প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
একুশ তাপাদার | ১৭ নভেম্বর, ২০২০
পূজার আয়োজনে যোগ দিয়েছেন বলে সাকিব আল হাসানকে ফেসবুক লাইভে হত্যার হুমকি দেন এক যুবক। দা উঁচিয়ে দেওয়া ভয়াবহ এই হুমকির খবর সোমবার দিনভরই ছিল আলোচনায়। কিন্তু সন্ধ্যে বেলা সাকিবের পোস্ট করা ভিডিও আলোচনার মোড় নিয়ে যায় আরেকদিকে। এতে সাম্প্রতিক তাকে নিয়ে হওয়া দুই বিতর্কের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন এক ঘটনায়, আরেক ঘটনায় করেছেন সাফাই। এখানেই তৈরি হয়েছে কিছু প্রশ্ন।
সাকিব ক্ষমা চাইলেন কেন? কারণ তিনি পূজার নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। এটা কি তবে কোন অন্যায়? এই দেশে, এই অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে হিন্দুর উৎসবে মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। পূজা করতে নয়, বন্ধুত্বের টানে। মুসলমানদের উৎসবেও হিন্দু বন্ধুদের অংশগ্রহণ থাকে। সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির এই মূল্যবোধ কি ভুল? সাকিবের ক্ষমা চাওয়া কি উগ্রবাদীদের দাবিতে, নাকি এটা তারই আত্মোপলব্ধি। তিনি কি মনে করেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রাখা অপরাধ?
পূজার আয়োজনে যোগ দেওয়ায় গত তিন চারদিন ধরে ফেসবুকে সাকিবকে বিস্তর গালাগাল দেওয়া হয়েছে। তার নাম ও ছবি বিকৃত করতেও দেখেছি। সাকিবের এই ক্ষমা চাওয়া তাদের এসব উগ্র আচরণকে আরও অনুপ্রাণিত করল।
সাকিব তার ইউটিউবে দেওয়া ভিডিওতে আরেকটি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলা ভালো সাফাই গেয়েছেন। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত যাওয়ার সময় এক ভক্তের সেলফির আবদারে বিরক্ত হয়ে মোবাইল ভেঙে ফেলার অভিযোগ এসেছিল তার বিরুদ্ধে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব ভেঙে একজন গায়ে পড়ে যাওয়ায় তাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাতে ধাক্কা লেগে মোবাইল ভেঙেছে। যদিও সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। যে কারণেই হোক মোবাইল ভেঙেছে সাকিবও স্বীকার করেছেন। সে ঘটনায় কিন্তু তাকে একবারও দুঃখপ্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
আরেকটা প্রশ্ন এখানে প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে পড়ে। সাকিব কি করোনার সময় বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আসলেই সচেতন? তাহলে ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার কয়েকঘণ্টার মধ্যে কোয়ারেন্টিন না মেনে সুপারশপ উদ্বোধনের জনসমাগমে গেলেন কেন? সেদিনও প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে পাওয়া গেছে তাকে। মেটাতে হয়েছে ‘গায়েপড়া’ সব সেলফির আবদার। সাকিব সেদিন বিরক্ত হননি, মোবাইল ভাঙার কারণ হননি।
সাকিবের পুরো ভিডিওতে মূল সুর ছিল একটাই। পূজার সামাজিক আয়োজনে যাওয়ায় ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’ এবং ‘ভুল স্বীকার’। এমন কাজ তিনি আর করবেন না বলেও ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘প্রচার হয়েছে আমি পূজার উদ্বোধন করেছি, যেটি আমি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি হয়তো করব না। তারপরও ওখানে যাওয়াটাই আমার হয়তো ঠিক হয়নি, সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমি মনে করি, আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্যও আমি চেষ্টা করব।’
সাকিব যে পূজার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সেটি উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যিনি নিজেও ব্যক্তি জীবনে একজন মুসলিম। ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৌফিক হাসান। বাংলাদেশেও মুসলিম নেতা নেত্রীরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হন। হিন্দু, খৃষ্টান ধর্মবিশ্বাসী নেতা-নেত্রীদেরও মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় সারা দুনিয়ায়। সেসব ছবি আবার বাংলাদেশে বাহবাও পায়। নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস রেখেই তারা এমন আয়োজনে অংশ হতে পারেন। প্রশ্ন হলো সাকিব যদি পূজা উদ্বোধন করতে যেতেনও, তবেও কি তা অপরাধ হতো?
সাকিব কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেন না এটা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। ক্ষমা চাওয়াটাও তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তার ক্ষমা চাওয়ার ধরণ বলছে, স্রেফ অতিথি হিসেবে পূজার আয়োজনে যোগ দেওয়া কিংবা এর আশপাশ দিয়ে পা মাড়ানো খুব ভুল কাজ হয়ে গেছে। এজন্য তিনি অনুতপ্ত।
এতে কি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না, একদল লোক সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়ে উগ্রতা দেখালে আপাত নিরিহ কাজও ‘ভুল’, বা ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। একজন সেলিব্রেটির এই অবস্থান কি সমাজে ভুল বার্তা দেয় না?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য