প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ০৩ জুন, ২০২১
এলএসডি ড্রাগ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ এমনভাবে আলোচনা করছে যে এই ভয়াবহ মাদক ‘রাজকীয়’ পরিচয় পেয়ে গেছে নিজের অজান্তেই। অপেক্ষা করেন। অপেক্ষা করেন। অপেক্ষা করেন। আমাদের অবচেতন মনের ভুলে এলএসডি যেভাবে প্রচার পেয়েছে শীঘ্রই এটা ‘ফ্যাশন, ক্রেজ’ হতে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রটি নিজের গলায় দা চালিয়েছে সে যতক্ষণ পেরেছে দৌড়াতে-দৌড়াতে নিজের গলায় দা চালিয়েছে। কোন ব্যথা তাকে স্পর্শ করেনি। কি ভয়ংকর অবস্থা!
একবার চিন্তা করুন ছেলেটা যদি ওই দিনের আসক্ত অবস্থায় দৌড়াতে-দৌড়াতে নিজের গলার বদলে অন্যকে কোপানো শুরু করতো? কতজন আহত হতো? কতজন নিহত হতো? কি নৃশংস অবস্থা... জলজ্যান্ত একটা ছেলে নিজের গলায় নিজেই একের পর এক কোপ মেরে গেছে যতক্ষণ হাতে দা ধরে রাখতে পেরেছে।
এরমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়া চার এলএসডি ব্যবসায়ী ও আসক্তদের প্রতি ফেইসবুকে অনেক মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে। নিজের অজান্তেই এলএসডিকে এমনভাবে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে যে এর প্রতি একটা শ্রেণির হঠাৎ আগ্রহ বাড়বেই। কেউ টেস্ট করার জন্য আর কেউ হিরোইজম, স্মার্টনেস দেখানোর জন্য এই মাদক খুঁজবে।
ধরা পড়া ছেলেগুলোকে নিয়ে ট্রলের পরিবর্তে আমরা যদি মাদকের ফলে তার মানসিক অবস্থা, আচরণ ফোকাস করতাম তবে কিছুটা হলে উপকার হতো। নিজের গলায় একের পর এক দা চালানো ঢাবির ছাত্রটি ও গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের ভেতর পার্থক্য কী? ড্রাগস ব্যবসায়ী হিসাবে ধরা খেয়েছে। টিভি ক্যামেরার সামনে এসে হ্যালো বলছে হাত নেড়ে, চুলের স্টাইল করছে, হাসছে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব পরিচিত সবাই টিভি দেখবে মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী হিসাবে; কিন্তু কোন বিকার নাই, উল্টা হাসিখুশি। জেল খাটার, পুলিশি জেরারও কোন ডর নাই। যেন তারা গৌরবের কাজ করেছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এলএসডি। এর ছিল ড্রাগ নিয়ন্ত্রিত বায়োবোট। আমরা এ বিষয়টা প্রায় ফোকাস করিনি। উল্টা ট্রল করতে গিয়ে এলএসডির মার্কেটিং করেছি।
অনেকেই এলএসডির জন্ম পরিচয় নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। কারো কারো পোস্ট থেকে এলএসডি তৈরির সূত্র সম্বদ্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এতে সুবিধা হয়েছে যে এলএসডি বানাতে না পারলেও ঐসব ফেবু, ব্লগ পোস্টের কারণে কেউ কেউ এলএসডির কাস্টমাইজ বা বাংলা ভার্সন তৈরি করবে। কি দরকার ছিল এলএসডির ঠিকুজি বা তৈরির সূত্র নিয়ে পোস্ট দেওয়ার?
এই ড্রাগ একবার নিলেও স্থায়ী মানসিক বিকারগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে। এই ড্রাগস এতই ভয়াবহ যে পৃথিবীর সব দেশেই কঠিনতম ভাবে নিষিদ্ধ- এ সব নিয়ে পোস্ট দিলে ভালো হতো। এলএসডি একবার খেলেই নাকি কেউ কেউ সারা জীবনের জন্য ঘোরে ঢুকে, মনোজগতে কখনও কখনও স্থায়ী পরিবর্তন আসে। আমরা এসব নিয়ে পোস্ট দিলে ভালো হতো। ভালো না হলেও অন্তত খারাপ হতো না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকেই ফালতু মনে করেন। এটা তাদের অজ্ঞতা। বা নিজেকে বাস্তবতা, বর্তমান থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ২০১৩-এর গণআন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জঙ্গিবাদের উত্থানের বড় হাতিয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অনেক অপরাধী ধরা পড়ছে। অনেক ক্ষমতাবান অপরাধ করে আগের মতো পার পাচ্ছে না।
সামাজিক মাধ্যমে স্পর্শকাতর সামাজিক, রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে লেখার আগে কিছুটা ভাবলে লেখাগুলো নিজ চরিত্রে রাখা যায় আর তা না হলে ভালো লেখাও কখনও কখনও বিপরীত ফল দেয়। যেমন চলমান এলএসডি ইস্যু।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য