আজ বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুদ্ধিবৃত্তির একাল-সেকাল

ড. শামীম আহমেদ  

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের মেধাবী পেশাজীবীরা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ফলশ্রুতিতে তাদের স্মরণে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমরা যদিও অল্প কয়েকজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম শুনে থাকি; বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১ হাজার ২২২জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনন্য ভূমিকার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

১৯৭১ সালে যেসব বুদ্ধিজীবী জীবন দেন তাদের প্রায় সবারই কোন না কোনভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযোগ ছিল। অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক, গবেষক। যারা সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতেন সমাজের নানাক্ষেত্রে। এবং তারা যে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়েই কাজ করেছেন তা নয়, ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় আমাদের বুদ্ধিজীবীদের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি গঠনমূলক, সচেতন ও স্বাধীনতাকামী জাতি তৈরির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের উত্তাল বাংলাদেশ আদতেই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বেশ কয়েকযুগ ধরেই যেন ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

সেই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াতেন তারা কীভাবে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতেন তা বোঝা যায় তাদের প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষোভ দেখলেই। সেই সময়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতেন এমন বিশ-ত্রিশজন শিক্ষকের নাম অবলীলায় যে কেউ বলে দিতে পারবে, আজ ৪৯ বছর পরেও। কারণ এটাই স্বাভাবিক ছিল। এবং সেই কারণেই, ওই মানুষগুলো বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে খাটো করে রাখার যে পাকিস্তানি প্রয়াস, সেটি যে সফল হবে না, তা বাতলে দিয়েছিল তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদররা।

আজকে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ত্রিশজন তো দূরের কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের নাম বলুন যারা দেশকে কোন একটি অঙ্গনে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত এমন শিক্ষক আছেন, যাদের হার্ভার্ড, এমআইটি সাদরে আমন্ত্রণ জানাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য (হয়ত বলছি কারণ আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে)। হয়ত এমন অনেক বোদ্ধা শিক্ষক আছেন যারা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নে, অর্থনীতিতে মৌলিক অবদানও রাখছেন (এখানেও ঘোরতর সন্দেহ আছে)। কিন্তু বুদ্ধিজীবীর বলতে আমরা যা বুঝি, শ্রেণিকক্ষের বাইরে ও ভিতরে সমানভাবে সক্রিয় থেকে রাষ্ট্রে ও সমাজে উচ্চকিত ভূমিকা রাখা, গঠনমূলক, প্রগতিশীল ও নিদর্শনযোগ্য নেতৃত্ব দেয়া ও নেতা গঠন করা, দেশের নানা সময়ে, নানা অঙ্গনে বিপ্লবী চিন্তার প্রসার ঘটানো, এমন কাউকে দেখেন কি?

অজুহাত দেয়া খুব সহজ। সহজেই অনেকেই বলে দিতে পারেন দেশে এখন কথা বলার সুযোগ নাই, কাজ করার সুযোগ নাই, বিপ্লব করার সুযোগ নাই। কিন্তু আমরা ১৯৭১ এ যেসব বুদ্ধিজীবীকে দেখেছি তারা কী পরিস্থিতিতে পাকিস্তান শাসনে যুগের পর যুগ কাজ করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তা কারও অজানা নয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকেও মোকাবেলা করে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। এখনও বাংলাদেশের যেসব সাহিত্য, সংগীত, শিল্প নিয়ে গর্ব করা যায়, তার অনেকগুলোই সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদেরই অবদান।

২০২০ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই পরিষ্কার বোঝা যায় ১৯৭১ এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবেই সফল হয়েছিল। শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়, সারা বাংলাদেশের দিকে তাকানো লাগে না। আজ ১৯৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা যেমন জরুরি, তেমন এটাও জরুরি আমাদের বর্তমান সময়ের অন্তঃসারশূন্য “বুদ্ধিজীবী-সদৃশ” নেতৃত্ব থেকে বের হয়ে দেশকে সঠিক পথে যারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।

ড. শামীম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক-বিজ্ঞান গবেষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ