প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ৩১ জুলাই, ২০২০
ঈদের আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা চিকিৎসকদের 'ঈদ মোবারক' না জানালেও 'বাঁশ মোবারক' জানাতে মোটেও কার্পণ্য করেনি! বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ হতে স্বাস্থ্যসচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নতুন একটি নিয়ম-নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনের জন্য সকল বেসরকারি হোটেল মোটেল বাদ দিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বাংলোগুলোকে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হয়তো সরকারি ব্যয় সংকোচন ও রাষ্ট্রীয় সাশ্রয়ের জন্য এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনার জন্য কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আমরা চিকিৎসকরাও অপ্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়িয়ে পাঁচতারকা হোটেলে থাকতে চাই না, মোটামুটি মানসম্মত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্বাভাবিক খাবারদাবার পেলেই আমরা খুশি। কিন্তু এই পরিপত্রের যে বিষয়টি আমাদেরকে যারপরনাই ব্যথিত ও হতাশ এবং একইসাথে ক্ষুব্ধ করেছে সেটি হলো- নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা মাসের ১৫দিন টানা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ডিউটি করবেন এবং বাকি ১৫ দিন সঙ্গনিরোধ ছুটিতে (!) বা আইসোলেশনে থাকবেন! স্বাস্থ্যকর্মীরা শুধুমাত্র মাসের যে ১৫ দিন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেবেন শুধুমাত্র সেই ১৫ দিন আবাসিক সুবিধা পাবেন এবং বাকি যে ১৫ দিন তারা আইসোলেশনে থাকবেন সেই ১৫ দিন তারা কোনরকম আবাসন সুবিধা পাবেন না!
তারমানে ঐ ১৫ দিন তাদেরকে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতে হবে!
করোনার মতো এরকম একটি অতি উচ্চমাত্রার সংক্রামক রোগীদের সেবা দিয়ে করোনার প্রায় শতভাগ ঝুঁকি নিয়ে কোনরকম কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন সুবিধা ছাড়াই তাদেরকে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতে হবে! বাসায় গিয়ে নিজের বৃদ্ধ মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলতে হবে!
বাইরে থেকে চিকিৎসকদেরকে যতোটা সচ্ছল ও ধনী মনে হয় সেটা শুধু হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য! মোটেও সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ঢাকা শহরে অবস্থানরত সকল চিকিৎসকের নিজস্ব ফ্ল্যাট বা বাড়ি নেই। তাদের অধিকাংশই ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তারা যেসব বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেইসব বাড়িওয়ালারা নিশ্চিতভাবেই করোনা হাসপাতালে টানা ১৫ দিন ডিউটি করার পর তাদেরকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না! তখন তারা কোথায় যাবেন? বা বাড়িওয়ালা ঢুকতে দিলেও সবার ভাড়া বাসাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক রুমও নেই সুতরাং তারা কোথায় আইসোলেশন করবেন?
তাছাড়া যেসব চিকিৎসকরা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে সেবা দিচ্ছেন তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বয়সে নবীন এবং তারা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে মেসে থাকেন তারা কীভাবে আইসোলেশন পালন করবেন!?
নিজের প্রয়োজনে নয়, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে কেন এমন মারাত্মক ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে যা অতিসহজেই এড়ানো যেতো?
.যে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের ব্যয় সংকোচনের জন্য এমন নিষ্ঠুর পরিপত্র জারি করেছে সেই মন্ত্রণালয়েই যখন আবজাল-মিঠু-সাহেদ আর জেকেজিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেপুটে খায় তখন তাদের ব্যয় সংকোচনের চিন্তা কোথায় থাকে? যে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের ব্যয় সংকোচনের জন্য এমন অমানবিক পরিপত্র জারি করেছে সেই মন্ত্রণালয়েই যখন মাত্র এক একটি পর্দা দেড়লাখ টাকায় কিনে রাষ্ট্রকে সর্বস্বান্ত করার প্রয়াস চালানো হয় তখন তাদের ব্যয় সংকোচনের চিন্তা কোথায় থাকে? যে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের ব্যয় সংকোচনের জন্য এমন অবিবেচক পরিপত্র জারি করেছে সেই মন্ত্রণালয়েই যখন একটি মাত্র মোবাইল অ্যাপ পৌনে পাঁচ কোটি টাকায় কেনা হয় তখন তাদের ব্যয় সংকোচনের চিন্তা কোথায় থাকে? যে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের ব্যয় সংকোচনের জন্য এমন হীন পরিপত্র জারি করেছে সেই মন্ত্রণালয়ই যখন কোনরকম স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বুঝে না পেয়েও নাম-ঠিকানাবিহীন ঠিকাদারকে ৯ কোটি টাকা তুলে দেয় তখন তাদের ব্যয় সংকোচনের চিন্তা কোথায় থাকে? যে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের ব্যয় সংকোচনের জন্য এমন গর্হিত পরিপত্র জারি করেছে সেই মন্ত্রণালয়ই যখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে হাজার হাজার কোটি টাকায় অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে বছরের পর বছর বাক্সবন্দি করে ফেলে রেখে রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায় তখন তাদের ব্যয় সংকোচনের চিন্তা কোথায় থাকে?
যিনি পরিপত্রটিতে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে পাইক-পেয়াদা-প্রহরী-ড্রাইভার-বাবুর্চি রেখে তাদের মতো বিলাসী জীবনের সুবিধা না হলেও আমাদের চলবে। রাষ্ট্রের ব্যয় সাশ্রয়ে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে বদ্ধপরিকর। আমরা কোন পাঁচতারকা হোটেল-মোটেল চাই না, সরকারি ব্যয় কমিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বাংলোতেই মানসম্মত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশেই রাখা হোক, আইসোলেশনের পুরোটা সময়জুড়ে সরকার থেকেই আবাসন সুবিধা দেওয়া হোক। আমাদের পরিবার মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানকে করোনার ঝুঁকিমুক্ত রাখার সুযোগ দেওয়া হোক।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য