আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জনযুদ্ধের সাহসিকা রোজিনা ইসলাম

মাসকাওয়াথ আহসান  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ৫০ বছরের দুর্নীতির ছোবলে করোনাকালে মৃতপ্রায় বাংলাদেশ। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে অক্সিজেন না পেয়ে রাস্তায় মরে পড়ে থেকেছে বাংলা মা কিংবা তার সন্তান নরোত্তম। করোনাকালেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবেক এতোটুকু জাগেনি; বরং করোনাকে দুর্নীতির বসন্ত হিসেবে উদযাপন করেছে তারা।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জগতে ঋজু একটি নাম রোজিনা ইসলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদনে রোজিনা উন্মোচন করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি রাক্ষসদের লুণ্ঠনের চিত্র।

রাজা যায় রাজা আসে; কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা রয়ে যায়; দুর্নীতির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে। এর ওপরে 'ভোটসমনিয়া'-র পাহারাদার হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা ক্ষমতায়িত হয়; সেই পাকিস্তান কালের স্বৈর-সরকারি কর্মচারীদের মতো। তাই তো রোজিনা প্রতিবেদন তৈরির প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে; দুর্নীতির ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশে আক্রোশ-অন্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এইসব লোকজম্যানদের ভাগ্য বদলেছে বাংলাদেশ লুণ্ঠন করে। এক স্বৈরাচারের আমলে নির্মিত মন্ত্রণালয়ের খাস কামরা আরেক স্বৈরাচারের আমলে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হলো। রোজিনাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের টুটি চেপে ধরে হাল-ফ্যাশনের হেয়ারডুতে দম্ভময়ীগণ। গলি থেকে রাজপথে উঠে আসা এইসব ফ্যাসিজমের ফুটসোলজার রাক্ষস; পান্তা থেকে পাস্তা খাওয়া 'ফইন্নির ঘরের ফইন্নি'; থাগস অফ বেঙ্গলের জীনগত আশ্লেষ যেন।

পুলিশ-আইন আদালত এইসব দুর্নীতির লোকজম্যানদের গ্রেপ্তার না করে; গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতির তথ্য জনগণকে জানিয়ে দেয়া এক সংবাদযোদ্ধাকে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে কোন সাংবাদিককে মন্ত্রণালয়ের খাস কামরায় আটকে নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম। থাগস অফ বেঙ্গলেরা এতোটাই ক্ষমতাধর হয়েছে; যে ধরাকে সরা জ্ঞান করে; দুর্নীতির আত্মবিশ্বাসে গোরুড়ের খিদে নিয়ে দুর্নীতির দুষ্টচক্রকে টিকিয়ে রাখতে সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছে; ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ লুণ্ঠকদের প্রণীত আজকের তথ্যযুগে অচল এক 'দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনে'।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যেখানে জনস্বার্থে নিশ্চিত করার কথা; জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য জানার অধিকার যেখানে জনগণের ও সাংবাদিকের প্রাধিকার বা এনটাইটেলমেন্ট; সেইখানে রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অবৈধভাগে সংগ্রহ করেছেন; এই স্বৈর-অবাস্তব অভিযোগে সারারাত থানায় আটক রইলেন; তাকে আদালতে নিয়ে গিয়ে রিমান্ডের আবেদন করেছে স্বাস্থ্য-খাতের ডাকাত-পক্ষ।

ডিজিটাল বাংলাদেশে; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব যেখানে প্রতিদিন উন্মুক্ত করার কথা সরকারি ওয়েবসাইটে; মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তার যেখানে প্রতিদিন সাংবাদিকদের কাছে সরকারি-আয় ব্যয়ের তথ্য প্রদান করা দায়িত্ব; সেইখানে উলটো নরভোজি ক্রোধে রোজিনার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

এই যদি ৫০ বছরে বাংলাদেশের হীন চিত্র হয়; তাহলে জনগণের জীবনের চেয়ে সরকারের গোপনীয়তা বড়; এমন একটি অলীক নরভোজিতার আদিম উপত্যকার গ্লানি; স্বাধীনতা শব্দটিকে মূল্যহীন করে। অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের নতুন এই উপনিবেশে লুন্ঠনবাদের যে রিরংসা; তা দ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত করে; করোনাকালে স্বাস্থ্য-খাতের অবহেলায় মৃতের চিতার আগুন হয়; দুর্নীতিকে চাপা দেয়ার সরকারি অপকৌশল করোনায় স্বাস্থ্য-খাতের নিষ্ঠুরতায় মৃতের লাশ চাপা দেয়ার অকথ্য এক বিষাদসিন্ধু রচনা করে। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করার জনযুদ্ধের সাহসিকা রোজিনা আর কিছুই চায়নি; সে চেয়েছে দুর্নীতির দোজখ থেকে জনমানুষকে মুক্তি দিতে।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ