প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২১ জুন, ২০২১
সারাদেশে ইঞ্জিন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। করোনাকালীন হাজার হাজার বা লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে, রোজগার অর্ধেকে বা তারচেয়ে কমে গেছে অনেকের। এ অবস্থায় ব্যাটারি, অটো বা ইঞ্জিনচালিত রিকশা বন্ধ করে দিলে লাখ বা তারও বেশি মানুষ কাজ হারাবে।
অনেকেই ধার দেনা করে অটোরিকশা কিনেছে। হঠাৎ করে সব বন্ধ করে দিলে এই মানুষগুলোর হয়ত ভিটামাটি বিক্রি করতে হবে দেনা শোধ করতে। কেউ কেউ সংসারের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে চুরি, ছিনতাইও শুরু করবে। ধরা খেয়ে জেলটেল হলে বা গণ পিটুনিতে আহত নিহত হলে এদের ঘরের স্ত্রী, কন্যারা হতে পারে আদিমপেশা বেছে নিতে বাধ্য হবেন।
অটোরিকশা চালকদের মধ্য অনেকেই বয়োবৃদ্ধ। এদের দ্বারা কনস্ট্রাকশন কুলি, সাধারণ রিকশা চালানো অসম্ভব। এরা চুরি, ছিনতাইও করতে পারবেন না। ফলত ভিক্ষাবৃত্তি।
মফস্বল গ্রাম এলাকায় পাবলিক যানবাহন চাওয়ার সাথে সাথে পাওয়া যায় না। দুরের রাস্তায় বাইক, সি.এন.জি, ইঞ্জিনচালিত রিকশায় যেতে হয়। অনেকেই বিশেষ করে মহিলারা বাইকে চড়তে চান না, সিএনজি ভাড়াও বেশি তাই অটোরিকশায় চলাচল করেন। অটোরিকশা বন্ধ হলে এই মানুষগুলো বিপদে পড়বেন।
অটোরিকশা আসার পর আরেকটা শ্রেণিরও অমানবিক শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে রিকশাচালকদের মতো। ফেরিওয়ালা। কি শহর কি গ্রাম সবখানেই মাছ, সবজির ফেরিওয়ালারা অটো ভ্যান ব্যাবহার করে। এতে তাদের রোজগারও বেড়ে গেছে। তাজা শাক সবজি, মাছ পচার আগেই মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। করোনার সময় দেখছি বয়লার মুরগি, ফলফলাদি, গরুর দুধ, ডিমও অটোরিকশা ভ্যানে বিক্রি শুরু হয়েছে। এতে বাজারের ভিড় এড়িয়ে মানুষ সহজেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারছে।
এই অটোরিকশাগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়। প্রকাশ্যেই হাজার হাজার অটোরিকশা, টমটম, ইজি বাইকের কারখানা। এই অটোরিকশা বন্ধ করলে এই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা বেকার হবে। অনেকেই মোটা টাকা বিনিয়োগ করে অটোরিকশা, টমটম, ইজি বাইকের শো-রুম দিয়েছেন। এরাও পথে বসে যাবে।
বঙ্গবন্ধু বলেছেন "গণমানুষের" বাংলাদেশ। যে কোন আইন, নিয়ম করতে হলে আগে গণমানুষের কথা ভাবতে হবে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে আইন শৃঙ্খলাও খারাপ হতে বাধ্য। করোনার সময়ে আমাদের এই ক্ষমতা নাই যে পেট ভরিয়ে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো। মানুষ তেমন কিছু চাইছেও না। গণমানুষ নিজের রোজগার নিজেই করতে চায়। এদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে শ্রম বিক্রি। ইঞ্জিনের রিকশা থাকলে সাধারণ রিকশার চালানোর মতো অমানবিক পরিশ্রম করতে হয় না। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ অটোরিকশা বন্ধ করা অমানবিকতার চূড়ান্ত ।
যত আইন করা হোক অটোরিকশা বন্ধ করা যাবে না। ফলাফল হবে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য