আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পয়লা বৈশাখ, হুজুর, মুখোশ আর আমরা

ড. শামীম আহমেদ  

ছোট থাকতে দেখিনি দেশে পয়লা বৈশাখ নিয়ে কারও কোন আপত্তি। দেশ একদিকে যত উন্নত হলো, প্রগতিশীল হলো, অন্যদিকে ততই মৌলবাদী চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটল। আরেকটা হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া না থাকাতে ঢাকার এত ঢাক ঢোল আগে মৌলবাদীদের কানে পৌঁছাতো না, আবার অন্যদিকে মৌলবাদীদের আস্ফালন প্রগতিশীলদের চোখে পড়ত না। দেশ উন্নত হলো, সোশ্যাল মিডিয়া আসলো। প্রথমে বড়লোক, তারপর শিক্ষিত, তারপর আস্তে আস্তে সবার নাগালে আসলো। যে যেমনে পারে এটারে exploit করল।

২০০৭ থেকে ২০১৬ প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে রমনায় গেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি। গেছি পরিবারের চাহিদা মিটাতে। আমার নিজের এত ঝোল নাই। ছুটির দিন পেলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমানো ভদ্রলোকের কাজ বলে আমি মনে করি। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পাঞ্জাবি পরে, ১ মাইল দূরে গাড়ি পার্ক করে, হেঁটে-হেঁটে ঘামতে ঘামতে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখার মতো বাঙালি আমি কখনই ছিলাম না। কিন্তু পরিবারের চাহিদা ও শখ মিটাতে করেছি এই কাজ।

এক সময় দেখা গেল মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে একটা গোষ্ঠীর ব্যাপক আপত্তি। ওয়াজে হুজুরেরা ব্যাপক গালাগালি করল এই শোভাযাত্রা, বিশেষত মুখোশ নিয়ে। এখন আমার ইসলামী জ্ঞান কম। মুখোশ ইসলামে সার্বিকভাবে নিষিদ্ধ কিনা জানি না। যদি নিষিদ্ধ হয়, তাহলে ফেসবুকও নিষিদ্ধ, টিভিও নিষিদ্ধ। ওয়াজ মাহফিল ইউটিউবে দেওয়াও নিষিদ্ধ- ‘কথা ঠিক কিনা কন না কেন? ঠিক কিনা?’

আচ্ছা, যে হুজুর ইউটিউবে আসে না, টিভিতে আসে না, ফেসবুকে আসে না, সে যদি মুখোশ নিয়ে আপত্তি করে, আমি মনে করি ঠিক আছে, করতে পারে। কিন্তু যারা বাকি সব করে, নিজেরা মাস্ক পরে সরকার পতন করতে চায়, তারা আবার মুখোশ নিয়ে কীসের কথা বলতে আসে?

আমি মোটামুটি সবই হজম করতে পারি। হুজুরদের ওয়াজে আমার তেমন আপত্তি নাই। আমি ইউটিউবে দেখিও মাঝে মাঝে। বর্তমান বাংলাদেশের যেকোন নাটক সিনেমা ৫ মিনিট দেখলে বমি আসে, সেই তুলনায় হুজুরদের ওয়াজ আরামসে দেখা যায় ঘন্টাখানেক। হাসি-ঠাট্টাও থাকে।

অন্যদিকে পয়লা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখোশ আমার খুবই প্রিয়। এসি রুমে বসে কড়া চা পান করতে করতে এগুলা টিভিতে দেখে আমি খুবই আনন্দ পাই। সূর্য ডোবার পর হলে আমি এসব উৎসবে অংশগ্রহণও করতে চাই, শীতকালে হলেও চাই। গরমে আর ঘামে আর সূর্যের আলোতে আমার হালকা সমস্যা থাকায় দিনের বেলায় উচ্চ তাপমাত্রায় ঘরের মধ্যে পর্দা দিয়ে অন্ধকার করে এসিতে বসে থাকতে আমার বেশি ভালো লাগে।

যা বলছিলাম, আমার কথা হচ্ছে যে যার ইচ্ছা যা খুশি করুক যতক্ষণ সেটা অন্যকে আঘাত না করা। যারা আমার মতো ধর্মপ্রাণ- তারা নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, হজ করেন, যাকাত দেন, মানুষের উপকার করেন। কারা মুখোশ পরছে না মুখোশ মিছিল করছে এটা নিয়ে হুদাই জীবন দেন কেন রে ভাই?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিজস্ব উৎসব হচ্ছে এই পয়লা বৈশাখ। ইদ হচ্ছে ধর্মীয় উৎসব। পয়লা জানুয়ারি হচ্ছে একটা বিদেশি উৎসব। পয়লা বৈশাখ আমাদের একান্তই নিজেদের উৎসব। এটা উদযাপন করেন, অন্যকেও করতে দেন। আমি চাই পয়লা বৈশাখের উদযাপন সন্ধ্যা আর রাতেও হোক। রাতের বেলা হারিকেনের আলোয় বাউল উৎসব হোক। আমি আরামসে ঘুরে বেড়াই। হুজুরেরাও আসতে পারেন। ভাই-ভাই আনন্দ করলাম।

এই যে হুজুরদের পহেলা বৈশাখ নিয়ে রাগ, এই রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছেন কখনও? করেন নাই। এক মহিলা বাচ্চা নিয়ে বোরখা পরে ক্রিকেট খেলল, আপনেরা প্রগতিশীলতার মায়রে-বাপ করে তার গোষ্ঠি উদ্ধার করলেন। আপনারাও তো প্রগতিশীল মৌলবাদী। হুজুরদের বলেন, ভাই তোরাও তোদের মতো পয়লা বৈশাখ কর। মুখোশ ভালো না লাগলে মুখোশ ছাড়া কর। পান্তা ভাত খাও। বাদ্য যন্ত্র ছাড়া গান গাও। এগুলা তো ইসলামে নিষিদ্ধ না। মাঝামাঝি আসতে হবে। ইসলামী মৌলবাদ ও প্রগতিশীল মৌলবাদ দুটোই বাদ দিতে হবে।

সবাইকে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা।

ড. শামীম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক-বিজ্ঞান গবেষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ