প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২১ মে, ২০২১
আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে জামায়াতি- হেফাজতিরা নাস্তিক এবং নিশ্চিত যে ধর্ম এদের রাজনীতির ব্যবহার্য জিনিস। তা না হলে ধর্মকে তারা এত বিকৃত করে কীভাবে? আমরা সাধারণ মুসলমানরা বিভিন্ন অন্যায়, অপরাধ করি। লোভে, জেনে, বুঝেই করি মানবিক দুর্বলতায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন একজনও দেখবেন না যে জেনে বুঝে ধর্ম বিকৃতি করে। অতি বড় ঘুষখোরও মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করে, গরীব মানুষজনকে ১০/২০ টাকা সাহায্য করে। এসব দান খয়রাত কতটা গ্রহণযোগ্য আল্লাহর দরবারে সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
কেন দান করে? দান করে স্রষ্টাকে রাজিখুশি রাখার জন্য। আর হেফাজতিরা কী করে? তারা মসজিদ, মাদ্রাসা থেকে, মসজিদ মাদ্রাসার নামে নির্বিকারে চুরি করে। কোরান, হাদিস বিকৃত করে রুটি রুজি ক্ষমতার জন্য। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বলাৎকার, বলাৎকারের পরে খুন নিয়মিত ঘটনা। ভাবতেও গা শিউরে উঠে।
নাম ধরে-ধরে বর্তমান অতীতের কয়েকজন ধর্মীয় নেতার ধর্ম বিকৃতির, ধর্ম ব্যবসার খুব সাধারণ কয়েকটা উদাহরণ দিই। সূক্ষ্মগুলোতে গেলাম না। উদাহরণগুলো কয়েকজন কথিত ধর্মীয় নেতার ওয়াজের উদাহরণ দিচ্ছি। শুরু করছি হালের ক্রেজ মিজানুর রহমান আযহারীকে দিয়ে:
- কাউকে "আল্লামা" বলা যাবে না। আল্লামা একজনই। আল্লাহ্।
- ঘরে ঘরে আল্লামা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী দাও।
দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী:
- জাহানারা ঈমামকে বলত জাহান্নামের ঈমাম।
- মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর প্রচলিত নাম দেইল্লা রাজাকার উপস্থাপন করা হয় আইনানুযায়ী। সাথে সাথে সাঈদী সুরা হুজরাতের আয়াত উদ্ধৃতি দিয়ে বলল কোরান অনুযায়ী কারো নাম বিকৃতি গুনাহ।
জুনায়েদ বাবুনগরী:
- ২০১৩ সালে বাবুনগরীর ছেলের বয়স ছিল ১৪। সে শাপলারা চত্বরে আসে নাই। বাবুনগরীকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল কেন তার ছেলেরে আনেননি? বাবুনগরীর পরিষ্কার উত্তর ছিল পোলার মায় দেয় নাই।
- শাপলা চত্বরের ৯০% ছিল নাবালক। এই ৯০% এর বেশিরভাগের বয়স ৮-১৫। এদেরকে মিথ্যা বলে, মেরে, বাবা-মাকে সমাজ ছাড়া করার ভয়, মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আনা হয়েছিল। অথচ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর স্পষ্ট শিক্ষা আগে নিজে করতে হবে তারপর অন্যদের করতে বলা যাবে।
হেফাজতে ইসলাম:
- বিয়ে প্রত্যেক ধর্মে, দেশেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিয়ের রীতি, আইন, নিয়ম প্রত্যেক দেশেই ধর্ম ও রাষ্ট্রীয় নিয়মের মিশ্রণে তৈরি হয়। কেউ যদি ধর্মবিশ্বাসী না হন তবে তার জন্যও আলাদা নিয়ম আছে। কিন্তু আইন একই।
কেউ যদি বিয়ে না করে এক সাথে থাকতে চায় তবে আইনি জটিলতা রাষ্ট্র ভেদে হয়। কোন দেশে এধরনের বসবাস বৈধ, কোন দেশে অবৈধ। সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু "বিয়ে" করলে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। "বিয়ে" নিয়ে ধর্মে, আইনে নিজের মনমত কিছু করার সুযোগ নেই। এর সাথে সামাজিক নিরাপত্তা, সম্পত্তির হিসাব, নারী, শিশুর ভবিষ্যৎ জড়িত তেমনি জড়িত পারলৌকিক ব্যাপারও।
- মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে হেফাজতে ইসলাম সভা করে ফতোয়া দিল এ বিয়ে বৈধ। তারপর জানা গেল কোনধরনের বিয়েই হয় নাই। আয়েশা ঝর্ণা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলা করেছেন। এমন একে একে অনেক মামুনুল হকের শরিয়ত সম্মত দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। অথচ শুধু রাজনৈতিক কারণে বিয়ের মতো ধর্মীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কীভাবে বিকৃত করলো? এমন উদাহরণ অনেক।
আপনি ঘুষ খান। আপনি লম্পট। আপনি খারাপ মানুষ। আপনি নিজেকে দিয়ে বিচার করুন আপনি ধর্ম নিয়ে এমন নয়-ছয় করবেন কি না? আর যাই করেন আপনার দ্বারা এসব করা সম্ভব না। আপনার দ্বারা সম্ভব না কিন্তু ধর্মীয় লেবাসধারী, ধর্মীয় কিছু নেতা, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামির লোকজন এসব করে যাচ্ছে নির্বিকার চিত্তে। কীভাবে পারছে?
এ প্রসঙ্গে আরও একটা উদাহরণ দিই। জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদি। এই মওদুদি তার সন্তানদের তার লেখা কোন বই পড়তে দেয় নাই এবং কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ করে গেছে জামায়াতে ইসলামির রাজনীতির সাথে না জড়াতে। এ কথা মওদুদির পুত্র ফারুক মওদুদিই জানিয়েছেন। কেন মওদুদি তার সন্তানদের এই আদেশ দিয়ে গেলেন?
প্রশ্ন অনেক। উত্তর? উত্তর একটাই হতে পারে: এরা ধর্মে অবিশ্বাসী, নাস্তিক, ব্যবসায়ী। তাই ধর্ম নিয়ে যা ইচ্ছা তা করছে! আরও একটা কথা চোরের বড় গলা। কথায় কথায় যারে তারে নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ বলা কঠোরভাবে নিষেধ। এটা বলবে ব্যক্তি এবং নির্ধারণ করবেন স্বয়ং আল্লাহ্। এরা নিজেদের পরিচয় ঢাকতে কথায় কথায় নাস্তিক ঘোষণা করে কল্লা ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়।
ইসলামের শিক্ষা তো আহ্বান, বোঝানো, আচরণে মুগ্ধ করা। অথচ এদের আচরণ পুরোই বিপরীত। এরা এমন পারে ধর্মের উপর এদের বিশ্বাস নাই বলে। পরকালের চিন্তা নাই তাই দরিদ্র, অশিক্ষিত, আবেগপ্রবণ মানুষের দেশে এরা সহজেই পণ্য হিসাবে বেচতে পারছে ধর্মকে। যেমন বিভিন্ন জুস কোম্পানি খাঁটি আমের জুস বলে খাওয়া একটু মিষ্টি কুমড়া সাথে বোতল ভর্তি কেমিক্যাল। আমের স্বাদ-গন্ধ সবই আছে, কিন্তু একফোঁটাও আম নাই!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য