প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ০৫ এপ্রিল, ২০২১
এদেরকে ‘প্যাথলজিক্যাল লায়ার’ বললেও বোধ করি শব্দটির অপমান করা হয়। এরা একেকজন এর চেয়েও ভয়ঙ্কর মিথ্যাবাদী। নাকে মুখে ও চোখে এরা অবিরত অবলীলায় মিথ্যা বলে যায় অবিকল সত্যের মত করে! হিটলারের প্রচারমন্ত্রী পল গয়েবলসও এদের কাছে হার মেনে যায় বারবার! একটা মিথ্যা হাজারবার বলতে বলতে এরা এই মিথ্যাটাকেই এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় যে তখন এরা নিজেরাই এই মিথ্যাটাকেই সত্য বলে ভাবতে থাকে! এদের চরমতম সৌভাগ্য যে এরা ঠিক এদেরই মতো অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এমনকি শিক্ষিতও কোটি কোটি গোয়ার ফ্যান ফলোয়ার পেয়ে যায় যারা এই মিথ্যাগুলোকেও সত্য হিসেবেই বিশ্বাস করে এবং অন্যদেরকেও বিশ্বাস করাতে বাধ্য করে!
বলছিলাম, হেফাজতের ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও তদীয় সহচর এবং তাদের কোটি ফ্যান ফলোয়ারদের কথা! যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদিকে চাঁদে দেখা কিংবা সাঈদির পক্ষে কাবা শরিফের গিলাফ ধরে সৌদি আলেমদের প্রতিবাদ জানানোর মতো মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পের মতো হাজার হাজার মিথ্যার কথা না হয় বাদই দিলাম। অতি সম্প্রতি নারী কেলেঙ্কারিতে হেফাজতের মামুনুলের জড়িয়ে পড়া এবং তার অব্যবহিত পরে এই ঘটনা নিয়ে তাদের যেরকম মিথ্যাচার আমরা দেখলাম এবং এখনও অবধি দেখছি তা সত্যিই অনেকটা শিল্পের পর্যায়ে, সত্যিই মিথ্যাটাকে এরা এক অনবদ্য শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে বৈকি!
আমরা দেখেছি, গত বৃহস্পতিবারের মামুনুলের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোববার তার সংসদ বক্তৃতায় ব্যাপারটির নিন্দা জানিয়ে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। হাতেনাতে মিথ্যার জারিজুরি ধরা পড়ার পরেও অভিযুক্ত মামুনুল এখনও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবি করে যাচ্ছেন! এখানেও তিনি কোরান হাদিসকে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন! আল্লার কসম খেয়ে নিজেকে সৎ প্রমাণের চেষ্টা করছেন!
কোরান হাদিসকে বর্ম বানিয়ে নিজেকে নিরপরাধী প্রমাণ করার সেই পুরনো ও জনসাধারণ্যের প্রচলিত টেকনিকটি মামুনুল এখনও ব্যবহার করছেন! গ্রামাঞ্চলে আমরা প্রায়ই দেখি মতলববাজ কেউ চুরিচামারি বা নারীঘটিত কোন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ধরা পড়লে সাথে সাথেই পবিত্র কোরান ছুঁয়ে শপথ নিয়ে বলে- 'আমি যদি এই অপরাধ করি তাহলে আল্লাহ এখনই আমার উপর গজব নাজিল করবে!' মহা পরাক্রমশালী সৃষ্টিকর্তা এইসব ভণ্ডদের এই অসদাচরণে হয়তো পাত্তাই দেননা, তাই তাদের উপর সাথে সাথে কোন গজব দেননা (নিশ্চয় পরকালে তাদের জন্য সাজা তৈরি আছে)! আর তাতেই তারা নিজেরা নিজেদেরকে নিরপরাধ প্রমাণ করে নেন! ধর্মান্ধ মানুষগুলোও তাদের এই কূটচালে ধরাশায়ী হয়ে তাদেরকে নিরপরাধ হিসেবে মেনে নেন! প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে মামুনুল এই খেলাটিই খেলেছেন! ধর্মান্ধ ভণ্ড মাতালেরাও মামুনুলের এই খেলায় ধরাশায়ী হয়ে তারই গুণগান গাইছেন! ব্যাপারটা আসলে তেমন কিছুই হতো যদি মামুনুল মিথ্যার আশ্রয় না নিতো!
নিজের স্ত্রীকে নিয়ে শুধু মামুনুল কেন যে কেউ যেকোনো জায়গায় বিনোদন করতে যেতেই পারেন তাতে দোষের কিছু দেখিনা। তাছাড়া মানুষ কখনোই কোথাও বউ নিয়ে ঘুরতে গেলে সাথে কাবিননামা নিয়ে বের হয় না, সুতরাং মামুনুলের কাবিননামা দেখাতে না পারার ব্যাপারটার মাঝেও দোষের কিছু দেখি না। এমনকি সঙ্গে থাকা ওই নারী মামুনুলের বউ না হলেও দোষের কিছু দেখি না যেহেতু দু'জনই তাদের নিজেদের সম্মতিতে সোনারগাঁওয়ের ওই রিসোর্টে বিনোদন করতে গিয়েছিলেন! কিন্তু দোষটা হয় তখনই যখন মামুনুলরা বিভিন্ন ধর্মসভায় ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন আবার নিজেরাই সেই ব্যভিচারে লিপ্ত হন। দোষটা হয় তখনই যখন মামুনুলরা মিথ্যার আশ্রয় নেন!
আমরা দেখলাম ঘটনার শুরু খেকে শেষ পর্যন্ত এমনকি এখন পর্যন্ত মামুনুলরা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন! আমরা দেখলাম হাতেনাতে ধরা খাওয়ার পরপরই ওই পরনারীকে মামুনুল তার নিজের স্ত্রী বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন আবার ছাড়া পাওয়ার পরপরই নিজের বৈধ স্ত্রীকে ফোন করে স্বীকার করলেন তিনি পরিস্থিতির কারণে ওই পরনারীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে আটককারীদের কাছে পরিচয় দিয়েছেন, এতে যেন তিনি (বৈধ স্ত্রী) ভুল না বুঝেন! আবার আমরা দেখলাম মামুনুল যখন বুঝলেন এই ব্যভিচারের অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে ওই পরনারীকে নিজের বৈধ স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ছাড়া তার হাতে আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই তখন পরিবারের সকল সদস্য মিলে আরেক গল্প ফাঁদলেন! ফেসবুকে লাইভ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিথ্যাচার করে বললেন ওই পরনারীকে তিনি দুই বছর আগেই বিয়ে করেছেন!
আরেকটি ফোনালাপে আমরা শুনলাম মামুনুলের বোন মামুনুলের স্ত্রীকে শিখিয়ে দিচ্ছেন কোন মিডিয়া বা কেউ তাকে (বৈধ স্ত্রীকে) ফোন করলে তিনি যেন বলেন যে ওই পরনারীর সাথে মামুনুলের দু'বছর আগেই বিয়ে হয়েছে! যদি সত্যি সত্যি দু'বছর আগে ওই পরনারীর সাথে মামুনুলের বিয়ে হয়েই থাকে তাহলে এখন আবার তাকে (বৈধ স্ত্রীকে) নতুন করে এ কথা বলতে শিখিয়ে দিতে হবে কেন! হায়! ব্যভিচার নিয়েও এইসব ধর্মব্যবসায়ীদের কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার! মামুনুলেরও কি ভাগ্য- তার ভাই-বোনেরাও কিভাবে অবলীলায় তার ব্যভিচারের সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে!
আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয় মামুনুল যে রিসোর্টে ওই পরনারীকে নিয়ে উঠেছিলো সেই রিসোর্টের লেজারে সেই পরনারীকে 'আমিনা তৈয়বা' হিসবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। অথচ ওই নারী জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে ঝর্না হিসবে পরিচয় দিয়েছে! আমরা দেখেছি রিসোর্টে নেকাব পরিয়ে ধর্মীয় লেবাসে ওই পরনারীকে নিয়ে উঠেছিলো মামুনুল! সে ভেবেছিলো নেকাব খুলে নিশ্চয় কেউ দেখতে যাবে না যে এটা কি তার বৈধ স্ত্রী 'আমিনা তৈয়বা' নাকি অন্যকোন পরনারী। একারণেই সে রিসোর্টের লেজারে ওই নেকাবধারী পরনারীকে 'আমিনা তৈয়বা' হিসেবে পরিচয় দিয়েছে!
ঘটনার পর ওই পরনারীর সাথে মামুনুলের আরেকটি ফোনালাপে এই ব্যাপারটি নিয়ে মামুনুলের উদ্বিগ্নতাও লক্ষণীয়। সেই ফোনালাপে আমরা দেখছি মামুনুল বারবার ওই পরনারীর কাছে জানতে চাইছেন, কেউ তার নেকাব খুলেছিলো কি-না কিংবা নেকাব খুলে ছবি তুলেছিলো কি-না!? আমরা জানি, নারী পুলিশের সদস্যরা ওই পরনারীর নেকাব খুলে তার ছবি তুলেছেন, ফলে এখানেও মামুনুলের জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে! এখানেও প্রমাণিত হয়ে গেছে নেকাব বা পর্দার আড়ালে মামুনুলরা কিভাবে ধর্মের নামে অধর্ম করে!
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে ওই পরনারীকে মামুনুল দু'বছর আগেই বিয়ে করেছিলেন তাহলেও সমীকরণ মেলাতে পরছি না, সবকিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছে। জট পাকিয়ে যাচ্ছে আজ প্রকাশিত আরেকটি ফোনালাপে যেখানে দেখা যাচ্ছে দু'বছর আগে মামুনুলের সাথে ওই পরনারীর বিয়ের ব্যাপারে তার (পরনারীর) বাবা বা তার ছেলেরা কিছুই জানতেন না। এখানেও মামুনুল নিজের জালে নিজেই আটকা পড়েছেন কারণ অনলাইনে ইতিপূর্বে মামুনুল একটি ফতোয়া দিয়েছিলেন যেখানে তিনি বলেছেন কোন মেয়ে তার বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সেই বিয়ে অটো বাতিল হয়ে যাবে! ধর্মের নামে মামুনুল যে ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি নিজেই আজ সেই ফতোয়া ভেঙে অধর্ম করে যাচ্ছেন!
এটাই এদের আসল চরিত্র! এরা এমনই ধর্মব্যবসায়ী পরজীবী! এরা নিজেরা ধর্মের কোড অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করেনা কিন্তু অন্যদেরকে সেইভাবে চলার জন্য অবিরত ফতোয়া দিয়ে যায়! এরা এমনই ধর্মব্যবসায়ী পরজীবী! এরা নিজেরা ধর্মের কোড অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করেনা বরং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ধর্মের কোড সাজিয়ে ফতোয়া দেয়! ধর্মকে এরা এমনভাবেই চুষে খাচ্ছে আবার এদের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ তুললে তাদেরকেই এরা ‘কাফের’ বনিয়ে দিচ্ছে! এদের এতোটাই স্পর্ধা যে এরা এমনও বলছে যে এদের এই লাম্পট্যের বিরুদ্ধে কথা বললেও সেটা নাকি ইসলামের বিরুদ্ধেই কথা বলা!
কি আশ্চর্য এদের ধর্মাচার; কি আজব এদের ফ্যান ফলোয়ার!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য