প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ১৪ নভেম্বর, ২০২০
ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে বর্তমানের অসাধু সময়ের সাথে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত একটি ঘটনায় চোখ আটকে গেলো। ভালোলাগা আর ভালোবাসায় হৃদয়টা ভরে গেলো, শ্রদ্ধা আর সম্মানে মনটা বিগলিত হয়ে গেলো। ঘটনাটি হলো-
বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির কয়েকজন প্রকৌশলী মিলে কুমিল্লা (উ) পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল হয়ে যাওয়া একটি 'মাইক্রো কন্ট্রোলার বেজড ব্যাটারি চার্জার' নিজেরাই মেরামত করে ফেলেছেন।
না, ঘটনাটি যদি শুধু এটুকুই হতো তাহলে হয়তো এতোটা উচ্ছ্বসিত না হলেও পারতাম! উচ্ছ্বাসের কারণ এই ব্যাটারি চার্জারটি সচল করতে সিঙ্গাপুরের একটি স্বনামধন্য কোম্পানি সার্ভিস চার্জ ছাড়াই শুধু মেরামতি মালামাল ক্রয়ের জন্য দর হেঁকেছিলো সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর আমাদের এই চৌকস প্রকৌশলীরা মাত্র একশত ষাট টাকা খরচ করে বিকল হয়ে যাওয়া এই ব্যাটারি চার্জারটি মেরামত করে ফেলেছেন! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য, এটাই বাস্তব!
সময়টা যখন চলছে যথেচ্ছারে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরূপ আর সীমাহীন লুটপাটের তখন এই ধরনের খবর আমাদেরকে আপ্লুত করে বৈকি। যখন একটা পর্দার দাম দেড় লাখ টাকা, একটা চেয়ারের দাম পঁচানব্বই হাজার টাকা, একটা বালিশের দাম ছয় হাজার টাকা, কিংবা একটা বটির দাম দশ/বিশ হাজার টাকা ধরে রাজকোষ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মচ্ছব চলে তখন এই ধরনের খবর হতাশার মাঝেও আমাদেরকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখায়।
যখন রান্নার ট্রেনিং নিতে কিংবা পুকুর খননের ট্রেনিং নিতে এবং সেই পুকুর ভরাটের ট্রেনিং নিতেও আমাদের সরকারি কর্মকর্তা ও আমলাদেরকে বিদেশে যাওয়া লাগে এবং এইরকম আরও হরেকরকমের ভোজবাজির ট্রেনিংয়ের নামে রাষ্ট্রের গুচ্ছ-গুচ্ছ টাকার অপচয় করা হয় তখন এই ধরনের সংবাদ আমাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সাহস যোগায়।
অতল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির এইসব দেশপ্রেমী প্রকৌশলীদের যারা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই রাষ্ট্রের অন্ধকারে নিমজ্জিত কতিপয় সর্বগ্রাসী লুটেরাদের বিপরীতে আমাদেরকে আলো দেখাচ্ছে আর সাহস যোগাচ্ছে। স্যালুট জানাচ্ছি, সেই প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীকে যিনি তার অধীনস্থ প্রকৌশলীদের এমন দেশপ্রেম ও কর্মনিষ্ঠাকে সাদরে গ্রহণপূর্বক ভূয়সী প্রশংসা করে তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে পত্র দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তার এই 'ধন্যবাদ জ্ঞাপন' অন্যদেরকেও ভালো কাজে উৎসাহ যোগাবে।
কথায় আছে, যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণীর জন্ম হয় হয় না। যদি রাষ্ট্রের প্রতিটা সেক্টরের এইরকম নিভৃতচারী কর্মনিষ্ঠ গুণী ও দেশপ্রেমীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহিত করা হয় আর তৈলবাজ ও স্বার্থবাজ লুটেরাদেরকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে আলো আসবে, আসবেই।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য