আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি এবং কিছু কথা

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ  

যখন 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' ক্ষমতায় ছিলো না তখন ধর্মান্ধ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের আস্ফালন দেখলে মনে মনে একটা আশার প্রদীপ নিবু নিবু করে হলেও জ্বলতো। তখন মনে হতো 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে এরা আর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাবে না, তখন এদের আস্ফালন এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। হায়! সে আশার গুড়েবালি!

আজ প্রায় একযুগ হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা রাষ্ট্রক্ষমতায়। এই এক যুগে অনলাইনে-অফলাইনে মাঠে ময়দানে ধর্মান্ধ মৌলবাদী সংগঠনগুলোর যে দৌরাত্ম্য চলমান রয়েছে তাতে করে মাঝে মাঝে মনে হয় কারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাকি অন্য কেউ? দ্বিধান্বিত হয়ে যাই, এটাই কি স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সেই আওয়ামী লীগ? এটাই কি ধর্মনিরপেক্ষতার সেই আওয়ামী লীগ? এটাই কি অসাম্প্রদায়িকতার সেই আওয়ামী লীগ? আমাদের পূর্বপুরুষেরা আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে কি এই বাংলাদেশের জন্যই লড়েছিলো, এই বাংলাদেশের জন্যই কি তারা অকাতরে তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো? না, মোটেও না!

তখনও পাকি জানোয়ারেরা এই ভূ-খণ্ডের সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে অধর্মের আফিম খাইয়ে বুদ করতে চেয়েছিলো, ধর্মের নামে বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে এই বাংলার ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের ঔপনিবেশিক শোষণ রুজু রাখতে চেয়েছিলো, আমাদের স্বাধীনতা রুখতে চেয়েছিলো! আমাদের পূর্বপুরুষেরা কিন্তু সেদিন ধর্মের নামে তাদের সেইসব শঠতা, ভণ্ডামি আর অধর্মীয় কর্মকাণ্ডের কাছে মাথা নত করেনি। সেদিন আমাদের পূর্বপুরুষেরা দেশ স্বাধীন করে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো এই দেশ ধর্মের নামে শাসিত হবে না, এদেশে ধর্মের নামে কোন অধর্ম চলবে না! অথচ আজ আমরা কী দেখছি?

ধর্মের নামে সেই পুরোনো ধর্মান্ধরাই আবার জাতির পতাকা খামছে ধরতে চাইছে! তারাই আবার আস্ফালন করে বলতে চাইছে, এই দেশটা শুধু তাদেরই। তারা যেভাবে বলবে দেশটাকে সেভাবেই চলতে হবে!ধর্মের নামে তারাই কোরআন পোড়াচ্ছে, ধর্মপ্রাণ নামাজি মানুষকে হত্যা করে পুড়িয়ে মারছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় ভাঙছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে! রাষ্ট্র দেখেও যেন দেখছে না! তারা এগুতে-এগুতে এতদূর পর্যন্ত এসেছে যে আজ তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলারও ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে!

আইরনি হলো, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আহুত বিশেষ সংসদ অধিবেশনে শাহ আহমেদ শফির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব এনেও রক্ষা হলো না, সেই শফি হুজুরের মতো ধর্মাশ্রয়ী সংগঠনের নেতারাই আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানোর মত ধৃষ্টতা দেখালো! আশ্চর্য হলেও সত্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের এই দাবিটি যদি বিএনপি বা জাতীয় পার্টি বা অন্যকোন রাজনৈতিক সংগঠন তুলতো তাহলে রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদী মিছিলের বন্যা বয়ে যেতো! টিভি টকশোগুলোতেও সমালোচনার খই ফুটতো! যেহেতু দাবিটি ধর্মাশ্রয়ী সংগঠনগুলো করেছে তাই সবাই ভয়ে সিটিয়ে আছে! আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীর মুখেই কোন রা শব্দটি নেই! এমনকি টিভি টকশোতেও কোন আওয়াজ নেই।

এই ভয়টাই একদিন সব খেয়ে ফেলবে! এই আপোষকামীতায়ই একদিন সব খেয়ে ফেলবে! তখন বুঝবেন ধর্ম নামের অধর্মী টাইফুন কতোটা ভয়ঙ্কর! এই ভয় আর এই আপোষকামিতাই একদিন দেশটাকে আবার পাকিস্তান বানিয়ে ছাড়বে! তখন বুঝবেন ধর্ম নামের অধর্মী টাইফুন কতোটা ভয়ঙ্কর!

এতোসব উন্নয়ন, এতোসব ব্যাঙ্ক রিজার্ভ কিছুই থাকবে না সেদিন! ধর্ম নামের অধর্মের আফিমে বুদ হয়ে যেমন করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে তেমন করেই একদিন এই সোনার বাংলাও ধ্বংস হয়ে যাবে! সব ধ্বংস হয়ে খা খা বিরান মরুভূমি হয়ে যাবে সেদিন!

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ, সাবেক সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ