প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ২৭ এপ্রিল, ২০২১
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর একটি বড় অংশ দেশের শিল্পপতিদের দখলে। অনেক গণমাধ্যমের জন্ম হয়েছে ব্যবসায়িক রেষারেষি থেকে এবং ব্যবসায়িক ঢাল হিসেবে। এক শিল্প গ্রুপ অন্য শিল্প গ্রুপকে দেখে নেয়ার প্রবৃত্তি থেকে জন্ম নেয়ার গণমাধ্যমগুলো বরাবরই ব্যবহৃত হয়ে আসছে মালিকপক্ষের আত্মতুষ্টিতে। জনগণের টাকা নিজেদের দখলে নিয়ে ঋণখেলাপি বনে যাওয়া এইসব কর্পোরেট হাউজ গণমাধ্যমকে নিজেদের ‘রক্ষিতা’ মনে করে আসছে।
যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই সংবাদপত্রকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে অপসাংবাদিকতার বিস্তার অনেকটাই প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। এদের দাপটে, ধুকতে বসা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার কণ্ঠে হার্নেস হচ্ছে। জনগণের আস্থার জায়গা পরিবর্তন হয়েছে। অপেশাদার করছে ভর। তারা যখন কালোকে সাদা বলছে, তখন সেটাই হচ্ছে ছাপার অক্ষর।
কর্পোরেট হাউজের বাহিরে যারা কেবল সাংবাদিকতাটুকু করতে চাচ্ছে, তারাও জিম্মি থাকছে ওইসব শিল্পপতিদের দেয়া বিজ্ঞাপনে। হাজার হলেও গণমাধ্যম একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। সংবাদকর্মীদের বেতন জোগাতে হিমশিম খাওয়া সম্পাদক/মালিকদেরও অসহায় থাকতে হচ্ছে।
আপনারা যারা সারাদিন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিকদের গালিগালাজ করলেন, তারা সম্ভবত আমাদের গণমাধ্যমের এই অভ্যন্তরীণ সমস্যাটুকু আঁচ করতে পারেননি। যার ফলে, গণমাধ্যমগুলোর নির্লিপ্ততা আমাদের চোখে ধরা পড়ছে।
আচ্ছা বলুন তো, পত্রিকার সংবাদ পড়তে আপনি কত টাকা খরচ করেন? কত টাকা আপনার পকেট থেকে গণমাধ্যম পায়? কতজন টাকা দিয়ে সংবাদপত্রের সার্বস্ক্রাইব করেছেন?
পাঠকের কাছ থেকে যদি অর্থ না আসে, তাহলে তো গণমাধ্যম তো বিজ্ঞাপনের উপরই নির্ভর করবে নাকি? আর যারা বিজ্ঞাপন দেয়, তাদেরকে সার্ভ না করলে, ধুকতে থাকা পত্রিকা দু’দিন পর বন্ধ করতে হবে। আর সেকারণে, আমাদের গণমাধ্যম এখনো স্বাধীন হতে পারেনি। মালিকপক্ষের কাছ থেকে স্বাধীন হতে পারবেও না। ফলে, মালিকপক্ষও গণমাধ্যমকে নিজেদের বিছানার সঙ্গী হিসেবে ভাবে।
ফলে রাজধানীতে আত্মহত্যা করা একটি মেয়ের সংবাদে গুরুত্ব পেয়েছে ‘অভিজাত হোটেল’, রক্ষিতা’, বিলাসবহুল বাসা ভাড়ার মত কিছু শব্দ। মেয়েটির নাম, বাবার নাম, আত্মীয় নাম, জন্মস্থানের ইতিহাস অযাচিতভাবে সংবাদে এলেও অভিযুক্তর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পরও বলতে গেলে সারাদিনই গণমাধ্যমগুলো নাম মুখে নেয়া থেকে বিরত থেকেছে কিংবা কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে।
ঠিক এই ঘটনা যদি কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কেউ ঘটাতো, তাহলে সেটা হতো মুখরোচক সংবাদ শিরোনাম।
গণমাধ্যমের এই অবনমনের জন্য কারা দায়ি? সাংবাদিকরা? সম্পাদকরা? দেশে অনেক সাংবাদিক কেবল সাংবাদিকতাটুকু করতে চায়, তাদের সেই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্র কোথায়?
কথায় কথায় এখন সাংবাদিকদের গালি খেতে হয়। সাংবাদিক দেখলে জনগণ হাসি তামাশা করে, এর দায় কাদের কাঁধে?
হ্যাঁ, এর দায় পেশাদার সাংবাদিকদের, সম্পাদকদের। এখনকার পত্রিকার স্লোগানগুলোকে হিপোক্রেসিতে নিয়ে যাওয়া মালিকপক্ষকে আত্মতুষ্টি করা সম্পাদকরা এ দায় এড়াতে পারে না। সংবাদপত্রের যদি কখনো অপমৃত্যুও হয়, সেখানে দায়ি থাকবে আমাদের সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনগুলো। আমরা কখনোই সাংবাদিকদের জন্য একটি আদর্শিক পত্রিকা গড়ে তুলতে পারিনি, তার অন্যতম কারণ এটি।
সরকারও এ দায় এড়াতে পারে না। তারাও সুযোগ পেলে গণমাধ্যমকে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। যত্রতত্র সংবাদপত্র অনুমোদন সংবাদপত্রের চারিত্রিক হরণে অন্যতম কারণ।
আর এইসব কারণে, আজ সংবাদপত্র হচ্ছে অলাভজনক শিল্প। কর্পোরেটদের লালসার শিকার হচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকতা। এইসব চলতে থাকলে, গণমাধ্যমের প্রতি যতটুকু আস্থা মানুষের মনে আজও আছে, তা তলিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সংবাদপত্রের এই দীনতা ভাঙবে কে?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য