আজ বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

Advertise

মেধাবীরা কেন সাংবাদিকতায় যাবে?

ড. নাদিম মাহমুদ  

কয়েকদিন আগে এক আলাপচারিতায় এক বড় ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই করোনাকালে আমাদের গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম, আপাতত গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন নিয়মিত রাখাই হলো গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় কাজ হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন সবাই নিজের পরিবারকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতে হয়, ঠিক তেমনি এই ক্রান্তিকালে গণমাধ্যমগুলোর পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখাই হলো গণমাধ্যমগুলোর মালিকদের মহান দায়িত্ব। গত কয়েক মাস ধরে, অন্যান্য পেশার চেয়ে সবচেয়ে তুলনামূলক বেশি সংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছে দেশের সংবাদপত্রে।

ফেসবুকে সাংবাদিক শরিফুল হাসান ভাইয়ের পোস্ট দেখে অনেকটা নিশ্চিত ধরে নিলাম দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলো তাদের কর্মীদের এই আপৎকালে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। যে মানুষগুলোর শ্রমে এতো সুনাম, খ্যাতি; যে মানুষগুলো জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সময়টুকু পত্রিকাগুলো গড়ার জন্য মেধা-শ্রম বিকিয়ে দিলো সেই মানুষগুলোকে এই দুর্যোগে চাকরিচ্যুত করা অপ্রত্যাশিত বটে। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর যখন এই খামখেয়ালিপনা, তখন অন্য পত্রিকাগুলো সেই পথ যে অনুসরণ করবে না, তা কি করে বিশ্বাস করি?

এই যে আমরা প্রতিদিন যে বলি, খবরের কাগজগুলো যে অখাদ্য সংবাদ ছাপে, সাংবাদিকতার নীতি তোয়াক্কা করে না, এইসব কেন হয় জানেন? অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যে তলানিতে সেটি কেন জানেন তো?

যে মেধাবী মানুষগুলো আপনাকে সুপাঠ্য সংবাদ এনে দেবে, যে মানুষগুলো নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সংবাদের গভীরের খবরগুলো আপনাকে জানাবে, সেই মানুষগুলো যদি আপনি তাড়িয়ে দেন, সেই মানুষগুলোকে যদি বিপদের সময় পাশে না দাঁড়ান, তাহলে সেই খবরের কাগজগুলো থেকে আমরা কতটা প্রোডাক্টিভ ও সৃজনশীল কাজ পেতে পারি?

সাংবাদিকতায় মেধাবীদের জন্য। যে সাংবাদিক ১০/১৫ হাজার টাকা দিয়ে চাকরি শুরু করলো, তার সহপাঠি অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানে পান ৩০/৪০ হাজার টাকা, যে সাংবাদিক খবর তৈরি করে, সেই সাংবাদিকের খবর পড়ে বিসিএসে বনে যাওয়া বন্ধুটি হয়ে যায় 'স্যার'। এতসব ত্যাগের বিনিময়ে আমরা সাংবাদিকদের জন্য কী করছি? মেধাবীরা এই পেশায় আসছে না বলে যে মুখের ফেনা তুলছি, কই আমরা কি পারছি এইসব মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে?

উল্টো আমরা তাদেরকে এই পথে আসতে নিরুৎসাহিত করছি। যারা আজ সাংবাদিকদের ছাঁটাই করেছেন, আমি কখনোই মনে করি না তাদের সহকর্মীদের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই। মানুষ ব্যবসায় লোকসান খেলে বউয়ের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করে না, সেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা লোকসানের অজুহাতে কর্মী ছাঁটাই করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। পত্রিকা বন্ধ থাকলেও যে ছয় মাস যদি ৩০/৪০ জনকর্মীর বেতন দিতে পারবে না, তা মেনে নেয়ার মত নয়। বরং তারা যে প্রতিবছর জমকালো অনুষ্ঠান করে দেশের গুণীজনকে সম্মাননা দেয়, ট্রাস্টি থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়, সেই অর্থ যদি সাংবাদিকদের বেতনের ব্যবস্থা করা হয়, সেটি দিয়ে অন্তত ছয় মাস বেতন দেওয়া সম্ভব।

কয়েকদিন আগে এক বড়ভাইকে বলতে শুনেছি, সাংবাদিকরা চাকরি যেকোনো সময় থাকবে না জেনেই নাকি সাংবাদিকতায় আসে। বেতন না দিলে নাকি মোড়ে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করবেন। কথাটি হয়তো ওই বড়ভাইয়ের ক্ষেত্রে সত্য, কিন্তু যে সাংবাদিকরা যে বেতনের উপর ভিত্তি করে তাদের পরিবার চালান, তাদের শিশুর জন্য দুধ কেনেন, বাচ্চাদের টিউশন ফি দেন, সেই সাংবাদিকরা হঠাৎ করে চাকরি হারিয়ে নিশ্চয় ঝাল-মুড়ি বিক্রি করতে যাবেন না। কেন যাবে ভাই? ১৫/২০ বছর চাকরি করে, আপনি আমাকে হঠাৎ ঝাল-মুড়ি বিক্রি করতে বলবেন, আর আমি ঝাল-মুড়ি বিক্রি করে সফল হবো? যদি ঝাল-মুড়ি বিক্রি করি, তাহলে এই পেশায় ১৫ বছরের যে শ্রম দিলাম, অভিজ্ঞতা পেলাম, সেইগুলা কি ঝাল মুড়ি বিক্রি করার জন্য?

গণমাধ্যম মালিকদের কাছে অনুরোধ অন্তত এই দুর্যোগকালিন সাংবাদিক ছাঁটাই বন্ধ করুন। পত্রিকার মালিকেরা আর দরিদ্রলোক নয়, লাভ-লোকসানের হিসেব না কষে আপাতত গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত করুন। সেটি করতে না পারলে, ব্যবসায়ী হিসেবে গণমাধ্যম চালানোর কোন অধিকারই আপনাদের নেই। বরং সাংবাদিকরা পত্রিকা চালাক, দেখবেন কোন সাংবাদিক ছাঁটাই হচ্ছে না, বরং বার্ষিক মুনাফার একটি বড় অংশ সাংবাদিক সহকর্মীদের মাঝে বণ্টন করা হচ্ছে।

মানবিক পত্রিকায় অমানবিক মালিক চাই না।

ড. নাদিম মাহমুদ, গবেষক, ক‍্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭২ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৫০ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৮ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. নাদিম মাহমুদ ৩৭ ড. মাহরুফ চৌধুরী ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৫ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৪ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ৩২ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ