আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ছয় দফা

ড. শামীম আহমেদ  

ছয় দফা বাংলাদেশীদের স্বাধিকার আন্দোলনের এমন এক দলিল যা প্রমাণ করে আমরা হুট করে স্বাধীনতা চাই নাই। একটা জাতি যতটা ধীরস্থিরভাবে তার অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে, তার সবই বাংলাদেশীরা করেছে। তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকরা তাদের অত্যাচার নিপীড়ন না থামানোতেই আমাদের ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আলাদা রাষ্ট্র স্থাপন করতে হয়েছিল।

ছয় দফা নিয়ে অনেকেরই গভীর পড়াশোনা নাই। কেউ কেউ মনে করেন ছয় দফা ছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি, বাংলাদেশের দাবি। ব্যাপারটা তা না। তরুণ প্রজন্ম এই ব্যাপারটা নিয়ে তেমন জানেন না, তাদেরকে পুরাপুরি দোষও দিতে পারি না। আমন ধান চাষে ৩ দিন না ৫ দিনের মাথায় সেচ দিতে হবে, অথবা মিয়ানমারের খনিজ সম্পদ কী– এগুলা মুখস্থ করতে হইলে আর ছয় দফা নিয়ে জানার সুযোগ কই পাবে।

আমি সংক্ষেপে ছয় দফা নিয়ে মূল কয়টা কথা বলতে চাই আমার বাংলার এই তরুণ প্রজন্মের জন্য। আমি আমার ভাষায় বলব, যারা আগ্রহী তারা পরে যেয়ে আসল দলিল পড়ে নেবেন। কিন্তু এই কয়টা কথা মাথায় রাখবেন, এই অনুরোধ থাকল। আমি লেখার কোথাও পূর্ব পাকিস্তান ব্যবহার করব না, বাংলাদেশ ব্যবহার করব।

প্রথম দফা: যেহেতু পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত, তাই উভয় পক্ষের স্বাধিকার রক্ষায় একটা কেন্দ্রীয় সরকার হবে, যেখানে গণতান্ত্রিক সংসদীয় সরকার দেশ চালাবে। আইন পরিষদ নির্ধারিত হবে ভোটের মাধ্যমে।

দ্বিতীয় দফা: কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র ডিফেন্স এবং পররাষ্ট্র নীতি এই বিষয় দেখভাল করবে। এর বাইরের সব কিছু প্রাদেশিক সরকার দেখভাল করবে।

খেয়াল করেন এই দফার মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তৃতীয় দফা: পশ্চিম পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে দুইটা মুদ্রা চালু থাকবে কিন্তু যেকোনোটি দেশের অন্য অংশে ঝামেলাহীনভাবে ব্যবহার করা যাবে। অথবা, একটি মুদ্রা চালু থাকলে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মুদ্রা পাচার বন্ধ করতে হবে, বাংলাদেশের জন্য আলাদা ব্যাংক রিজার্ভ থাকতে হবে।

এই দফাটা খুব জরুরি কারণ জানা দরকার যে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের মোট বাজেটের ৭১ শতাংশ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানে যেখানে পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগ হতো বাংলাদেশ থেকে।

চতুর্থ দফা: কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক অংশে কর ধার্য করতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের কর ধার্য করবে বাংলাদেশ, তার ব্যয়ও হবে বাংলাদেশে। তবে করের একটা অংশ খরচ চালানোর জন্য উভয় অংশই কেন্দ্রীয় সরকারকে দেবে।

যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তান অন্যায্যভাবে বাংলাদেশের হক নিয়ে যাচ্ছিল, তাই এই দফাটি বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পঞ্চম দফা: সকল প্রদেশের ব্যবসা সংক্রান্ত আয় ব্যয়ের আলাদা হিসাব থাকবে। যে প্রদেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে, তার উপর কেবল তার হক থাকবে। কেন্দ্রীয়ভাবে যে বৈদেশিক মুদ্রার দরকার তা সকল প্রদেশ মিলে সরবরাহ করবে। এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে পণ্য চালানে শুল্ক বা কর থাকবে না। প্রদেশগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে, এবং নিজেরাই চুক্তি করতে পারবে।

ষষ্ঠ দফা: প্রদেশগুলোকে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের অনুমতি প্রদান করতে হবে।

উপরে ছয় দফার একটা সারাংশ দিলাম যা আমার নিজের ভাষায় সহজ করে লেখা তরুণ প্রজন্মের জন্য। অগ্রগামী পাঠকরা আগ্রহী হলে অবশ্যই মূল দলিলটি পড়বেন। ভাষাগত ভিন্নতার ক্ষেত্রে মূল দলিলই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হবে।

আরেকটু ভালো করে বোঝার জন্য ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবটি পড়ে নেবেন। ছয় দফা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের একটা মূল দলিল যা অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং তাঁর নেতৃত্বের গভীরতার দিকনির্দেশ করে। পরবর্তীতে এই দলিলকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হতো।

আমাদের বয়সী বা আমাদের চাইতে প্রবীণরাও হয়ত ছয় দফাগুলো জানতেন না। এতে লজ্জার কিছু নাই। আমরা অনেক কিছুই জানি না। একজন আরেকজনকে জানানোর উদ্যোগটাও আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

ড. শামীম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক-বিজ্ঞান গবেষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ