প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আরিফ জেবতিক | ০৬ অক্টোবর, ২০২০
‘গ্রেপ্তার চাই’, ‘বিচার চাই’, ‘ক্রসফায়ার চাই’ টাইপের একদিনের আন্দোলন করা সোজা। বিকেলে একটা জমায়েত ডাকলে এর আগে দুপুরেই খবর পাওয়া যায় যে গ্রেপ্তার হয়েছে, রিমান্ড হয়েছে। ডাকার আগেই আন্দোলন সফল। তারপর আর কী হয় কেউ জানে না। সুবর্ণচরের ধর্ষক রুহুল আমিন কেন এক বছরের জামিন পাবে না, সেটা নিয়ে সে পাল্টা শোকজ করায় রাষ্ট্রপক্ষকে।
ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন ঘটনাভিত্তিক করে লাভ কম। এমসি কলেজে ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ এরেস্ট করে ফেলেছে-আন্দোলন শেষ। নোয়াখালীতে ঘটনা ঘটেছে, এরেস্ট করে ফেলেছে-সুতরাং আন্দোলন আর কী নিয়ে হবে!
এইসব বিচ্ছিন্ন আন্দোলন ধর্ষণ কমাতে পারছে না। আজকে এখানে, কালকে ওখানে প্রতিদিন প্রতিরাত ধর্ষণ চলছে, নারী নির্যাতন চলছে। ৩২ দিন পর ভিডিও এলে আলোড়ন হচ্ছে, ভিডিও না এলে নির্যাতিতা নারীকে যে এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে সে আর ফিরতে পারছে না। মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষিত হচ্ছে, গির্জায় পাদ্রি ধর্ষণ করছে,পাহাড়ে প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষিতা হচ্ছে, সত্তর বছরের বৃদ্ধা অজু করতে বেরিয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে!
এখন প্রয়োজন দফাভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন। নারী নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজকে কী কী দায়িত্ব নিতে হবে সেগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন এবং সেই মোতাবেক দীর্ঘ আন্দোলন তৈরি করে অর্জনে বাধ্য করা দরকার। নইলে হাওয়াই মিঠাই আন্দোলনে সমাজ পরিবর্তন হবে না।
আইন সংশোধন
প্রথমেই দাবি করতে হবে আইন পর্যালোচনা করে সংশোধন করা। বিদ্যমান আইন ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে। তাহলে আইনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সেই ধাপগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং আইনে সেই পরিবর্তন আনতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আইনে কী কী সংশোধন দরকার সে বিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবী, পুলিশ প্রশাসন, ভিকটিমদের সাপোর্ট প্রদানে অভিজ্ঞ মানবাধিকার কর্মীবৃন্দের মতামত নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। শুধু আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে ফাঁকা 'সংশোধন করো' দাবিতে ফল হবে না।
বিজ্ঞাপন
নারী নির্যাতন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল
শুধুমাত্র নারী নির্যাতন, যৌন নির্যাতন এসবের দ্রুত বিচারের জন্য প্রতিটি জেলায় ডেডিকেটেড আদালত স্থাপনের দাবি করতে হবে। আমরা অবশ্যই চাই সব অপরাধের দ্রুত বিচার হোক, কিন্তু বাস্তবে হাজার হাজার মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে। তাই আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার রায় পাওয়া গেলে সম্ভাব্য অন্যান্য অপরাধীরাও সতর্ক হবে।
সামাজিক প্রচারণা
নারী মন্ত্রণালয় (এটার নাম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।) এর নাম বদলে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় করতে হবে। এই মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়কে নারী ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচুর কাজ করতে বাধ্য করতে হবে। কেউ নির্যাতিত হলে কীভাবে দ্রুত পুলিশে রিপোর্ট করবে (যেমন ৯৯৯ নম্বর) এগুলোর প্রচার দরকার।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি
শিক্ষা কারিকুলামে নারী অধিকার বিষয়ক বেসিক জ্ঞানকে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নারীরাও যে মানুষ, পাওয়ার স্ট্রাকচারের কারণে যে তাঁদেরকে দমন করার রাজনীতিরই অংশ যৌন হয়রানি, এসবের অন্তত একেবারে বেসিক জ্ঞান একজন কিশোর বা তরুণকে দিতে হবে। সেটা সমাজ বিজ্ঞানের একটা চ্যাপ্টার হলেও সই।
আমি আমার ভাবনাগুলো লিখলাম। নিশ্চয়ই এক্টিভিস্টরা এসব তাঁদের ভাবনায় আনবেন। একটা সার্বজনীন এপ্রোচ দরকার। দাবির তালিকা খুব বড় করার দরকার নেই, কিন্তু দাবি হবে স্পেসিফিক, পরিস্কার, সহজবোধ্য। তারপর শুরু হবে সেই দাবির পক্ষে জনমত গঠন, আন্দোলন। পথ সময় সাপেক্ষ, কিন্তু অর্জন অবশ্যম্ভাবী।
আমি ঘটনাভিত্তিক প্রতিক্রিয়া নির্ভর আন্দোলনের বিপক্ষে নই, কিন্তু একে বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখতেই বেশি ইচ্ছুক। সামগ্রিক পরিবর্তনের একটি দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনই এই দেশে নারী নিপীড়ন বন্ধে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য