিপন্ন সময়ে! এই সহানুভূতিটা আমরা জানাবো।
এ নিয়ে সতীর্থরা উদ্যোগী হয়েছেন। একটা আর্থিক পরিকল্পনা করা হয়েছে বিপন্ন এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। যারা পারেন, অর্থ সাহায্য দেবেন। সহানুভূতি আর ভালোবাসা দিয়ে অনেকেই পাশে থাকবেন আশা করছি। মারুফ আহমেদ এ নিয়ে ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দেবেন দয়া করে। আমরা তিন সপ্তাহের মধ্যে, ২১ জুন (২০২০) তারিখের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করবো। কেউ নিজের নাম প্রকাশ না করেও অংশ নিতে পারেন। সব প্রস্তুতি ও আর্থিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আসছে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই আমরা পরিবারটিকে তা পৌঁছে দেবো। বাইরের দেশে থাকা আমরা একেকজন ঠিক করে নেবো নিজেদের মধ্যে। জয় হোক মানবিকতা ও সহমর্মিতার।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য