টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জাকিয়া সুলতানা মুক্তা | ১৪ জুলাই, ২০২০
পূর্বেও হয়তো এর প্রচলন ছিলো, কিন্তু এই ফেসবুকীয় জামানায় মানুষের চাকচিক্যময় জীবনের প্রতি মোহ বেড়েছে বলেই মনে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে যেন স্বাভাবিক যোগাযোগহীনতার হুমকির মাঝে ফেলে দিয়েছে।
এখানে এখন প্রায় প্রতিজনই নিজেদেরকে চিত্রপটে সাজাতে ব্যস্ত বাহ্যিকভাবে সুশ্রী-সুন্দর নায়ক-নায়িকারূপে। নয়তো মেধাহীন শিল্পচর্চাকে (গান, কবিতা, নৃত্য, আড্ডা, সাহিত্যরচনা ইত্যাদি) শিল্পের পর্যায়ে মূল্যায়িত করানোর জন্য, সন্ধান করে পেছন দরজার চাবি; নতুবা দেখা যায় ক্ষমতা ও অর্থ উপার্জনে সাফল্যের চূড়ায় থাকা ব্যক্তিবর্গের সাথে সখ্যের সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে, অনৈতিক উপায়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে মোহময় জীবন পেতে তা উপরের ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে।
এই নীতিহীন চর্চা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক-সামাজিক অবক্ষয় আর মূল্যবোধের চূড়ান্ত ঘাটতির সংশ্রব ঘটেছে। আজকের তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক যোগাযোগে বুঁদ রেখে, নানান চটকদার বিজ্ঞাপনে আবদ্ধ করে রেখে; এক অর্থে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতাকে ধীরে ধীরে হেমলক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দিগভ্রান্ত প্রজন্ম যথাযথভাবে প্রশ্ন তুলতে পারেনি, প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সামাজিক-রাজনৈতিক কোন ধরনেরই কোন অন্যায্য ভূমিকার বিরুদ্ধে। বরং বলি হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের মসনদে বসা লোকগুলোর ঘৃণিত ষড়যন্ত্রের জালে। কখনো এদেরকে জৈবিক তাড়নার লক্ষবস্তু করে, কখনোবা পার্থিব অন্যান্য প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বিভ্রান্ত করা হয়েছে; আর তা করা হয়েছে মূলত অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রতাপশালী হওয়ার বাসনার মুলো ঝুলিয়ে। বিনিময়ে বরং ধুম্রজাল সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীই নিয়েছে নিংড়ে, সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে অকেজো টিস্যুর মতন। অথচ এই ক্ষমতাবানেরা রয়ে গেছে বা থেকে যায় দৃষ্টির আড়ালে, হঠাৎ হঠাৎ প্রকাশিত হয় চুনোপুঁটি সব দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের কর্মকাণ্ড। যদিও আজকাল এই চুনোপুঁটিরাও শত শত কোটি টাকার নিচে দুর্নীতি না করলে আর জাতে ওঠে না। কারণ, দুর্নীতির বাজারের রাঘব-বোয়ালেরা যে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দিয়েও; বহাল তবিয়তে শান-শওকত নিয়ে দেশে ও বিদেশের মাটিতে শেকড় গেঁড়ে রেখেছে। তাদের নিয়ে বলার কোন উপায় নেই, বরং তাদের পক্ষ আছে জনগণের মুখ বন্ধ করে রাখার সর্বপ্রকারের নিকৃষ্ট ব্যবস্থা।
তাই এ কথা স্পষ্ট যে, পদে পদে প্রজন্মকে ভ্রান্তিতে ফেলে লাভ লুটেছে সমাজের সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, মৌলবাদী শক্তি, সর্বোপরি সুবিধা নিয়েছে ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতার পূজারী এবং ক্ষমতার মদদদাতারা। মাঝ থেকে ঘুণে ধরে ক্ষয়ে গেছে সামাজিক সর্বস্তরের, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমস্ত অলিগলির এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সার্বিক শুদ্ধাচার ও শুদ্ধরূপ। সৃষ্টি হয়েছে একেকজনের প্রাণে একেকটা পিশাচরূপী ভয়ানক হায়েনা, বদমাশ লোভী একেকজন ফ্রাংকেস্টাইন!
বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান, মহামারীতে বিপর্যস্ত চারদিক, ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ জাঁকিয়ে বসেছে; কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকায় আছে কিনা, এই জবাবদিহি চাওয়ার মতন সক্ষমতা এখন আর এই প্রজন্মের নেই। উল্টে স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির প্রসার এতটাই সহজ বিস্তারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে সুনামের সাথে দেশের সর্বাধিক ব্যবসা করা ঔষধ বিক্রয়কারী চেইন শপ 'লাজ ফার্মা'ও নকল ঔষধ বিক্রিতে পিছিয়ে নেই! প্রতি পদে পদে এখানে আছে নিরাপত্তাহীনতা, দাম্ভিকতা ও অনৈতিকতার জয়। ঘুষখোর, বিবেকহীন দুর্নীতিবাজ কেবল বড় বড় প্রতিষ্ঠানেই সয়লাব এমনটা নয়; বিদ্যমান সিস্টেমে বাড়ির পাশের চা'য়ের দোকানি থেকে মুটে কুড়ানো শ্রমজীবী মানুষগুলোও আজকাল ধাপ্পাবাজি করা শিখে গেছে।
এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক। এই অক্ষমতার রচয়িতা সামাজিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো। এই অদূরদর্শিতার দায়ভার এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত গবেষক ও শিক্ষকদের, এই বিপর্যয়ের কারিগর আমরা নিজেরাই।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য