আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ফেসবুক দর্পণে ‘আমরা’

সঙ্গীতা ইয়াসমিন  

প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত এই বিশ্বে ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এই ঘোরতর তাণ্ডবে, জীবন নদীকে বহতা রাখতে ইন্টারনেট যে আমাদের জীবনে কেবল অতি গুরুত্বপূর্ণই নয়, অনিবার্যও সেকথা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সুতরাং আজকের বিশ্ব ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহূর্তও অচল, একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।

করোনাপূর্ব জীবনেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম ছিল না। ইন্টারনেট সুবিধা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সামাজিক, আর্থ-সামাজিক এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষা-গবেষণায়, ব্যবসায়ে, উদ্ভাবনে কোন ক্ষেত্রে এর ব্যবহারকে আমরা অস্বীকার করতে পারি সেটাই বড় প্রশ্ন। এক কথায় স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, এবং ইন্টারনেট আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই নিয়ন্ত্রণ আমাদের চিন্তা-ভাবনা, শিক্ষা-দীক্ষায়, বুদ্ধিমত্তায়, সুকুমার বৃত্তির বিকাশে, সচেতনতা আনয়নে, বিনোদনে এমনকি আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাপনেও এর প্রভাব অবর্ণনীয়। মোদ্দা কথা ইন্টারনেট আমাদের ধ্যান-জ্ঞান; আমাদের জীবন ও জগতের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। জীবনের পাশাপাশি এই জড়বস্তুটির অস্তিত্ব কোনোভাবেই আজ আর অস্বীকার করতে পারি না আমরা।

প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে যা আমরা সকলেই জানি। তবুও সকল নেতিবাচকতাকে উপেক্ষা করেই সব দেশেই বেড়ে চলেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে প্রথমত এবং প্রধানত হচ্ছে যোগাযোগ। এই যোগাযোগের জন্য একেবারেই একটি অনানুষ্ঠানিক এবং নির্বিবাদে বহুল জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক; যাকে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই চিনি। যদিও ফেসবুক ছাড়া টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম নামে আরও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে, তথাপিও, ফেসবুকের এই জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। এই অ্যাপসের অন্যান্য সুবিধাদির ফলেই দিন দিন এর গ্রাহক সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

২০০৬ থেকে অফিসিয়ালি যাত্রার শুরুর পর থেকে আজ অবধি বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটিরও ওপরে। মূলত কোন শ্রেণির লোকজন ফেসবুক বেশি ব্যবহার করে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, যার হাতে আছে স্মার্ট ফোন, তাঁরই আছে ফেসবুক। ফেসবুকে একাউন্ট না থাকা মানেই এখন একটি স্ট্যাটাসের সামিল। একজন মানুষের স্মার্ট ফোন থাকবে অথচ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর পদচারণা থাকবে না এ তো হতে পারে না। তাহলে তিনি তো অসামাজিক বনে যাবেন(!) কিংবা আর জাতে উঠতে পারলেন না আর কি!

ফেসবুক ব্যবহার ভালো কি মন্দ সেটি বহু পুরাতন বিতর্ক, আমি সে আলোচনায় না গিয়ে বলব একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমাদের মধ্যে প্রায়শই অনেকে এমন কথা বলে থাকি, “ ওহ! ফেসবুকের বন্ধু” “ওহ ফেসবুকে শুনেছ?” কিংবা “ফেসবুক থেকে জেনেছ?” তার মানে ফেসবুক মানেই হচ্ছে একটা ভিত্তিহীন, অসত্য কিছু! এখানে মানুষ সব শো অফ করে, কিংবা মিথ্যে বলে, কিংবা বাড়িয়ে বলে! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেটাই যদি সত্য হয় তবে সেই ফেসবুকের এতো জনপ্রিয়তা কেনো? এর ওপরে এতো আসক্তিই বা কেনো আমাদের? প্রকৃত রহস্যটা তবে কী? আমাদের জাতীয় জীবনে, জাতীয় চরিত্রে আমরা কি আদতেই ফেসবুকের ‘আমরা’ থেকে ভিন্ন কিছু? না কি ফেসবুকের আয়নায় আমরা নিজেদেরই দেখি প্রতিনিয়ত? যা আমরা করি, কথায়, কাজে, চিন্তায় যা আমরা ধারণ করি ফেসবুকে তাইই প্রকাশ করি। এক কথায় ফেসবুক আমাদের চরিত্রেরই আয়না! এই ফেসবুকের আয়নায় আমরা তো আমাদের ছাড়া ভিন্ন কিছু দেখি না!

ব্যক্তিগতভাবে আমি ফেসবুক ব্যবহার করি ২০০৭ থেকেই। দেশি-বিদেশি হরেক রকম মানুষজনের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে, সখ্য হয়েছে, বন্ধুত্বও হয়েছে। অনেকেই যুক্ত আছেন দীর্ঘ সময় ধরে, আবার অনেককে নিজেই বিযুক্ত করেছি, সময় আর প্রয়োজনই সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ফেসবুক আমার কাছেও এক অশরীরী আত্মা। একদিনও ফেসবুকবিহীন জীবন কল্পনা করতে পারি না। হয়তো এটা এক ধরনের আসক্তিও আমার। তবুও বলি, একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই ফেসবুকীয় সংস্কৃতিকে আদতেই অসত্য, কিংবা ভিত্তিহীন, কিংবা কৃত্রিম কোনো কিছু মনে করি না। বরঞ্চ আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ফেসবুকে আমরা প্রতিদিন তাইই দেখি, যা আমরা। ফেসবুকে আমরা সেসব কর্মকাণ্ডের সাথেই পরিচিত হই, যা আমাদের জীবনে বাস্তবে ঘটে। ফেসবুক আমাদেরকে তাইই শেখায় যা আমাদের সমাজের মুখোশধারী ভদ্দরলোকেরা, ভণ্ডরা, ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে, জ্ঞান বিতরণের নামে প্রতিনিয়ত শেখায়। আমাদের পরিবার তথা সমাজ জীবনের মধ্যে চলমান যে সংস্কৃতি, আমাদের যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, আমাদের যে বোধ জীবন ও জগতের অন্যান্য বিষয়ে এবং পারস্পারিক সম্পর্কের যে ধারনা ফেসবুকে তাইই পরিলক্ষিত হয়।

এবার চলুন দেখি কেন এবং কীসের ভিত্তিতে আমি এসব কথা বলছি, তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি। যদিও আমার কাছে এই বিষয়ে কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য নেই, তথাপিও আপনারা আমার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করবেন না বলেই বিশ্বাস করি। কেননা, এটি কোনো রকেট সাইন্স নয়, একটু চোখ, কান খোলা রাখলে সকলেই বুঝতে পারবে সে কথা।


‘কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি’ – এই নেতিবাচক শব্দটি ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম। বস্তুত, বাংলাদেশিদের জীবন কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির চর্চা ছাড়া একেবারেই পানসে। এটা আমরা দারুণ উপভোগ করি। এই ফেসবুকেও তাই প্রতিনিয়ত দেখি।আমি কাউকে অপছন্দ করি, তার মানে হল তাঁর পেছনে এমনভাবে লেগে পড়ব যে নিজেই নিজেকে অনেক নীচে নামিয়ে ফেলেছি কখন সেই হিসেব করি না। প্রয়োজনে সদলবলে আক্রমণ করে, পরিবার-পরিজনকে ট্যাগ দিয়ে, স্ক্রিন শট দিয়ে, সংশ্লিষ্ট ছবি থাকলে তাও প্রকাশ করে এমনভাবে নাস্তানাবুদ করি যাতে করে সেই ব্যক্তি ফেসবুকের এই গণ জমায়েতে আর মুখ দেখাতে না পারেন।

কোনো মানুষই ১০০% ভালো হবেন এমন আশা করাই বাতুলতা। আবার ভালো-মন্দের আপেক্ষিকতাও রয়েছে। ভাল-মন্দের মানদণ্ডে আমি নিজে কতটা শুদ্ধ এমন কোনো স্ট্যান্ডার্ডও আমার কাছে নেই। অথচ, কেউ যদি আমার পছন্দমত কোনো কথা না বলেন, তখনই তাঁকে দল বেঁধে আমরা ট্রল করি। প্রকৃত অর্থে, একজন মানুষ তো সামগ্রিক অর্থেই মানুষ। মানুষকে মূল্যায়ন করতে হয় তাঁর সামগ্রিক কর্মকাণ্ড দিয়ে, যেকোনো একটি কাজ, আচরণ কিংবা মতামত দিয়ে নয়।


‘দলাদলি-তোষামোদি’-তেলবাজি- এই বিষয়টিও আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমরা সাদাকে সাদা, কিংবা কালোকে কালো বলতে শিখিনি কখনই। যদি আমার কোনো সুবিধালাভ না হয়! কিছু স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়! সেই ভয়ে কেবল সিটিয়েই থাকি না, আমরা সাদায় রঙ লাগিয়ে যা নয় তার দশগুণ করে উপস্থাপনে কোনোরূপ নৈতিক চাপ অনুভব করি না, কেবল আনুকূল্য পাবার লোভে।

ইসলামে যেমন মুরিদ প্রথা ছিল, ফেসবুকেও এখন সেই মুরিদানা জারী আছে। এই মুরিদেরা রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপে নানারূপ দলে দলে বিভক্ত। যারা তাঁদের হুজুর-হাজরাইনের পেছনে পেছনে আল্লাহু-আকবর বলার জন্যে দলে দলে জান হারাম করে ফেলেন। আমাদের সমাজের রাজনীতির মাঠ এবং ধর্মগুরুদের ধর্মীয় ব্যবসায়ের দিকে দৃষ্টি দিলেই আমরা এই মুরিদানা কার্যক্রম দেখি, যা ফেসবুকেও নিবিড়ভাবে চলমান।


‘চুরি-বাটপারি-জোচ্চুরি’- জাতিগতভাবে এই তালিকাতেও আমাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। ভুয়া সনদপত্র নিয়ে আমরা হাইকোর্টের আইনজীবী, ভুয়া সনদপত্র দিয়ে আমরা ডাক্তার এমন আরও অনেক পেশায় আমাদের জাতিগত এমন সদগুণের পরিচয় আমরা পেয়েছি। ফেসবুকেও এমন ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ভুয়া অসুস্থতা, ভুয়া দরিদ্রতা, ভুয়া আত্মীয় পরিচয়ে আপনাকে ঠকিয়ে নেবার, আপনার কাছ থেকে হাতিয়ে নেবার জন্য সারাক্ষণ পাঁয়তারা চলতে থাকে।

ভুয়া আইডি ফেসবুকের বাজারে বিশাল জনপ্রিয় টপিক। ভুয়া আইডি থেকে ধর্মীয়-রাজনৈতিক নানাবিধ প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যাকে ইচ্ছে তাঁকে প্রশাসনের শ্যেন নজরে ফেলে আমরা আখেরে নিজেদের ফায়দা হাতিয়ে নিতে যে দক্ষ কুশলী সে কথা কে না জানে? চুরির জন্য ফেসবুকের মত উত্তম স্থান আর দ্বিতীয়টি নেই, যেখান থেকে আপনি খুব সমৃদ্ধ গল্পকার, কবি, কিংবা লেখক বনে যেতে পারেন এক লাইনও না লিখে। এখানে সুলভে অনেক লেখা পাওয়া যায়। দরকার মত কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারেন। বেশ ক’বছর আগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের খুবই জনপ্রিয় কবিতা –‘অবনী বাড়ি আছো’ হুবহু তুলে দিয়েছিলেন কেবল ‘নলিনী’ বাড়ি আছো লিখে! সুতরাং আমাদের বাস্তব জীবনের কৃতকর্মের প্রতিচ্ছবি এখানেও দেখিতে পাই বৈকি!


‘শো অফ-শো ডাউন’- বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে শো অফ, শো ডাউন বহুল জনপ্রিয় সংস্কৃতি। নিজেকে জাহির করতে, নিজের সন্তান-সন্ততিকে, কিংবা আত্মীয়-স্বজনকে উচ্চতর মর্যাদায় উন্নীত করতে না পারলে আমার রক্তে যে ‘ব্লু ব্লাড’ বইছে তা আপনি মশায় জানবেন কী করে! সুতরাং আপনাকে বাসায় ডেকে হলেও, দশ পদ রেঁধে হলেও আমার বাড়িতে এনে আমি, আমার সন্তান, আমার পূর্ব পুরুষ এবং আমার অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের সুকীর্তির সংবাদ আপনাকে দেবোই দেব। এর মধ্যে আর্থিক সচ্ছলতা ও চাকরিগত উচ্চ পদমর্যাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক, এর পরে থাকে সন্তান-সন্ততিদের উচ্চতর ফলাফল। তারপরে ব্যবসা-বাণিজ্য, কিংবা বিনিয়োগ। এই ধরুন আমি ক’টা বাড়ির মালিক, আর ক’টা বুকিং দিয়েছি প্লট-ফ্ল্যাট। গাড়ি ক’টা এবং কোন ব্র্যান্ডের এসব তো গালভরা গল্পেরই অন্যতম রসদ। ফেসবুকেও গাড়ি-বাড়ির ছবি আমরা যথারীতি আপলোড করতেই থাকি নির্দ্বিধায়। স্ট্যাটাস বলে কথা।

সন্তানদের জেএসসি, এস এস সি, কিংবা এইচ এস সি পরীক্ষার ফল বের হলে এর সত্যতা খুঁজতে আমাদের বেশিদূর যেতে হয় না। করোনার কারণে অনেকেই কষ্টে আছেন যে, তাঁর ছেলেটি/মেয়েটিই যে অনন্য সেটি প্রমাণে তিনি ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে দিতে পারছেন না ফেসবুক পেজে। সকলেই পাশ করলে আর পার্থক্য রইল কোথায় আশরাফ-আতরাফে? আহা! কী দুর্ভাগ্য আমাদের এই করোনায়! পাবলিক পরীক্ষাগুলো হল না।

শো-অফের খাতায় মুক্তিযুদ্ধও একটি বিশেষ মর্যাদার বিষয়; এতো বেশি মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের উত্তরাধিকারদের দেখা পাই ফেসবুকে, বিশ্বাস করি, সেদিন বাংলার সাতকোটি পরিবারই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল! আমরা কি শুনিনি যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত যে তালিকা তৈরি হয়েছে সেখানে প্রচুর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা ঠাই পেয়েছেন? সুতরাং ফেসবুকের আয়নায়ও আমরা তাইই দেখছি।


‘পরমত অসহিষ্ণুতা’ কিংবা ফিডব্যাক গ্রহণে অনীহা- বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে পরমত সহিষ্ণুতার কোনো জায়গা নেই। আমরা যখন জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেই, কিংবা আরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হই, আমরা নীচের লোকদের কথা আমলেই নিই না। আমিই যখন বিশাল উচ্চে অবস্থান করি, তখন অন্যেরা আমার মোসাহেবি করবে, আমাকে তোষামোদ করবে। কেউ আমার বিরোধিতা করতে পারবে না। করলেই গর্দান কর্তন হবে সুনিশ্চিত। ফেসবুকেও আমরা একই দৃশ্য অবলোকন করি। আমার কোনো বিষয়ে আমার সাথে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের কেউ দ্বিমত করতেই পারেন। আমি দ্বিমতের সাথে একাত্ম না ই হতে পারি, কিন্তু সেই ব্যক্তির মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে তো আপত্তি থাকার কথা নয়! কিন্তু আমরা কী দেখি? আমার পোস্টে আমাকে সমর্থন করা না হলেই তাঁকে আমরা আনফ্রেন্ড কিংবা ব্লকও করে দিই সাথে সাথে। এর মানে আমিই মহারাজা। তোমরা সকলে আমার প্রজা। আর এই শিক্ষা তো আমরা পেয়েছি আমাদের সামাজিক জীবনের চর্চা থেকেই। পরিবারেও আমাদের বড়দের ভুলভাল সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিতে হয়। অফিসে, এমনকি ফেসবুকেও মহারাজ যারা আছেন তাঁরাই সর্বেসর্বা!

সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একাত্ম হতে না পারায় কিংবা সমালোচনা করায় অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারক, কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দিতে হয়েছে অনেক মূল্য সেকথা জানতে সুদূর অতীত নয় নিকট অতীতে চোখ রাখলে সহজেই চক্ষুষ্মান হয়। ফেসবুকে তো ভিন্ন কিছু দেখি না আর।


‘ব্যবসায়িক ফাঁদ’- বাংলাদেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধন, কিংবা জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মধ্যেও যে পরিমাণ ভেজাল, এবং জীবন ধ্বংসকারী উপাদান থাকে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কেবল অন্যকে ঠকিয়ে নিজের মুনাফা বৃদ্ধির এই ধান্ধা বিশ্বের আর কোনো জাতিতে প্রত্যক্ষ করা যায় না সহজে। ব্যবসায়ে অসততাই আমাদের সবচেয়ে বড় মূলধন।একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিও ওজনে কম, খাবারে ভেজাল, মাছে ফরমালিন মেশাবেন; বাইরের লেবেলের সাথে ভেতরের পণ্যের কোনো মিল থাকবে না। কারণ, লোক ঠকিয়ে নিজে বড় হওয়াই আমাদের জাতীয় চরিত্র, দুঃখজনকভাবে এইই আমাদের সামাজিক সার্বিক মূল্যবোধ!
ফেসবুকেও খুব সহজেই ব্যবসায়ের ফাঁদ পাতা যায়। যেমন ফাঁদ পেতে ব্যবসা আমাদের সমাজেও সাদাসিধে মানুষকে বোকা বানিয়ে ডেস্টিনি করেছিল, করেছিল ‘যুবক’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাও। লক্ষ লক্ষ হতদরিদ্র মানুষের কষ্টার্জিত পয়সা লোপাট করে দিয়ে তাঁরা চম্পট। এ জাতীয় ফাঁদ ফেসবুকেও আমরা দেখি প্রতিদিন। ফেসবুকে আইডি হ্যাক করে, বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে, আত্মীয়তা করে, অসহায়ত্ব প্রদর্শন ছাড়াও নানাবিধ পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় সহজে। মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে, পর্দার আড়ালে থেকে চটকদার বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে অনেকেই সেই ফাঁদে পড়ছেন প্রতিদিন। এও তো আমাদের সমাজ জীবনেরই অঙ্গ।


‘প্রেমের ফাঁদ’- প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে কখন কে ফাঁসে কে জানে? ফেসবুক প্রেমের ফাঁদ সকল স্তরের, সকল বয়সের জন্য। ফেসবুকের এই রঙ্গমঞ্চে ইনবক্স হল গ্রিনরুম। এখানে সকল শিল্পীরা মেকআপ নিয়ে বসে থাকেন। যখনই যার প্রয়োজন, যাকে প্রয়োজন এবং যেভাবে প্রয়োজন তাঁকেই পাওয়া যায় অনায়াসে। ইনবক্সে কথোপকথন হলেই কেল্লা ফতে। মুহূর্তেই এক একজন হয়ে যান চিরকালের চেনা, অতি আপন জন। ফেসবুকের এই প্রেম লোকাল ট্রেনের মত, পাঁচ মিনিট অন্তর বিরতি দিয়ে দিয়ে এক ইনবক্স থেকে অন্য ইনবক্সে ঘোরাফেরা করে। তবে, গল্প ইনবক্সেই শেষ হয় না, ইনবক্স থেকে সেই গল্প বিছানা অবধি গড়ায়, এবং তা অতি দ্রুতই। তারপরে ভিডিও হয়, ভাইরাল হয়, হয় ব্ল্যাকমেইলও। পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেখি প্রেমিকের সাথেই রাত্রিযাপন আর তার ভিডিও ভাইরাল। কিংবা প্রেমিকের সাথে ডিস্কো ড্যান্সে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার প্রেমিকা। এসব আমাদের সমাজেরই অনিন্দ্য সুন্দর চর্চা বৈ তো নয়!

সেই কিশোরীকাল থেকেই দেখে এসেছি একটি ছেলে যদি কোনো একটি মেয়েকে টার্গেট করে, সেই মেয়েটির সম্মতিসূচক সাড়া না পাওয়া পর্যন্ত সেই ছেলে কবি, সাহিত্যিক, গায়ক থেকে শুরু করে রোমিও, ইউসুফ, মজনু বনে যেতে দ্বিধা করে না। সবরকম ছোট হওয়াতেও আপত্তি নেই তাঁর। তখন আকাশের চাঁদও হাতে এনে দিতে পারে মেয়েটির। হয়তো বন্ধুদের সাথে বাজিও ধরে, মেয়েটিকে পটাতে পারলে বন্ধুরাও মোটা অঙ্কের ট্রিট দেয়। অপরদিকে মেয়েটি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যখন নাছোড়বান্দা প্রেমিকের আহবানে সাড়া দেয়, শুরু করে আস্থা রাখতে তখনই ছেলেটির আগ্রহে পড়ে ভাটার টান।

আদতে প্রেম বলে কিছু নেই, সবই খেলা। এই খেলা আমাদের সমাজে চিরন্তন। এই ধোঁকাবাজির শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহজ-সাদাসিধে মেয়েরাই হয়। ফেসবুক এই ধোঁকা দানের জন্য শ্রেষ্ঠ সহায়ক বাহন। আমাদের সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা, বৈষম্যমূলক অবস্থান এবং ভালোবাসাহীন সামাজিক বিয়ের কারণে তরুণ থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী পুরুষেরাও ফেসবুকে ‘মেয়ে ধরার’ এই ফাঁদ পেতে বসে থাকে অহর্নিশ। মধ্যবয়সীরা এক্ষেত্রে এগিয়েও থাকেন অনেকাংশে। বাংলাদেশের সমাজে বেড়ে ওঠা একজন নারী হিসেবে জানি, এই ফাঁদ সমাজের সর্বত্রই। নারীর জন্য কোথাও নিরাপদ নেই। প্রেম-ভালোবাসার নামে ক্ষণিক আনন্দ পাবার তরেই এতো সব ফন্দি ফিকির।


‘বাকোয়াজ’- ‘কথা সর্বস্ব-কর্মহীন’-চাপাবাজ কিংবা বাকোয়াজ লোকের সংখ্যা আমাদের সমাজে অসংখ্য। এই বাকোয়াজেরা সব জায়গায় আওয়াজ তোলে। একটা কিছু পেলেই হল, জাতীয় ইস্যু, ব্যক্তিগত ইস্যু, কারও পারিবারিক কিংবা ব্যবসায়িক ইস্যু; যেকোনো ইস্যুকে তাঁদের মতামত দেওয়া চাইই চাই। এখানে সকলেই মহা বিশারদ, মহা গবেষক কিংবা মহা বুদ্ধিজীবী। তাঁদের চর্চার বাইরে কিংবা ধারণার বাইরে এমন কোনো জ্ঞান নেই যা অনর্জিত।সুতরাং কোথাও একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটল, কেউ খুন হল, কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটল, কিংবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল, কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হল, কোথাও কোনো অগ্নিকাণ্ড হল, সেখানে একদল লোক ছবি তুলবে, ভিডিও আপলোড করবে, আর সেইসব ছবি, ভিডিও এবং স্ট্যাটাসে জাতির সব জ্ঞানীগণ এসে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেবেন। প্রকৃত অর্থে রাস্তায় নেমে আওয়াজ তোলার সামর্থ্য কিংবা সাহস নেই, মানুষের দুর্দিনে সত্যিকারের সহায়তা দেবার লোক হাতে গুণে পাওয়া যাবে না। তবে ফেসবুকে মায়াকান্না দেখানোর লোকের অভাব নেই। এই মায়াকান্নাকারীরা কেবল ফেসবুকেই নয়, আমাদের সমাজে রাস্তার মোড়ে, টং দোকানে, পান-বিড়ির দোকানেও এরা ঝড় তুলে অভ্যস্ত। এরাই ঝড় তোলেন ফেসবুকের নিরাপদ বলয়ে। তাঁদের এই ইস্যুগুলো আবার অতি দ্রুতই পরিবর্তনশীল।কুম্ভীরাশ্রু প্রদর্শন করে ইস্যুকে টিস্যুর মতোই ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং নতুন ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশোদ্ধার করেন।


‘ধর্মের নামে মিথ্যাচার’-বলাই বাহুল্য ধর্ম নিয়ে রাজনীতি যারা করেন সকলেরই এক ইচ্ছে এক লক্ষ্য, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়া। ক্ষমতা নিয়ে অন্যসকল দলের যে লোভ, যে মোহ, যে স্বার্থ আছে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোরও সেই একই এজেন্ডা। তাঁদেরকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়, নিরিহ জনসাধারণের সবচেয়ে দুর্বলতম বিশ্বাসের জায়গাটিকে তাঁরা পুঁজি করে, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন সেই যুগ যুগ ধরেই। যে চিত্র আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস ‘লাল সালুতে’ও দেখতে পাই। যেখানে আজ থেকে প্রায় পঁচাত্তর বছর আগের বাংলাদেশের সমাজের ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথাই বিধৃত হয়েছে। সেখানে লেখক বলেছিলেন, “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি।” দুঃখজনক সত্য হল, আজও ধর্মের নামে আগাছায় ভরে গেছে দেশ, সমাজ, সমাজের অলি-গলি, খানাখন্দ।

সময়ের সাথে সাথে আধুনিক চিন্তার, প্রগতির বাণী আর আদর্শের গান গেয়ে ধর্মও মানব সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত হয়তো। তবে, সেই উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বর্তমানে এই ব্যবসা আরও ঊর্ধ্বমুখী হলেও এর কার্যক্রম, এর প্রভাব প্রতিপত্তি দিনে দিনে জনগণের কাছে বরং নিন্দিতই হয়েছে। মানুষের কল্যাণে, ধর্ম মানবতার ধর্ম না হয়ে বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে বিশাল বড় দেয়াল তুলে দাঁড়িয়েছে, ছড়িয়েছে হিংসের আগুন সর্বত্র। চাষ করছে বিদ্বেষের বীজ। আর ফেসবুকেও দেখি সেই একই চিত্র। মূলত ফেসবুক-ইউটিউবকে আশ্রয় করে তাঁরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছে কু-মতলব, কুচিন্তা আর কুপ্রবৃত্তি নিয়ে। যেদিকে তাকালে কেবল আইয়ামে জাহেলিয়্যার অন্ধকারই চোখে পড়ে।

১০
‘মুখোশের আড়ালে মুখ’- মুখোশ হয়তো মানবজীবনের এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। যেখানে সেক্সপিয়ার স্বয়ং বলেছেন, “All the world is a stage, and all the men and women merely players.” আমরা হয়তো প্রতিনিয়ত এক অদৃশ্য মুখোশ নিয়েই সমাজ জীবন, পেশাগত জীবন, এমনকি পারিবারিক জীবনেও ভিন্ন ভিন্ন নাম ভূমিকায় অভিনয় করি। পারিবারিক জীবনে যদি অভিনয় করা যায় তবে সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে সুখি দাম্পত্য সম্পর্কে আছেন বলে অনেক মনো সামাজিক বিশেষজ্ঞের ধারনা। এই মুখোশ ইতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, তাই সব পরিবেশে সকল সময়ে প্রকৃত সত্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করাই উত্তম। সেক্ষেত্রে এই মুখোশ মানুষকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করতে শেখায়। সহজতর হয় সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন কিংবা উন্নয়ন।

তবে, মুখোশ যদি হয় ভণ্ডামি, মিথ্যাচার আর ধোঁকায় পরিপূর্ণ, সেই মুখোশ মানবজীবনের জন্য ভয়াবহ ভাইরাস। যা করোনার থেকেও ভয়াবহ। যে অতিমারির বিরুদ্ধে আজ লড়াই বিশ্বব্যাপী মানবের, তার টিকা ইতোমধ্যে বিজ্ঞানই বের করেছে। মানুষ জয় করবে এই অতিমারিকে। তবে, আমাদের সমাজ জীবনে আমাদের যে অবক্ষয়, যে নীতিহীনতা, যে অসততা বাসা বেঁধেছে সমাজের শিরায় শিরায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে, তার কোনো টিকা আবিষ্কার সম্ভব হয়নি আজতক। লাল সবুজের একটি দেশ আজ আক্রান্ত হয়েছে সেই ভয়াল রোগে। যার বিষ ছড়িয়েছে সমাজের শেকড়ে শেকড়ে। সেই বিষে আছে ধর্মের নামে ধাপ্পাবাজি, ধোঁকাবাজি, মিথ্যাচার, ধর্ষণ, দুর্নীতি এ জাতীয় বহুবিধ বিশেষণের রকমারি উপাদান(!) ফেসবুক আমাদের জীবনে এক সুদৃশ্য মুখোশ একথা বললে অত্যুক্তি হবে না।

বিশ্বাস করি পৃথিবী একদিন সুস্থ হবেই মহামারির হাত থেকে। আবার জেগে উঠবে প্রাণের স্পন্দন। আবার মানুষ বাসবে ভালো প্রাণ খুলে, দাঁড়াবে সহযোগিতার হাতটি বাড়িয়ে। সেই পৃথিবীটা হোক দুষণমুক্ত, মানবতাহীন ধর্মমুক্ত, নীতিহীন রাজনীতিমুক্ত। একটি সুস্থ, সুন্দর একুশ শতকের বাংলাদেশ সাক্ষী হোক সেই নতুন পৃথিবীর। যেখানে ফেসবুক হবে আমাদের বিবেকের আয়না, সেখানে বিম্বিত হোক আমাদেরই মুখোশহীন মুখের চিরচেনা ছবি! সবার ওপরে মানুষ সত্য, সেই মানুষেরই হোক জয়।

সঙ্গীতা ইয়াসমিন, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ