আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ধৃষ্টতা ক্ষমা কর জাতির পিতা

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী  

বছর ঘুরে আবার এসেছে জাতির পিতা এবং তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী বঙ্গমাতাসহ অন্যান্য আত্মীয়, পরিবার-পরিজন, যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে মর্মান্তিকভাবে ঘাতকদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন সেদিন অর্থাৎ তাদের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু এদেশের মাটি, মানুষ এবং সমাজকে ভালবেসে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্য জাতির জনকের কাছে আমাদের নিবেদন, ‘হে ধৃষ্টতা ক্ষমা কর জাতির পিতা।’ আমাদের মধ্যে অতি উচ্চাভিলাষী কিছু মানুষ আপনার স্নেহ, ভালবাসা, কর্ম উদ্যমকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। বরং মিথ্যার বেসাতিতে ভর করে জিয়া-মোশতাক-চাষী যে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করেছিল, তারা স্বীয় স্বার্থে আপনাকে, আপনার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য-সদস্যাকে নির্বিচারে, নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

এ যে ক্রূরতা, এ যে নিষ্ঠুরতা, এ যে বর্বরতা-এ পাশবিক অন্যায়-তার প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল আরও গভীরভাবে। দু’হাত ভরে দেশের মানুষের জন্য মেধা-মনন এবং ধীশক্তি দিয়ে কাজ করেছেন আপনি। কৃষকের পাশে থাকতে চেয়েছেন, তাদের মঙ্গল করতে চেয়েছেন। শিল্পায়নের জন্য সে সময় পশ্চিমাদের রেখে যাওয়া কল-কারখানা-বীমা-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরকারিকরণ করলেও বেসরকারি খাতের বিকাশ সাধনে আপনার নিরলস প্রয়াস ছিল। দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুর উৎসাহের কমতি ছিল না। দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে তার প্রথম জাতীয় বাজেটে দিকনির্দেশনা ছিল। আবার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তিনি কর্মমুখী প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিলেন। তার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি বাঙালির উন্নয়নের সোপান ছিল।

অবাক লাগে, যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন মোট জাতীয় উৎপাদনের হারের প্রবৃদ্ধি কত স্বল্প ছিল! যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ-চতুর্দিকে নাই-নাই রব। কিছু মানুষের মধ্যে তখনও এখনকার মতো কতিপয়ের ক্ষেত্রে লোভ-লালসা ভর করেছিল। সে অবস্থায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন একটি সুশৃঙ্খলিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। আর চক্রান্তকারীরা অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন। জাতির পিতা কখনও ভাবেননি, যাদের তিনি ভালবেসেছেন তাদের মধ্যে কতিপয় এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন। শিল্পায়নের জন্য তিনি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও শিল্প ঋণ সংস্থাকে কাজে লাগান। রাস্তাঘাট, কালভার্ট সবই তো পাকিস্তান বাহিনী ও তার স্থানীয় দোসররা ভেঙেচুরে ধ্বংসস্তূপ করে দিয়েছিল। রাতারাতি আবার মূল সড়কগুলো ঠিক করাই চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অভিধানে চ্যালেঞ্জ বলে কোন শব্দ ছিল না। সে জন্যই যা কিছু চ্যালেঞ্জ তাকে বাস্তবের আলোকধারায় বাস্তবায়নে তিনি কঠোর থেকে কঠোরতম পরিশ্রমে লিপ্ত হোন।

বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমঘন শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হোন। তিনি দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে অর্থায়ন করেন। আবার তিনি যুদ্ধাহতদের সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধুর সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, উৎসাহ-উদ্দীপনা, মানুষের মধ্যে স্বাবলম্বী এবং আত্মোপলব্ধি জোরদার করার প্রয়াস, সেটি ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ভালবাসতেন বলেই তাদের সব বকেয়া খাজনা ও সুদ ১৯৭২ সালেই মওকুফ করে দেন। এমনকি পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনাও মওকুফ করে দেন।

বঙ্গবন্ধু কত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ খাদ্য দুটোরই সমার্থক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কৃষিপণ্য উৎপাদন, কৃষি শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। পুষ্টি যাতে সংরক্ষিত হয়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত পারঙ্গমতার সঙ্গে বৈশ্বিক মন্দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্ভিক্ষ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে স্বল্পকালের মধ্যেই মোকাবেলা করে কেউ যাতে না খেয়ে মরে সে জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। দিবারাত্রি পরিশ্রম করে সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। অথচ অন্ধকার কেটে যখন দেশ আবার আলোর দিকে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে সমাজ, রাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, চক্রান্তকারীরা তখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশকে হত্যা করেছে। অমিত লোভ ওই শ্রেণিটিকে স্বৈরাচারী করে তোলে।

দীর্ঘ একুশ বছর তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছিল। অন্যায়-অত্যাচার-কুকর্মকে তারা দিনরাত এক করে ফেলেছে। তাদের অত্যাচার-উৎপীড়ন এদেশের মানুষের ওপর বঙ্গবন্ধু পরবর্তী একুশ বছর পাকিস্তানি শোষকের পরিবর্তে এদেশের শোষকের উৎপীড়নের উত্থান ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু আজীবন জনগণের ওপর দেশ এবং প্রশাসন যন্ত্রের মিথ্যা অপবাদ এবং উৎপীড়নকে সকল সময় ঘৃণার চোখে দেখতেন। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু বার বার বলতেন যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করেন। সমাজের একাংশ কালোবাজারি, মুনাফাখোর ও মজুদদার হিসেবে পরিচিতি পায়।

পঁচাত্তর পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, মনুষ্যত্ববোধ, দুর্বিনীতিবোধ ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হতে থাকে। হঠাৎ করে একটি শ্রেণির কাছে অর্থ-বিত্ত-বৈভবে সম্পদশালী হওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়। সংবিধানসহ বিভিন্ন স্তরে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিলুপ্তি ঘটানোর অপপ্রয়াস নেয়া হয়। যারা আগে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যার বেসাতি করত, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার দম্ভ পেয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তাদের হুকুমের তাঁবেদার হিসেবে মনে করল। যে বঙ্গবন্ধু তার আমলে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু নিয়মনীতির প্রচলন করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, সেই দিন যেন পুরনো হয়ে গেল। জিয়া-এরশাদ-খালেদা-এমনভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করেন যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ন্যায়-নীতি থেকে অনেক দূরে চলে যায়। বঙ্গবন্ধু যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নকে গতিময়তা দিতেন, আমদানি বিকল্পায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, কুমিল্লা বার্ডকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ধারণ করে রেখেছিলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বদাই কাজ করে গেছেন, সেগুলো বদলে বরং কত দ্রুত ধনিকশ্রেণি তৈরি করা যায় তা পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকরা চেষ্টা করেছে। বয়োবৃদ্ধ রাষ্ট্রপতি সাত্তার এরশাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে অপরিমেয় দুর্নীতি রোধে তার স্বল্পকালীন শাসনামলে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ১৭ মে, ১৯৮১। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। নচেৎ জিয়া-এরশাদ যেভাবে সুবিধাবাদী নেতাদের দল থেকে ভাগিয়ে নিজেদের দলে ঢোকাচ্ছিলেন সেটি চলতেই থাকত। অবশ্য এদের মধ্যে কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর মর্মন্তুদ মৃত্যুর পরই মোশতাকের ঘৃণ্য মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে দেয় যে, মানুষ হিসেবে দল বদলকারীদের নীচতা। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যে সাধারণ নির্বাচন হয়, তাতে চক্রান্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হয়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারাই রাষ্ট্র শাসন করেন। তবে ১২ জুন ১৯৯৬ এর নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া আইনানুগভাবে শুরু করেন।

জাতির পিতার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা জ্ঞানে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্যরা দ্রুত চলে যায়, ফারাক্কা চুক্তি হয় এবং ওআইসি ও জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হয়। জাতির পিতা ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ এসেম্বলিতে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু সব সময়ে আইনের শাসনে বিশ্বাস করতেন। তিনি কখনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে বিশ্বাসী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুকন্যাও তার আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু মাঝখানের একুশ বছর যা ঘটে গেছে, তা থেকে উত্তরণ সহজ নয়। ইদানীং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা আর তাদের কর্মহীন রেখে দেয়ার জন্য মাদকের বিষাক্ত ছোবল বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশও কম নয়। ধনবাদী শক্তি মাদকের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। তার বিরূপ প্রভাব এদেশেও পড়ছে। যদি সত্যিকার গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা যেত, তবে এদেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনত। কিন্তু চুনোপুঁটি অথবা যারা বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা অপবাদের শিকার হয় তাদের জন্য দুঃখ লাগে। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ লালন করতেন তাতে ক্ষুধামুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন। সেখানে মানুষ পরিশ্রম করে বড় হবে। বড় হতে হলে পরিশ্রমের সুযোগ দিতে হবে। বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে বাংলার মানুষের মুখে যেন আনন্দ-হাসি-বেদনার কাব্য সততার উদ্রেক হয়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু তার আদর্শে অবিচল ছিলেন।

তরুণ জনগণের মধ্যে যারা ভাল ফল করছে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা দরকার। পাঠ ও পঠনের মধ্যে প্রতিনিয়ত নিজেকে কর্মের মধ্যে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়। তবে মিথ্যা অপবাদ, অসম্মান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলেও হারজিতের চেয়ে লড়াই করার শক্তির যোগানদাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর জীবনে যা কিছু মধুর, আনন্দের, জাতি হিসেবে পুনর্গঠনের এবং আত্মবিকাশ সাধনের কেন্দ্রভূমিতে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার মতো মহান, উদারচেতা, বাঙালিপ্রেমী এবং সর্বোপরি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বকে কত সহজে কতিপয় বাঙালি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তায় নৃশংসভাবে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করল।

বঙ্গবন্ধু যে তাঁর জীবদ্দশায় দেশের জন্য এত কিছু করতে পেরেছিলেন তার পেছনে সব সময়ে চালিকাশক্তি হিসেবে ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি ছিলেন এক মহামানবী। ৮ আগস্ট, ২০২০ পালিত হয় বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর ছেলেমেয়েদের লালনপালন করা, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যখনই কেউ ফাটল ধরাতে চেয়েছে আপোষহীনভাবে সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুকে বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়া, ছাত্রলীগের আদর্শিক নেতা যারা অভাবের টানাপড়েনে সমস্যায় পড়েছেন সংসারের স্বল্প খরচ থেকে অর্থ বাঁচিয়ে তাদের সাহায্য করা, এমনকি আপোষহীনভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময়ে নিজের মৃত্যুর জন্য ভুলেও প্রাণভিক্ষা চাননি। এক অকুতোভয় বাঙালি রমণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে ধরে নিয়ে গেল তখন নিজের দু’পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে মুক্তি সংগ্রামে প্রেরণ করেন।

বাংলা প্রবচন হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে মানিকজোড় হিসেবে অভিহিত করা যায়। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন যে, আমার মা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়ে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গমাতা বলেছিলেন যে, জনগণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আছে। কাজেই তিনি যেন প্যারোলে মুক্তি না নেন। আবার সত্তরের নির্বাচনের প্রসঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের নেতৃত্ব কে দেবে সেটি সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে- এ বক্তব্যের সঙ্গে বঙ্গমাতা সহমত পোষণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর যে আত্মজীবনীসমূহ বর্তমানে গ্রন্থ হিসেবে পাচ্ছি, সেগুলো লেখানোর পেছনে বঙ্গমাতার ভূমিকাই মূলত প্রধান।

বঙ্গমাতা আমাদের স্বাধীনতার সূর্যকে উদ্ভাসিত করতে নিজেকে সর্বদা উন্মুখ করে রেখেছিলেন। এ কারণেই বঙ্গমাতা বাঙালি মুক্তি সংগ্রামের ক্ষেত্রে এক অনন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ছিলেন একে অন্যের পরিপূরক। বঙ্গমাতার জীবনটিও বঙ্গবন্ধুর মতোই এক ট্র্যাজিক উদ্ভাসে পরিপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে একটি বর্বরোচিত ঘটনা। যারা এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল, তাদের অনেকেই কেবল দেশে বিভিন্ন ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হননি, অনেকে আবার বিদেশেও কূটনৈতিক পদমর্যাদায় পদস্থ হয়েছিলেন। আসলে যারা বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করল, তাদের একুশ বছর সময়কাল নানাভাবে শাসকবর্গ পুরস্কৃত করেছিল। আজ বাংলাদেশ আবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। আর্থিক মুক্তির আশায় দেশবাসী উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত। স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষ চায় ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অসত্য ও অন্যায়ের অবসান এবং সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে মুক্তি।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী, ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ই৪কোনমিস্ট; শিক্ষাসংক্রান্ত বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত; আইটি ও উদ্যোক্তা বিশেষজ্ঞ; সাবেক উপাচার্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ