প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এনামুল হক এনাম | ০২ জুন, ২০২১
সিলেট-৩ আসন! সিলেট-১ আসনের সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ায় এই আসনের গুরুত্ব ও আগ্রহ অনেক বেশি, প্রার্থী, ভোটার এমনকি ঐ এলাকার বাইরের নন ভোটারদের কাছেও। তাই হয়তো সিলেট-৩ আসনের শূন্য পদে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করলেও খোদ সিলেট-১ আসনের সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে অনেক পদপ্রার্থী তাদের নির্বাচনী ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। নিবন্ধের শুরুতেই প্রশ্ন করে বসি, সিলেট-৩ আসনের একজন ভোটার হিসেবে কিংবা সিলেটের নাগরিক হিসেবে কেমন প্রার্থী বা সাংসদ আপনি দেখতে চান?
ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-দক্ষিণ সুরমা এই তিন উপজেলা নিয়ে ৩ লক্ষ ২২ হাজার ২৯৩ জন ভোটারের এই আসন নিয়ে আগামীতে হবে উপনির্বাচন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় সদ্য প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদের মৃত্যুর পর আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই আসনের উপ নির্বাচন। মাহমুদ-উস-সামাদের মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই এই আসনের উপনির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
গত এক দশকে ভোটের রাজনীতির বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। তাছাড়া টাকার জোরে উড়ে এসে জুড়ে বসার প্রথা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনগুলোতে পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এখনও হয়। আমাদের ভয় দুই জায়গায়ই। অর্থ, ক্ষমতা আর রাজনীতির মারপ্যাঁচে যোগ্য ব্যক্তি যদি এমপি হতে না পারেন, তবে হয়তো এমনও দেখা লাগতে পারে এই আসনের কোন এমপি ভিন দেশের জেলে মানব বা অর্থ পাচারর দায়ে বন্দি কিংবা দেশের সাংসদ হয়েও কানাডার বেগম পাড়ার বাসিন্দা।
এসব উদাহরণের পুনরাবৃত্তি যেন বারবার না হয় সেজন্য যারা মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় সুপারিশকারীগণ ও ভোটার সর্বোপরি সিলেটের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই, আমাদের এলাকায় একজন সৎ, যোগ্য ব্যক্তি সাংসদ হয়ে আসুন, যিনি শুধু এলাকার নয়, পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নে, ডিজিটাল বাংলার রূপায়নে অবদান রাখতে পারবেন। যাকে নিয়ে এলাকার মানুষ গর্ব করবে। যার পরিচিতি জাতীয় পর্যায়ে আছে, যিনি ঢাকাকেন্দ্রিক সচিবালয়, মন্ত্রণালয়ের অলিগলি চেনেন, যিনি শিক্ষিত হবেন এবং তাকে সিলেট থেকে ঢাকা অবধি সবাই মূল্যায়ন করবে, এক নামে চিনবে। (একবার ভেবে দেখুন, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত মোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্য, যাদের দিকনির্দেশনায় দেশ চলে কতজনের নাম আমরা জানি বা চিনি!)
গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আসলে কে আসবেন, কে হবেন সাংসদ? বলা মুশকিল। কিন্তু বিভিন্ন দলের নীতিনির্ধারণী স্থান থেকে যে বা যারা মনোনয়নের জন্য প্রার্থীকে আলোচনায় আনেন বা নির্বাচিত করেন, সম্মানিত সেই ব্যক্তিবর্গের কাছে আমাদের কি দাবি থাকতে পারে?
দেখুন, প্রথমেই আমাদের সংসদ সদস্যের কিছু অত্যাবশ্যকীয় গুণাবলী, যা না থাকলেই নয়… সেগুলি উল্লেখ করি। সবচেয়ে জরুরি, প্রার্থীর মধ্যে নেতৃত্বগুণ থাকতেই হবে। তিনি যদি নেতৃত্বগুণে পারদর্শী না হন, বা ব্যর্থ নেতা হন তবে উনাকে আলোচনায় না আনাই শ্রেয়। প্রার্থীকে অবশ্যই জনগণের বিশ্বস্ত হতে হবে, বিশ্বস্ত হতে হবে দেশ ও দলের প্রতি। প্রার্থীর কর্মজীবন, কর্মঅভিজ্ঞতা, দল ও দেশের সঙ্কটে সঠিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব দেয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতা অতি জরুরি বলে মনে করি। তিনি সৃজনশীল কাজে উৎসাহী এবং কর্মতৎপর হবেন। প্রার্থীর পূর্ববর্তী কর্মযজ্ঞে জনগণ আস্থাশীল হবে, জানবে হ্যাঁ আমাদের একজন প্রার্থী আছে যিনি সক্রিয় এবং বিশ্বাসী, যার যোগ্যতায় আস্থা রাখা যায়। ব্যক্তি হিসেবে আমি বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের মধ্যে যোগ্যতার যে অভাব দেখি তা হল প্রগতিশীলতা। দক্ষ, শিক্ষিত এবং নৈতিক গুণের সাথে প্রগতিশীলতাকে আমি গুরুত্বের সাথে আলোচনায় আনতে চাই। কুসংস্কারমুক্ত শিক্ষিত একজন প্রগতিশীল ব্যক্তি দেশ ও সমাজকে অনেক কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।আমরা চাই না এই আসনে কোন রাজনৈতিক মুনাফা-লোভী, সুবিধাভোগী ব্যক্তি ডিগবাজি দিয়ে দক্ষ যোগ্য প্রার্থীকে ডিঙিয়ে সংসদে যাক, যার কারণে সিলেট-৩ আসনসহ পুরো সিলেটবাসী লজ্জিত হয়। কারণ অতীতে এমন প্রার্থীর উদাহরণ বাংলাদেশ, এমনকি সিলেটেও কম নয়।
সাধারণত, সংসদ সদস্যরা তার অনুসারী/দলের আনুগত্য স্বীকার করে কাজ করেন এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা চাই পরিবর্তন আসুক, সংসদ সদস্য শুধু দল নয়, জনগণের আনুগত্য স্বীকার করে নিজেকে জনগণের তরে নিয়োজিত করুন। দিন দ্রুত বদলাচ্ছে, হাতের কাছে মোবাইল, ইন্টারনেট, নিউজ, ইউটিউব… কোন এমপি দৌড় দিলেন আর কোন এমপিকে কারা কাদা ছুড়ে মারলো তা মুহূর্তেই শুধু নিউজ নয় ভিডিও আকারে জনগণের হাতে চলে আসে। আমরা চাই না কোন অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সিলেট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হোন, যিনি তার কর্মদোষে জনরোষের শিকার হবেন… যার কারণে তার দল-দেশ লজ্জিত হবে। আমরা চাই ব্যক্তি সংসদ সদস্য জনগণের স্বার্থে কাজ করবেন। আত্মীয়স্বজন বা দালালবেষ্টিত না হয়ে জনগণের নেতা হয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবেন। ব্যক্তিস্বার্থের সীমাবদ্ধতাকে উৎরে তিনি এলাকার জনসেবক হিসেবে নিজেকে নিবেদিত করবেন, দেশের জন্য কাজ করবেন। এমন একজন প্রার্থীর খুব দরকার।
যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না, সাংবিধানিক চেতনায় অসাম্প্রদায়িক মানুষ হয়ে সকল দল, মত, জাতি, গোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবেন। যিনি মৌখিক স্বপ্ন দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না করে বাস্তববাদী হয়ে কাজ করবেন। এমন প্রার্থী দল থেকে নির্ধারিত হবেন যিনি নির্বাচিত হলে তার সততা এবং কার্যগুণে জাতীয় পর্যায়ে দলের বিজ্ঞাপন হবেন। দাপ্তরিক কাজকর্ম ও কর্তব্যে তো তার পারফরম্যান্স ভাল থাকবেই, নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং তার অধীন কাউকে দুর্নীতিও করতে দেবেন না… এমন লোক চাই। যার নাম শুনলেই দুর্নীতিবাজ কর্মচারী, দালালরা দশবার চিন্তা করবে, দুর্নীতি করে সে রেহাই পাবে না। এমপির হিসেবে তিনি একটি দলীয় "ম্যান্ডেট" নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়াবেন, যা বাস্তবমুখী এবং পূর্ববর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে চিত্তাকর্ষক। যার চেক-লিস্টে প্রথমেই থাকবে মানুষের প্রতি ভালবাসা, এলাকার উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন। যিনি একজন আধুনিক মানুষ হবেন, চিন্তা-চেতনায়, কর্মে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে।
এসব কিছুর বাইরে গিয়েও জনগণ হিসেবে প্রার্থীর কয়েকটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাই। যেমন:
প্রথমত. প্রার্থীর ট্র্যাকরেকর্ড কেমন এবং কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা কী? যা শুরুতেই বলে দেবে প্রার্থী হিসেবে তিনি কতটা যোগ্য এবং নির্বাচিত হয়ে এলে আমাদের জন্য কী করবেন।
দ্বিতীয়ত. পূর্ববর্তী সময়ে যেখানে বা যে সংগঠনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সেখানে তার নেতৃত্ব কেমন ছিল, তিনি দায়িত্ব সচেতন ছিলেন কি না। কর্মে নিষ্ঠাবান এবং সংগঠনের প্রতি ব্যক্তির প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা কেমন তা সহজেই জানিয়ে দেয়।
তৃতীয়ত. নীতি নৈতিকতায় তিনি আপোষহীন কি না?
চতুর্থত. এলাকা, জনগণ এবং দেশের উন্নয়নের প্রতি আদৌ ব্যক্তির আগ্রহ আছে কি না! নাকি তিনি মৌসুমি পাখির মত উড়ে এসেছেন উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা লুটপাটের উদ্দেশ্যে?
দেখুন, পাঠক হিসেবে আমার দাবি আপনাদের কারও কাছে খুবই হাস্যকর এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অযৌক্তিক মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি আমি স্বপ্নবাজ মানুষ, সত্যই স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি একজন সৎ, শিক্ষিত, কর্মদক্ষ যোগ্য মানুষের, যিনি সাংসদ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নেবেন এবং জনগণের উন্নয়ন করবেন। ভেবে দেখুন, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও স্বাধীন সার্বভৌম দেশে, একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সংবিধানে এই চাওয়াটা কি সত্যিই খুব বেশি কিছু?
প্রার্থী হিসেবে আমরা একজন সত্যিকারের আলোকিত, যোগ্য মানুষ চাই। সত্যিই কি তা বেশি কিছু!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য