প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ১৭ মে, ২০২১
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষালয়ে যারা পড়তে আসে, তাদের একটি বড় অংশ মনের বিরুদ্ধে পড়াশুনা করে। এখানে কেউই আগে থেকে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট পড়ার সুযোগ পায় না। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিকেল কলেজে যারা পড়াশুনা করে তাদের সিংহভাগই বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে পড়তে যায়। খুব কম সংখ্যক আছেন, যারা নিজেদের মধ্যে সেখানে পড়াশুনা করার ইচ্ছা পোষণ করে।
পড়াশুনা শেষ করার আগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা চাকরির পড়াশুনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, একজন শিক্ষার্থী তার স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তরে যতটা পড়তে হয়নি, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পড়াশুনা করে। বিসিএস নামক এক সোনার হরিণের সন্ধানে বিভোর থাকা শিক্ষার্থীরা স্নাতকের পড়ার গুরুত্ব চাকরিক্ষেত্রে দেখতে পায় না। বরং ফেলে আসা স্কুল, কলেজের সেই ছোট ছোট বইগুলো পড়তে ব্যস্ত থাকে।
যে ছেলেটা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলাফল করলো, সেই ছেলেটা বিসিএসে এসে যখন অকৃতকার্য হয়, তখন তার উপর শুরু হয় সামাজিক ও মানসিক অত্যাচার। এই অত্যাচারটা শুরু করে তার পরিবারের সদস্যরা, এরপর আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, বিসিএস টিকতে না পারায় তার অতীতের সকল অর্জন মিথ্যা হয়ে যায়। পরিবারের কাছে সেই ছেলে বা মেয়েটি হয়ে উঠে বোঝা। কিছু কিছু বাবা-মা তো তার সন্তানদের সাথে ভালভাবে কথা পর্যন্ত বলে না।
মানসিক চাপে পড়া এইসব শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বিসিএস তো দূরে থাক নিজেদের গন্তব্য যেতে ভয় পায়। বিসিএস ফোবিয়ায় আক্রান্ত ছেলে-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের শিক্ষাবিদরা মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে উচ্চশিক্ষার চেয়ে লোভনীয় হয়ে উঠছে বিসিএসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারগুলোতে যে ভিড় আমরা পত্রিকা দেখি,তাতেও আমাদের ঘুম ভাঙে না।
আমাদের সমাজ অনেকটাই মেনে নিয়েছে, যে ছেলেটি বিসিএসে টিকেছে সেই সবচেয়ে বেশি মেধাবী ও সফল মানুষ। আসলে কিন্তু সেটা নয়। মেধার যাচাই, এই পরীক্ষায় যতটা না হয়, তারচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সৃজনশীলতা যতটা স্থান পায়, তারচেয়ে আপনার ভিতর থাকা দারুণ চিন্তাশীলতার অপমৃত্যু ডেকে আনে। কিন্তু কেন? বিসিএস কী সব? এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কি জীবনের সব অর্জন ব্যর্থ? কেন পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের ব্যর্থতা মেনে নেয় না?
এটি একটি রুগ্ন প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে সরকার। সরকার এই চাকরির সুযোগ-সুবিধাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, যা ছেলে-মেয়েদের এটি ধরতে আরও বেশি লোভনীয় করে তুলেছে। বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনার গুরুত্ব কমছে, শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি ভালোবাসা উঠে যাচ্ছে।
মূলত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যর অজুহাতে দিনে দিনে ফারাকটি বাড়ছেই। উচ্চশিক্ষা নেয়া লাখ লাখ ছেলে মেয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। মানসিক অত্যাচারে অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে দ্বিধা করছে না।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের তরুণদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। বিসিএস কখনোই মেধার মাপকাঠি নয়। সমাজে দেয়া এই ভুল-ভাল মেসেজের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই অবস্থান নিতে হবে। আমাদের বুঝে আসতে হবে, বিসিএস ছাড়াও এই পৃথিবীতে কোটি কোটি চাকরি আছে। এই পেশার চেয়ে অনেক সম্মানীয় পেশা আমাদের চারপাশে আছে।
মনে রাখবেন, যাবতীয় সৃষ্টিশীল কাজ কিন্তু বিসিএসধারীদের হাত ধরে আসেনি, বরং আপনার মত বিসিএস না দেয়া কিংবা অকৃতকার্যকৃতরা এই দেশটার হাল ধরেছে। অর্থনীতির চাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই জীবনের এই মোহটি না পেলেও জীবনকে মেলে ধরার অনেক রাস্তা আপনার সামনে হাতছানি দিচ্ছে। সেইগুলোতে আলিঙ্গন করুন, দেখবেন জীবনটা ঝকঝকে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য