প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ৩১ মে, ২০২১
জিয়াউর রহমান শুধু ক্যান্টনমেন্টেই খুন করেছিলেন ৪৮০০ জনের বেশি সামরিক বাহিনীর সদস্যকে। এদের প্রায় সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ক্যান্টনমেন্টের বাইরে তার কারণে কত খুন হয়েছে তার হিসাব সম্ভবত নাই। এরমধ্যে সবচেয়ে রোমহর্ষক, নৃশংস হত্যা ছিল কর্নেল তাহের হত্যা। জিয়াকে কর্নেল তাহের যুদ্ধ করে মুক্ত করে তার চাকরি ফেরত, তার হাতে ক্ষমতা দিয়ে ছিল। তার নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করেছিলেন। বিনিময়: কর্নেল তাহেরকে মার্শাল ল’র কোর্টে অবৈধ ফাঁসি। তাহেরকে যে মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড। তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করার দুই সপ্তাহ পর বিধিপরিবর্তনে তাহেরের অপরাধের শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ করা হয়।
শাফায়েত জামিল, খালেদ মোশাররফদের পরিকল্পনা ছিল জিয়াকে জাতিসংঘের বা কোন দেশের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর। খালেদ মোশাররফের উপরে অনেকের চাপ ছিল জিয়াকে হত্যা করার। সামরিক ক্যু’র নিয়মও তা। কিন্তু খালেদ জিয়াকে কোনভাবেই হত্যা করতে রাজি হননি। বিনিময়: জিয়া একদিন পর কৌশলে খালেদকে হত্যা করান। লাইন ধরে খালেদের লাশের উপর থুতু ছিটিয়েছিলেন, লাথি দিয়েছিল পাকিস্তান ফেরত সৈন্যদের একাংশ জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর সদস্যরা। দুর্ধর্ষ গেরিলা কমান্ডার, ৭১-এর সবচেয়ে বড় সেক্টর ও কে-ফোর্সের কমান্ডার খালেদের লাশ ফুলে উঠেছিল ক্যান্টনমেন্টের এক মাঠের ভেতর।
জিয়াউর রহমানের এদেশীয় প্রধান বুদ্ধিদাতাদের প্রধান ছিল যাদু মিয়া। জিয়া স্পষ্ট বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারতেন না স্বাভাবিক কারণে। তার জন্ম শৈশবের কিছুটা কলকাতায়, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর জিয়াউর রহমানের পরিবার চলে যায় পাকিস্তানে এবং স্থায়ীভাবেই সেখানে থেকে যায়। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতেও ঢুকেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি কোটায়! তাই স্বাভাবিকভাবেই জিয়া বাংলা লিখতে, পড়তে, বলতে পারতেন না। যাদু মিয়ার বুদ্ধিতে জিয়াকে ইংরেজি অক্ষরে বাংলায় বক্তৃতা লিখে দেওয়া হতো। মাইলের পর মাইল প্রত্যন্ত অঞ্চলে হেঁটে মানুষজনের সাথে হাত মেলানো, গ্রামের উঠানে বসা ইত্যাদি জিয়া করেছেন যাদু মিয়ার বড়ভাই সিধু মিয়ার বুদ্ধিতে। যাদু মিয়ার সাথে জিয়াউর রহমানের চুক্তি ছিল যাদু মিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে। যাদু মিয়াকে সেই হতাশা নিয়ে মরতে হয়েছে। দেশবাসীর কাছে জিয়াউর রহমানকে জনপ্রিয় করে তোলার, রাজনৈতিক দল তৈরিতে প্রধান সাহায্যকারী যাদু মিয়াকে দেওয়া কথা জিয়া রাখেননি। উপরন্তু মাঝপথে যাদু মিয়ার দুই ছেলেকে জিয়া জেলে ঢুকিয়েছিলেন। পরে নাক খত দিয়ে যাদু মিয়ার কাছে মাফ চেয়ে যাদু মিয়াকে আবার কাছে এনেছেন।
কর্নেল তাহের খুন হয়েছেন কয়েক যুগ হয়ে গেছে। এখন তাহেরের পরিবার তাহের হত্যার মরণোত্তর বিচার দাবি করছে। প্রধান আসামি জিয়াউর রহমান। জিয়ার সময় ক্যান্টনমেন্টে অত্যাচারিত হতে-হতে খুন হওয়া অনেকের স্বজন, ভুক্তভোগী অনেকে বিচার চাইছেন। প্রধান আসামি জিয়াউর রহমান। জিয়ার সময় সাজানো বিমানবাহিনীর ক্যু, হত্যা নিয়ে তদন্তের দাবি দিন-দিন জোরালো হচ্ছে। প্রধান আসামি জিয়াউর রহমান। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এ জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর নৃশংসতা, গণহত্যায় নিহত মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাদের স্বজনরা আজ স্বজন হত্যার বিচার চাইছেন। প্রধান আসামি লে. কর্নেল আবু তাহের বা জাসদ।
বিএনপি সাংবিধানিকভাবে তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। তারা দেশের চরিত্র পর্যন্ত পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিল। অথচ তাদের নেতা, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী জিয়াউর রহমান হত্যার বিচারের কথা পরিবার বা দলের কেউ মুখে আনেনি এখন পর্যন্ত।
হায়, কি অমানবিক এ স্বজন, পরিজন! সাধারণ একজন গৃহিণী, সাধারণ একজন সন্তানও স্বামী হত্যার, পিতা হত্যার বিচার চেয়ে দরজায় দরজায় ঘুরে অথচ...।
মতিয়া চৌধুরী একবার জিয়া হত্যার বিচার নিয়ে কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই বক্তব্যের প্রতুত্তরে মতিয়া চৌধুরীকে মামলা করতে, লড়তে বলেছিলেন। মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, সোয়ামি উনার আর মামলা করতাম আমি...!
বাংলা সিনেমার একটা গান মনে পড়ল হঠাৎ। সিনেমার নাম সম্ভবত ‘আব্বাজান’। অভিনেতা মান্না আর রাজীব ছিলেন। ‘তোমার মরণ কালে কাঁদবে যে জন সে জন তোমার আপনজন....’।
সর্বোচ্চ সুযোগ থাকার পরও যার হত্যা বিচার করেননি সে কীভাবে কারো স্বজন হয়? কি করুণ এই ফুরিয়ে যাওয়া।
জিয়াউর রহমান, একটা পরিবারের প্রধান বাণিজ্যিক পণ্য!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য