আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সরকারের খোলনলচে পালটে দেওয়া হোক

আব্দুল করিম কিম  

বাংলাদেশের বর্তমান ও পূর্ববর্তী সব সরকারের মধ্যে 'ভাবমূর্তি' রক্ষার একটা আপ্রাণ চেষ্টা দেখা যায়, যদিও প্রায় প্রতিটি সরকার শেষতক চরমভাবে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে। বর্তমান সরকারের প্রথম দুই মেয়াদেও ভাবমূর্তি রক্ষার ও উজ্জ্বল করার বালসুলভ প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। ভাবমূর্তি হারানোর ভয়ে থেকে থেকে দুই মেয়াদ কাটিয়ে দিয়ে চলমান বৈশ্বিক প্যান্ডামিককালে ভাবমূর্তির আর ভাব অবশিষ্ট নেই। সব ভাব তলানিতে এসে পৌঁছেছে। সরকার ও সরকারি দল রাষ্ট্র পরিচালনায় নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা করে নিজেদের অতীত গৌরবের মুখে নিজেরাই কালিমা লেপে দিয়েছে। এই কালিমা রাষ্ট্রের শরীরে এমনভাবে লেপ্টে আছে যে, বিরোধীপক্ষকে আলো ফেলে তা দেখিয়ে দিতে হয়নি। নিজেদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা আপনাআপনি জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে।

তৃতীয় মেয়াদে সরকারের মাত্র দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। বাকি তিন বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে ফাঁকা বুলি আওড়ানো বাদ দিতে হবে। কোমর বেঁধে সামনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। আর তা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখনো সম্ভব। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সরকার প্রধান হিসাবে তাঁর কোন বিকল্প নেই। শুধু অযোগ্য ও ব্যর্থ মন্ত্রী এবং দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিদায় দিতে হবে। প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও সৎ নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার পাশাপাশি সৎ ও যোগ্য আমলাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে যুক্ত করে দেশব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে লাগামহীন দুর্নীতি হচ্ছে। এই দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত টিআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে ওঠে আসে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৯-এ বাংলাদেশের মাত্র এক ধাপ উন্নতি ঘটেছিল। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৬তম। কিন্তু ২০২০ সালে দেশব্যাপী দুর্নীতির যে চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে তাতে এ বছর ব্যাপক অবনতি হবে নির্দ্বিধায় বলা যায়। দুর্নীতি ছাড়াও অন্যান্য সূচক- যেমন কর্মসংস্থান, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচার; শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের নিম্নমান বিবেচনা যদি করি, তাহলে আমরা গর্ববোধ করতে পারি না। তার ওপর পরিবেশের অবক্ষয়, অসুস্থ ব্যাংকিং খাত এবং দুর্বল পুঁজিবাজার তো রয়েছেই।

সর্বশেষ ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) আইনের শাসন সূচক প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সূচকেও বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। এক বছর আগেও বাংলাদেশ ১২৬টি দেশের মধ্যে ছিল ১১২তম। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী যত সূচকই প্রকাশ পেয়েছে তা আইনের শাসনই হোক কিংবা গণতন্ত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা- সব র‍্যাঙ্কিং-এ বাংলাদেশের খারাপ অবস্থা প্রকাশ পাচ্ছে। বিশ্বের 'ওয়াচডগ'রা স্বতন্ত্র নজরদারির মাধ্যমে আমাদের ভেতরবাড়ির খবর তুলে ধরছে। যার সত্যতা এদেশের মানুষকে মেনে নিতে হচ্ছে বাস্তবতার নিরিখে।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সংবাদ ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবেশন করা হয়। যে সব সূচকে দেশ এগিয়েছে দাবি করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিনিয়ত সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের তুলনা দেন সে সব সূচক গণমানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেনা। ইহাই সত্য, ইহাই বাস্তবতা।

চলমান বৈশ্বিক সংকট কোভিড-১৯ কালে পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সেই মন্দা কীভাবে কাটাবে সে সব নিয়ে আলোচনা দূরে থাক মানুষকে সংকট সম্পর্কে রাষ্ট্র কোন ধারণাই দিতে পারছেনা। মহামারি মোকাবেলায় উন্নত বিশ্ব তাদের বড় বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকা সত্বেও যখন অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে আমরা তখন ছেঁড়া কাঁথায় শুইয়ে মানুষকে লাখ টাকার গল্প শোনাচ্ছি। বাস্তব পরিস্থিতি প্রকাশ না করে মানুষকে আশ্বাস দিয়েছি 'সব কুছ ঠিক হ্যাঁয়' বলে। নিজেদের দীনতা জানান দিয়ে যেখানে মানুষকে সাবধান করা উচিৎ ছিল, সেখানে সরকারের মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ নিয়ে মস্করা করেছেন। কেউ বলেছেন, করোনা সাধারণ সর্দি জ্বরের মত; আবার কেউ বলেছেন, করোনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না, আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী।

সীমিত সম্পদ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে মহামারি মোকাবেলায় সম্মুখ যোদ্ধাদের যেখানে সর্বাত্মক সহায়তা করার কথা ছিল, সেখানেও স্বাস্থ্য বিভাগের পোষা সরবরাহকারীরা ভেজাল স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে চরম অপকর্ম করেছে। দীর্ঘদিন ধরে লাগামহীন দুর্নীতি করে ফুলে ফেঁপে ওঠা স্বাস্থ্য বিভাগের অসাধু চক্র করোনা যুদ্ধে রাজাকার- আলবদরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ করিম-এই রাজাকারদের অন্যতম কমান্ডার। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে এধরনের আরও অসংখ্য সাহেদ করিমের অস্তিত্ব রয়েছে। কেউ গণিমতের মাল হিসাবে লুটছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে, কেউ শিল্প মন্ত্রণালয়ে, কেউ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে, কেউ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে, কেউ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। গণমাধ্যমের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও সংবাদ মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বাণিজ্যের খবর ফাঁকফোকরে চলে আসে। এই সব বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েই দেশকে আজ খাদের প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কোনভাবেই সুখকর নয়।

শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ বলে পরিচিত আঠারো কোটি মানুষের বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে- এই দেশের মানুষ ক্ষেপে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। সদ্য অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে টালবাহানার অভিযোগে হঠাৎ করে মানুষ ক্ষেপে গিয়ে দেশ অচল করে দিয়েছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ক্ষেপে যাওয়া কিশোর-তরুণেরা বেশ কিছুদিন দেশকে থমকে দিয়েছিল। অতীতের দুটি ঘটনা সামাল দেয়া গেলেও ভবিষ্যতে তা সামাল দেয়া নাও যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি মানুষের সহ্যের মধ্যে রাখতে এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এই উদ্যোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে। ঘটে যাওয়া অন্যায় ও অনাচার অস্বীকার না করে আসল অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন প্রয়োজন।

আব্দুল করিম কিম, সমন্বয়ক, সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি রক্ষা পরিষদ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ