প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী | ২৬ মে, ২০২১
হ্যামিংটনের ‘ক্ল্যাসেস অব সিভিলাইজেশন’ তত্ত্ব যা বিশ্বকে বিভক্ত করে সাংস্কৃতিক রেখা বরাবর। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সমন্বয়ে রাজনৈতিক বিকাশের বাস্তবায়ন করা উচিত। করোনাকালে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না বারংবার বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন দেয়া সত্ত্বেও। এটি নিতান্তই দুঃখজনক। রাজনৈতিক উন্নয়ন যেন নাগরিক সমাজকে সততা ও বিনয় এবং নিষ্ঠা নিয়ে ওতপ্রোতভাবে এগোতে পারে। বাধ্য হয়ে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। বৈশ্বিক এ মহামারী বিশ্বব্যাপী নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাজনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সমাজের নৈকট্য এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। করোনা মানুষকে ভারাক্রান্ত করছে। কেউ কেউ আবার ক্ষমতা দেখানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সমাজের মধ্যে সংবাদমাধ্যম একটি দেশের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। তবে সৌজন্যতায় রেষারেষি বাদ দিয়ে প্রত্যেককেই সহমর্মিতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজস্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এমনিতেই করোনাকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণভাবে চেষ্টা করে চলেছেন যাতে দেশের মানুষ একটু স্বস্তিতে, শান্তিতে ও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থায় টিকা আমদানির প্রয়াসও নিয়েছেন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় তার প্রয়াসের কমতি নেই। যাতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেজন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-নেত্রী এবং স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। কেননা লকডাউনের মেয়াদ যত বাড়বে তত মানুষ স্বাভাবিক অর্থনীতির কাঠামোয় ফিরতে পারবে না। অথচ তার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সকলকে স্বাভাবিক নিয়মেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেভাবে ঈদের আগে ঢাকা ছেড়ে মানুষ গিয়েছে এবং ঈদের পর ঢাকায় ফেরত আসছে সরকারের বারবার নিষেধ সত্ত্বেও, এটি ঠিক নয়। অবমৃষ্যকারিতা কখনও সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী, এমনকি নিজের পরিবারের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে না। জুন মাসে নতুন অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হবে। এ ব্যাপারে অবশ্যই কাজকর্ম সুন্দরভাবে হচ্ছে। বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও অর্থ সম্পর্কিত বিশ্লেষকদের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়ালি বৈঠকও হয়েছে।
করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেটে খুব বেশি উচ্চাভিলাষী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বেসরকারি খাতে বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ওপরই গুরুত্ব পাবে বলে আশা রাখতে পারি। বণ্টন ব্যবস্থায় সুষমভিত্তিক ন্যায়বিচার থাকতে হবে। কেননা সরকারপ্রধান সব সময় জনকল্যাণকে মুখ্য ভূমিকায় রাখেন। তবে এ কথা ঠিক বিশ্বব্যাপী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা কমছে। যার কারণে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে চাহিদা-সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে কর দেয়ার হারও সরাসরিভাবে হ্রাস পাবে। করোনা যে অভিশাপ নিয়ে এসেছে তাতে বিশ্বব্যাপী যেমন মৃত্যু ঘটছে, অর্থনীতিও দেশে দেশে অস্বস্তির সৃষ্টি করছে। এমনকি যে দেশগুলো করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত হচ্ছে সেখানেও দেখা যাচ্ছে পণ্য উৎপাদনের তুলনায় পণ্যের চাহিদা কম। এ যেন প্রায় পাঁচ শ’ বছরের ক্লাসিক্যাল আমলের পণ্য দীর্ঘস্থায়ী জমা থাকা। আসলে ক্রমান্বয়ে কমতে থাকা চাহিদা বাজার ব্যবস্থাতেও আঘাত হানছে। এই ব্যবস্থা চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের জন্য স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। ততদিন অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা আসলেই কঠিন। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ পারে মানুষকে এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে। বৈশ্বিক যে সরবরাহজনিত শৃঙ্খল রয়েছে সেখানে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই ব্যবসায় সহজীকরণ করা প্রয়োজন। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি বিভা ব্যবসায় সহজীকরণ পদ্ধতির ওপর সেমিনার করল। তাতে কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাইনি। বরং যারা নিম্ন এবং মধ্যম স্তরে আছেন তাদের সম্পর্কে একটি লাইসেন্সের জন্য ১৮ জায়গায় যাওয়ার কথা শুনলাম। অথচ বিভা ওয়ান স্টপ সার্ভিস যত দ্রুত চালু করতে পারবে ততই দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। এজন্য কি করণীয় তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কর্মপদ্ধতি ঠিক করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে হয় ভেতরে ভেতরে একটি গ্রুপ সরকার যে সফলতার পরিচয় গত বারো বছর ধরে দিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে সঠিকভাবে তাল মেলাতে পারছে না। অথচ পদ্মা সেতু থেকে আরম্ভ করে মেট্রোরেলসহ মানব উন্নয়নমুখী অনেক কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেছে। দেশের যতটুকু ডিজিটাল উন্নয়ন তা গত বারো বছর ধরে সাধিত হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশনের সুযোগে আজ অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় অনলাইনে পরীক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তায় আসছে। ঈদের আগেও মোবাইলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করব ধীরে ধীরে যারা বেকার আছেন তাদের জন্য আগামী বাজেটে একবারের জন্য হলেও প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এতে অন্তত বেকারদের মধ্য থেকে কর্মঠ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে। সরকারপ্রধান যথার্থ অর্থেই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্প সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন গত ১৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায়। নির্দিষ্ট সময়ে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করাটা রাষ্ট্রের জন্যও মঙ্গলজনক। অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক কর্মস্পৃহা গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। এজন্য মাঝারি, নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকাণ্ডের ওপর তদারকি বাড়াতে হবে।
গণমাধ্যমে রিপোর্টে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন করোনাকালে বেড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শুভ ও বিবেকবোধ বুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন মানুষের কাছেই এটি ক্ষতিকারক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়। জননেত্রীর একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে তার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে কাজ করি নিজস্ব বলয়ে। বাঙালি জাতির পিতার আহ্বানে দেশ স্বাধীন করেছিল এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার জন্য কিছুটা শ্লথ হলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল। আমরা এ অগ্রযাত্রাকে ইতিবাচকভাবে সম্মুখ সারির দিকে দেখতে চাই। আমাদের সবার মধ্যে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি, সহজাত সহনশীলতা থাকা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। করোনাকালে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস, আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবন ও জীবিকার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে তার প্রয়াসের কোন বিকল্প নেই। জননেত্রী একজন দক্ষ ও বিজ্ঞ প্রশাসক এবং তিনি জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে আত্মনিবেদিত। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে মার্কিন ডলার ২২২৭ অর্থাৎ বাংলাদেশ টাকায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩-এ উন্নীত হয়েছে। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ হচ্ছে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রেরণকৃত রেমিটেন্সের দেশ হিসেবে সপ্তম স্থানে রয়েছে। এটি অবশ্যই আনন্দদায়ক। যারা প্রবাস থেকে ফিরে এসেছেন তারা যাতে তাদের দক্ষতা অনুসারে নতুন কোন দেশে যেতে পারেন সেজন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা এবং যে দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তার চাহিদা সে দেশের বাংলাদেশী দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেন প্রেরণ করে। সে অনুযায়ী তাদের তৈরি করার দায়িত্ব স্বল্প মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করতে পারে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, ভাষা জ্ঞান ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিকল্প নেই।
করোনাভাইরাস আদৌ পৃথিবী থেকে নির্মূল হবে কিনা বা কবে হবে সে সম্পর্কে স্বাস্থ্যবিদরা ভাল বলতে পারেন। এদেশে সরকারি পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের সহায়তায় টিকা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা যায়। আগামীতে হয়ত টিকা নিয়েই বাঁচতে হবে মানুষকে। সরকার টিকা সংগ্রহে ব্যস্ত। কিন্তু স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কিভাবে ধীরে ধীরে খোলা যায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সে ব্যাপারে শিক্ষকবৃন্দ গবেষণা করে সরকারের কাছে তাদের গবেষণার ফল পেশ করতে পারেন। একই সঙ্গে কিভাবে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি যেন মেনে চলেন সেটিও কার্যকর করার উপায় জানানো দরকার। ছাত্রছাত্রীরা বাসায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মনমানসিকতাতেও বৈকল্য সৃষ্টি হচ্ছে। করোনা পৃথিবীতে এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যাতে স্বাভাবিকতায় আঘাত লেগেছে। এ এক অদৃশ্য ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ। কেবল নির্লিপ্ততার সঙ্গে অনায়াসে মানুষের জীবন কেড়ে নিতে জানে। এ ক্ষণে প্রায় চার কোটি ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ যেহেতু জড়িত, সেহেতু কিভাবে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি তাদের পড়াশোনা সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে সে সম্পর্কে গবেষণা করে শিক্ষকদের ধারণাপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া বাঞ্ছনীয়।
সরকার অনলাইনে পড়াশোনার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ভালও করছে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জুলাই, ২০২১ থেকে বর্তমান অবস্থা বিরাজ করলে অনলাইনে পরীক্ষা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি চাকরির বয়সসীমাও বসে থাকবে না। গবেষকরা দেশে থেকেই এ ব্যাপারে গবেষণা করতে উদ্যোগী হবেন বলে আশা করি। দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটের অধিক জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়, যাতে দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস পায়। গতানুগতিকতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর এবং মুজিবর্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বাজেট হোক করোনাকালীন সময়ে ‘জীবন ও জীবিকার’ মেলবন্ধন ঘটানোর প্রয়াস। যেন টার্গেট গ্রুপের কাছে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও বেকার ভাতা চালু করা যেতে পারে। আজকে যে উন্নয়ন তা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতার ফল।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য