আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সম্প্রীতির ফেরিওয়ালা কামরান

সালেহ আহমদ খসরু  

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান! না, কামরান ভাই। সকলের একই উচ্চারণ, যেন একই সুতায় গাঁথা শিউলি মালা। গত সোমবার ঝরে পড়েছে অন্য কোনো রাঙা কামনায়, সৃষ্টিকর্তা মহান রব আল্লাহ পাক এর প্রেমের টানে সব জাগতিক ভালোবাসা দুমড়ে মুচড়ে অনন্তকালের তরে নতুন আসনে বসতে খুব বেশি দ্রুত পৌঁছে গেলেন!

বিশ সালের ১৫ জুন প্রতিবার ফিরে আসবে, কিন্তু যে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা পৃথিবীময় সেটি একটি অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব এবং লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে কতো স্বপ্ন; বিবর্ণতায় ছেয়ে গেছে কতো ক্যানভাস- সেই কথা ভাবলেই মন শিউরে উঠে। তেমনি এক চিত্রশিল্প আজ বিবর্ণ, চিত্রকর আর কোন রঙ দিয়েই ‘কামরান ভাই’ নামক ভালোবাসার চিত্র রাজপথ থেকে বৈঠকখানা কিংবা কোন বৈঠকি আসরে গেয়ে উঠবেন না ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম।’ না কামরান ভাই আপনি শত্রু নয় বরং পরম মিত্র ছিলেন আপন দলের ও সাধারণ মানুষের। আর এখন মিত্র হয়ে সিলেটের তরুলতা দোলে দোলে বলছে- রাজনীতি দোষের নয় বরং এটি মানুষকে ভালোবাসার সুরম্য অট্টালিকায় রাজপুত্রের আসনে বসায় যদি সেই পথ বেয়ে হেঁটে যেতে পারেন আর ছড়াতে পারেন নিষ্কলুষ প্রেম।

হ্যাঁ কামরান ভাই, আপনি সেটি পেরেছেন। যে কারণে বিএনপি আপনার কট্টর বিরোধী দল হয়েও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী মত পথ সব এক মোহনায় মিলিত হয়ে নতুন স্রোতের রিনিঝিনিতে জানান দিয়ে গাইছে- অনন্ত প্রেমের রাগ ভৈরবী।

একই সময়ে আরও বহু বড় রাজনৈতিক নেতা প্রয়াত হয়েছেন এবং সেই প্রতিক্রিয়া মিশ্র হলেও থামানো যায়নি। যদিও ক্ষোভ অভিমানের সঙ্গে বলা সেই সব অনুভূতির দাসত্ব আমি মানিনি কিন্তু রোধ করতে পারিনি যেমন আমরা সকলে তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়েও দমন করা যায়নি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ। অবাক করা বিষয় দু’জনের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এক, তাই মন সায় দেয় কোন প্লাটফর্ম দোষের নয় বরং অপরাধী কেবল ওই বিচ্ছিন্ন ঘটনার চরিত্র যারা হয়তো আপনার মতো মহানায়ক হতে পারতেন। কে জানে অদৃশ্যের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে সেই মহান রব সবাইকে কবুল করেন না।

হাজার বছরের ঐতিহ্য চিরঞ্জীব হয়ে আছে সিলেটের সম্প্রীতির সংস্কৃতি এবং এই ঐতিহ্যের লালন করে ফেরি করে বেড়িয়েছেন সব শতকে কোনো না কোনো ফেরিওয়ালা যার ধারাবাহিকতায় এ শতকের যে ক’জন নিপুণভাবে আলো ছড়িয়েছেন তার আপাত শেষ আলোর ফেরিওয়ালা ছিলেন আপনি ‘কামরান ভাই'। বলবেন কি কার হাতে রেখে গেছেন সেই পেলব মসৃণ মিষ্টি সরল হাসির সম্প্রীতির পতাকা? হয়তো পেয়ে যাবো আরও কোনো দ্যুতিময় হাতে, কিন্তু সেই হাসি সেই মাধুর্য আর কোথায়! এই হেথা না অন্য কোথা কে জানে! কারণ ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে সিলেটের বিশাল প্রেমময় ক্যানভাস। তাই আপনার প্রস্থানে মন এখন শঙ্কিত, বিশ্বাস রাখতে ভয় হয় পাছে হোঁচট খেয়ে বসি! তবুও সিলেটের আবহমান সংস্কৃতি হতাশ করেনি কখনও, হয়তো এবারও কেউ না কেউ আলোর মিছিলের অগ্রভাগে রেখে যাওয়া পতাকা বুকে ধরে এগিয়ে যাবে। এগিয়ে নেবে, সে-তো ভবিষ্যৎ। কিন্তু আপনি কেমন করে এতো হাসি ছড়াতেন যদি বলে যেতেন! কি যাদুকরী হাসির সঙ্গে আপনার ডান হাত উঠে যেত সালাম জানাতে জনতার প্রতি, হে জনতার কামরান তা ভেবে মন কেনো যে উদাস হয়ে যায় সেকথা কি আপনি শুনছেন!

মনে পড়ে কতো স্মৃতি- কোনটা বলি বা কার কথা কই, তাই নিয়ে ভাবছি। কারণ জাতীয় রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাও আপনাকে টলাতে পারেনি নিজের একান্ত আদর্শ থেকে। এ নিয়ে খোদ নিজের দলেই কতো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, সে কথা রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমে স্পষ্ট, তবুও জনতার কামরান ‘দলকানা’ হয়ে উঠেননি বলেই আজ আমি আমরা, সে, তাহারা সবাই বলছে, কাঁদছে। এটিই আপনার বিজয়। এখানেই আপনি অমর হয়ে গেলেন ‘কামরান ভাই’। আর এই বিজয় পালক কেড়ে নেওয়া যায়না। শুধু এ মিছিলে শরিক হয়ে বলা যায়- হে রাজনীতি এজন্যই বোধহয় তুমি এক নেশা, যার হয়, তার হয়, সব বিলিয়ে শেষে সে-ই জয়ী হয়।

বেশ মনে পড়ছে আমার পিতার মৃত্যুর পর সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে সান্ত্বনা দেওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, অতঃপর কাঁধে হাত রেখে মমতা ভরা কণ্ঠে এমন করে বলা যেন বিশাল এক পাহাড়ের গায়ে হেলান দেবার নির্ভরতা দিয়ে মনকে সারিয়ে তোলা! এই কাঁধে হাত রাখার গল্প যে কতো সিলেটির প্রাণ জুড়িয়ে যেতো সে কথা কি আপনি বুঝতেন কামরান ভাই!!

আচ্ছা কেউ কি বলতে পারেন মেয়র কামরান, চেয়ারম্যান কামরান বা কমিশনার কামরান ভাই- কার অনুষ্ঠান বাদ দিতেন! তিনি কোন দল করেন, বাম ডান না-কি পক্ষ-বিপক্ষ এসব আমলেই নিতেন না। বরং তাঁর উপস্থিতি সরব জানান দিতো তিনি জনতার কামরান।

এই-যে নির্দলীয় ভাবমূর্তি, এটি দিয়েই জিতে নিতেন সব নির্বাচনী ট্রফি কিন্তু প্রকৃতির বিধানেই কি-না জানিনে, না-কি দেশিয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আপনাকে শেষ নির্বাচনী বিজয় উপহার দিতে পারেনি। আপনার প্রিয় সিলেট সিটি করপোরেশন আর তা বিশ্লেষণের আজ মোটেই দরকার নেই এবং জরুরিও নয়।

বরং যে বিজয় আপনি ১৫ জুন মাত্র গতপরশু অর্জন করে চির বিদায় নিলেন, তা সিলেটের মানুষের মনের রাজ সিংহাসনে চিরস্থায়ী হয়ে রইল, ঠিক যেন জনতার কামরান-সম্প্রীতির কামরান, জনতার হৃদয়ে কেঁদে গেলো, দোলে উঠল বনানী। তাতে একটি সুরই মূর্ছিত হলো- এ কান্না সম্প্রীতির ফেরিওয়ালার জন্যে, এ কান্না আমাদের সকলের।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ