প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ১২ এপ্রিল, ২০২১
করোনাতে গত ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবী ছেড়েছেন দেশের ৮৩ জন এবং সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার জন! চলছে মৃদু লকডাউন, আসছে কঠোর লকডাউন!
প্রিয় পাঠক, আপনাদের নিশ্চয় রবী ঠাকুরের জুতা আবিস্কার কবিতার গল্পটি জানা আছে। সেখানে আমরা দেখেছিলাম রাজা হবুচন্দ্র তার গবুচন্দ্র মন্ত্রীকে বলেছিলেন- ধরণীতে চরণ ফেলা মাত্র কেন মলিন ধুলা পায়ে লাগে! জগৎ থেকে ধুলা দূর করো। রাজার এই আদেশে মন্ত্রী-সান্ত্রীরা বসে সিদ্ধান্ত নিলেন সারা রাজ্য ঝাড়ু দিয়ে ময়লা দূর করা হবে। শুরু হলো রাজ্যব্যাপী ঝাড়ু দেওয়া কর্মসূচি। তখন ধুলায় রাজ্যের পুরো আকাশ বাতাস ছেয়ে গেল। সবার নাক বন্ধ, চোখ বন্ধ, সর্দি-কাশিতে অবস্থা মরি মরি! রাজা তখন বললেন, ‘করিতে ধুলা দূর, জগৎ হলো ধুলায় ভরপুর।’ মন্ত্রী-সান্ত্রীরা আবারও বসলেন। এবার সিদ্ধান্ত হলো পানি ঢেলে জল সেঁচে রাজ্যের সমস্ত ধুলা দূর করা হবে। যেই কথা সেই কাজ। পানি সেঁচতে সেঁচতে সমস্ত নদীনালা শুকিয়ে গেলো, সকল জলজ প্রাণী মারা গেলো আর মাঠ ঘাট রাস্তা বাজার জলে-কাদায় তলিয়ে গেল! রাজা বললেন, 'এমনি সব গাধা, ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা।' মন্ত্রীরা সবাই আবার বসলেন। এবার সিদ্ধান্ত হলো, চামড়া দিয়ে পুরো রাজ্যটাই ঢেকে দেওয়া হবে। চর্মকারদের ডাকা হলো। চর্মকারপ্রধান ভয়ে ভয়ে বললেন- পুরো রাজ্য চামড়া দিয়ে ঢাকবেন, এত চামড়া কোথায় পাবেন? আর চামড়া দিয়ে সব মাটি ঢেকে ফেললে ফসলই-বা ফলবে কোথায়? তার চেয়ে একটা কাজ করুন। আসেন, রাজামশাই, আপনার পা দুটোই চামড়া দিয়ে ঢেকে দিই। তাহলেই আর আপনার পায়ে ধুলা লাগবে না।
যে কথাটি বলার জন্য এই গল্পের অবতারণা এবার আসুন সেই কথাটিই বলি- আমরা দেখলাম করোনার ভয়ঙ্কর থাবা থেকে মুক্তি পেতে এবং করোনার বিস্তার রোধ করতে বা লাগাম টানতে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হলো আবার বলা হলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন ঘুরবে, অর্ধেক লোকবল নিয়ে অফিস আদালত চলবে! জানিনা এটা কেমন লকডাউন! পরদিনই দেখা গেল অফিসগামী লাখ লাখ যাত্রীর সে কি ভোগান্তি! অফিস পুরোটা খোলা রেখে অর্ধেক যানবাহন বন্ধ করায় কুমড়ো ঠাসাঠাসি করে করোনা পকেটে ভরে তারা পিকাপ কিংবা সিএনজি কিংবা সামনে যা পেলো তাই নিয়েই নিয়ে অফিস ছুটলো! পরদিনই আবার ঘোষণা দিয়ে যানবাহন পুরোপুরি খুলে দেওয়া হলো, লক ডাউনের আদেশ কিন্তু তখনও বহাল ছিলো! তার পরদিন আবার দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর দোকানীরা করোনার সাথে গলাগলি করে মিছিল ধরলো, দোকান ব্যবসা খুলে দেওয়ার আবদার করলো! পরদিনই আবার ঘোষণা দিয়ে দোকান ব্যবসা খুলে দেওয়া হলো, লক ডাউনের আদেশ কিন্তু তখনও বহাল ছিলো!
১৪ এপ্রিল থেকে আবারও 'কঠোর' লকডাউনের ঘোষণা এসেছে। বিশ্বের কোথাও লকডাউনের এমন কোন প্রকারভেদ না থাকলেও এখানে আছে! এখানে আছে সীমিত লকডাউন, মৃদু লকডাউন, কঠোর লকডাউন। সামনে নিশ্চয় আমরা আরও কিছু লকডাউনের প্রকারভেদ দেখবো!
যাইহোক, শোনা যাচ্ছে আগত 'কঠোর' লকডাউনের মাঝেও গার্মেন্টস খোলা রাখা হবে, গার্মেন্টস খোলা রাখলে আর্থিক লেনদেনের জন্য কিছু ব্যাংকও খোলা রাখতে হবে, ব্যাংক খোলা রাখলে আরও কতো যে কিছু খোলা রাখতে হবে! এভাবে কি সমাধান হবে?
তারচেয়ে আসুন আমরা জুতা আবিস্কারের মতো কিছু করি! অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, গাড়ি-ঘোড়া-দোকানপাট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব খোলা রেখে শুধু হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি, চিকিৎসক চেম্বার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ সকল প্রকারের চিকিৎসা সেবালয়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করি! মরে-টরে যে ক'জন বাঁচে!
এই মহামারিকালে জীবন ও জীবিকা দু'টোই একসাথে চালানো সম্ভব নয়! জীবন গোল্লায় যাক! আসুন আমরা জীবিকাকেই বেছে নিই!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য