প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ২৭ জুন, ২০২০
মৃত্যু অত্যন্ত আনন্দের। "মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান।" মৃত্যু হচ্ছে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন; অথবা নিজের গভীরের নিজে ডুব দেয়া। খোদা কিংবা খুদির সঙ্গে মিলনের সুযোগ এই মৃত্যু। "মিলন হবে কত দিনে; আমার মনের মানুষেরও সনে।"
করোনাকালে তাই মৃত্যু ভয় আমাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না; জীবনের সবচেয়ে আনন্দের যাত্রা হচ্ছে মৃত্যু; তাকে ভয় পাওয়ার আসলে কিছু নেই।
আদিম সভ্যতার পীঠস্থান আফ্রিকায় তাই কেউ মারা গেলে তার শেষকৃত্যে নৃত্যগীতে তাকে আনন্দময় বিদায় জানানো হয়। আধুনিক সভ্যতার পীঠস্থান ইউরোপে মৃত্যুতে সবাই এক জায়গায় হয়; খুশি জলে উদযাপন করে মৃত ব্যক্তির জীবনের ইনিংস। মৃত্যুই উদযাপনের; জীবন বরং অনিশ্চয়তার-স্নায়ুচাপের-দ্বন্দ্ব-সংঘাতের।
যে দক্ষিণ এশিয়ার নরভোজি প্রজাতন্ত্রগুলোতে শাসকগোষ্ঠী গুম-খুন-ক্রসফায়ারে গণতন্ত্রের বিজয় মিছিল করে; সেইখানে মৃত্যুতে এতো আহাজারি কেন; আমি তা কিছুতেই বুঝতে পারিনা।
শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি-ইমরান খানের অঙ্গুলি হেলনে; এই পুতুল নাচের ইতিকথার দাস জীবনের চেয়ে; করোনাভাইরাসে মৃত্যু অনেক গর্বের-আত্মমর্যাদার-আনন্দের। এই সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করলে করোনার জন্য ভালোবাসা জন্মাবে; যে আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়ার দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আপনি ভাবতে পারেন, এই দক্ষিণ এশিয়ার কলতলার তৈরি করা "জীবনের সাফল্যের সংজ্ঞা" অনুযায়ী আপনাকে প্রতিমুহূর্তে চলতে হয়; আপনাকে আপনার মতো থাকতে দেবে কে!
আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে "ফাঁপা বুদ্ধিজীবী" শিক্ষকের কাছে দাসখত লিখে দিতে হবে। অতীতের পাকিস্তান সরকারের দালালি করে হওয়া শিক্ষকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাস আপনার পরীক্ষার ফলাফল। আপনি কী লিখছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; ঐ দালাল শিক্ষকের মন যুগিয়ে চলতে পেরেছেন কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ইরান থেকে এদেশে ভিক্ষা করতে আসা ফইন্নির ঘরের ফইন্নি নিয়াজ আপনার চেয়ে বেশি পছন্দ করে দাস-মনোবৃত্তির আপ্পিকে; যে কিটি পার্টিতে গিয়ে ঘোঁত ঘোঁত করতে পারবে। এই দালাল শিক্ষকের চসারিয় যুগের ইংরেজিতে লেখা ট্র্যাশ দৈনিক তারকা পত্রিকায় ছাপা হলে; আপনাকে গিয়ে বলতে হবে, কী লিখেছেন ম্যাডাম; ভার্জিনিয়া উলফকে ছাড়াইয়া গেলেন। ইরানের ভিক্ষুক যেহেতু, সে আপনাকে হিন্দু সংস্কৃতির বাহক বলে নাকচ করে; ভারতের দালাল বলে আপনার পরীক্ষার ফলাফলকে হত্যা করবে। এরকম ঘৃণ্য শিক্ষক যে সমাজে শিক্ষা দেয়; সেখানে তো জীবনের সম্ভাবনা বিকশিত হয়না।
বাংলাদেশ আমলের দালাল বুদ্ধিজীবীটি চোখে হিন্দু সংস্কৃতির কাজল পরে মুখে শিবসেনার সুপোরি পুরে আপনাকে ইসলামি সংস্কৃতির বাহক বলবে। ওর যে ইতিহাস নিয়ে বানানো ভারতীয় গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ; সেইটাতে সহমত না হলে; তাকে খুশি করতে দাদা বেড়ে বলেছেন না বললে সে; তারায় তারায় রটিয়ে দেবে আপনি পাকিস্তানের দালাল। এই হিন্দু-মুসলমান বলদায়তন সংস্কৃতি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। এইখানে নিজের দুই ইঞ্চি চিন্তা গজফিতায় আপনার চিন্তা দৈর্ঘ্য মেপে বেড়ায় বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিদেশে গিয়ে ডিশ ওয়াশিং ইনজিনিয়ার হওয়া লোকেরা। কৃষক-শ্রমিক-প্রবাসী শ্রমিকের উপার্জনের সাবসিডিতে সরকারি অর্থের অপচয় করে এই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা ডিশ ইঞ্জিনিয়ার দেশের মালিকানা দাবি করে ফেসবুকে, চেতনার চেকপোস্ট হয়ে উঠবে। তার সামনে আপনাকে প্রতিদিন দেশপ্রেম ও চেতনার প্রমাণ দিতে হবে; যেহেতু সে শেখ হাসিনার স্বঘোষিত দালাল।
আপনি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দলের বাইরে গিয়ে "মানুষের জীবন যাপন করতে চাইলে" ধর্মের হেফাজত কারী "হোলিয়ার দ্যান এরাবিয়ান" ছাগলনাইয়ার ফইন্নির ঘরের ফইন্নি আপনাকে কাফের বা নাস্তিক তকমা দিয়ে আপনার কল্লা নামায়ে দেয়ার ঘোষণা দেবে।
আপনাকে এইসব খালেদা জিয়ার দলের ঠগি-শেখ হাসিনার ঠগিদের "গুম"-এর ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে হয়। এও আবার বাঁচা রাজনীতির মিসকিনেরা সৎ মানুষদের চড়াও যেখানে প্রতিদিন। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত বা পাকিস্তানে বসবাস করলে, নরেন্দ্র মোদির ত্রিশূল ক্যাডারেরা কিংবা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাব ইন্সপেক্টর পদের লোক আপনার বাড়ির সামনে চেকপোস্ট বসাবে। কী অলৌকিক চড়ুই; পা দু'খানি ওপরে তুলে ভারত-পাকিস্তানের আকাশ ভেঙ্গে পড়া ঠেকিয়ে রেখেছে যেন।
পৃথিবীর যে কোন দেশের নেতা-নেত্রীর সমালোচনা আপনি করতে পারবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি-ইমরান খানের সমালোচনা করা যাবে না। এমন এক ক্ষমতার ল্যাজ বেরিয়েছে এদের যে, সমালোচনা করলেই আপনাকে কারাগারে প্রেরণ করবে। এরকম দাসজীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে করোনায় মরে যাওয়া অনেক ভালো।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি-ব্যবসা-সেনাবাহিনী-পুলিশ-নিওরাজাকারের ঠগিদের যে উপনিবেশ; এটা হাবিয়াহ দোজখের চেয়েও ভয়ংকর।
ভাবতে পারেন; ঠগিরা চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে সেকেন্ড হোমে প্রাসাদ গড়বে; আর আপনি তার সমালোচনা করলে আপনাকে কারাগারে নিয়ে যাবে ঠগিরা। ভীতির সংস্কৃতির যে ভয়ংকর জনপদ এই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান; যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নীরবতার জীবন-প্রতিবাদহীন জীবন মৃত্যুর চেয়েও অধিক প্রস্থান জীবনের এই কথাকলির আসর থেকে। খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনা মিলে একবিংশ শতকে হত্যা করেছেন আমাদের স্বাধীনতা; বাঁচার অধিকার।
তাই করোনাকে আমি ভালোবাসি। করোনার কাছে মৃত্যু প্রার্থনা করি; হয়তো মানুষ নয়; শালিকের বেশে আমি যেতে চাই আমার বাবার কবরে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য