প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২৩ জুন, ২০২১
পৃথিবীর প্রাচীনতম দলগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জন্মের পর থেকে দলটিকে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজ এখনও তা চলমান। অনেকের কাছে আওয়ামী লীগ অপরাধী। ভয়ঙ্কর রকম অপরাধী।
আওয়ামী লীগের অপরাধ "বাঙালি"।
"তুমি কে? আমি কে? বাঙালি বাঙালি"।
আওয়ামী লীগের অপরাধ "বাংলাদেশ"।
তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।
আজও চলমান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এই ৭২ বছর বয়সি দলটির জন্মই হয়েছিল গণমানুষের ভাঙা ঘরের ক্ষুধার কষ্টে, উত্তরী বায়ের কনকনে বাতাসে শীতের কষ্টের মতো আরও অনেক কষ্ট থেকে। আওয়ামী লীগের জন্ম প্রাসাদষড়যন্ত্র বা কালোবুটের অসততার কারণে বন্দুকের নল দিয়ে জন্ম হয় নাই।
এই গণমানুষই আওয়ামী লীগের গভীরতম শক্তি। সাধারণ, স্বল্প আয়ের, শ্রমজীবী মানুষেরা আওয়ামী লীগকে দহনকালেও পুড়তে দেয় নাই। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে, বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি থেকে বিলীন করতে, মুছে ফেলতে হেন কোন চেষ্টা নাই যে করে নাই জিয়াউর রহমান। সময়ের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন। গণমানুষের নেতা। তার প্রমাণ "৭১"।
৭৫ পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ছবি অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল সামরিক সরকারের নির্দেশে। এমনকি যে সব সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল (থানা, সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যে) সে সব ছবিকে আবার সম্পাদনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কোন সিনেমায় ওই শট বা দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে, কোন সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ঘোলা করে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রিয়পাত্র মুক্তিযোদ্ধা খসরুর পীড়াপীড়িতে বঙ্গবন্ধু নিজ পদে অভিনয় করেন। স্যালুটের দৃশ্য। সিনেমার নাম সংগ্রাম। সেই সিনেমা অলিখিত নিষিদ্ধ হয়। আরও কত কী!
কিন্তু ফলাফল: মাছের মাথা ছাড়া মুড়িঘণ্ট। উদাহরণ: শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন। বারবার দেশে আসতে চাইলেও শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেয় নাই জিয়াউর রহমান। ৮১-তে দেশীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা যখন নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ এখন প্রায় মুছে গেছে, শেখ হাসিনা দেশে এলে কোন আন্দোলন তৈরি হবে না, শেখ হাসিনাকে ঢাকার বাইরের তেমন কেউ চিনে না তখনই জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে দেশে ঢুকতে দেয়। গোয়েন্দা, এলাকাভিত্তিক নবগঠিত বিএনপির নেতাদের রিপোর্ট ঠিকই ছিল। শেখ হাসিনাকে তেমন কেউ চিনে না। আর আওয়ামী লীগ তো ক্ষতবিক্ষত।কিন্তু শেখ হাসিনা যে দিন দেশে আসেন সে দিন দৃশ্য অন্য রকম। অদ্ভুত? হাস্যকর? গায়েবী? পরম্পরা? রক্তের টান? কোনটা বলা যাবে?
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জিয়াউর রহমান কিছুটা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। গোয়েন্দা কার্যক্রম বেড়ে যায় ঢাকাতে। শেখ হাসিনা দেশে আসছে এই খবর যেন বেশি প্রচার না হয় সেই দিকে আগে থেকেই কঠোর নির্দেশ দেওয়া ছিল। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী তেমন লোক সমাগম হবে না এয়ারপোর্টে। ঘণ্টায়, ঘণ্টায় জিয়াউর রহমান খবর নিচ্ছিলেন। দুপুর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু দুপুরের পর হঠাৎ দেখা গেল ঢাকার সব গাছের পাতা যেন মানুষ হয়ে যাচ্ছে। ছেড়া লুঙ্গি, আদুল গা, পরিস্কার পোশাক, ৮০ বছরের কৃষক, ২০ বছরের ছাত্র কে নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়তি ফোর্স তলব করা হয়। কিন্তু এত মানুষ! এত মানুষ!! আরও ফোর্স রেডি রাখা হয়। প্রয়োজনে, লাঠিচার্জ, গুলিও চালানো হবে। অবস্থা তখনও সে দিকে যায়নি। বিভিন্ন দিক থেকে মানুষ এয়ারপোর্টমুখী। কিন্তু সে এলাকা আগেই মানুষ ভর্তি। ঢাকাও জ্যাম হয়ে যাচ্ছে। মানুষ। ঢাকার সবগুলো প্রবেশ পথেই মানুষের ঢল। হেঁটে আসছে, ট্রাকে আসছে, বাসে আসছে এমনকি গরু মহিষের গাড়িতেও আসছে। সব গোপনীয়তার পরও সারাবাংলায় চাউর হয়ে গিয়েছিল শেখের বেটি আসছে। বঙ্গবন্ধুর বেটি আসছে। মুজিব ভাইর বেটি আসছে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে আরও ফোর্স পাঠানো হয়। কিন্তু সবারই এক উত্তর ট্যাংক কামান দিয়েও এখন কিছু করা যাবে না। একটুও বাড়াবাড়ি করলে ক্যান্টনমেন্টই মানুষ গুড়ো করে ফেলবে। জিয়াউর রহমানের জন্য হেলিকপ্টার তৈরি করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখলে অন্য ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়ার জন্য।
শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ঢাকার আকাশে দেখা যাওয়ার সাথে সাথে আরও তিনটা ঘটনা ঘটে: প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি, মানুষের বিলাপ, কান্না ও কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়। সামরিক সরকার ভেবে ছিল তুফান, বৃষ্টিতে মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ আরও ঘন হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে এদেশের, এ ভূমির, বাঙালিদের সম্পর্ক নাড়ির সম্পর্ক। বারবার তা প্রমাণ হয়েছে।
পনেরো আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও একই ঘটনা ঘটেছে। সরকারি, বেসরকারি সব অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আহতদের জন্য রক্ত দিতে যাওয়া মানুষদের উপর হাসপাতালের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, পিটিয়েছেও। আমিও দৌড়ানি খেয়েছি। অথচ তখন হাসপাতালের ভিতরে রক্তের জন্য হাহাকার।
গণমানুষ কখনই আওয়ামী লীগ থেকে দূরে যায় নাই। যদিও আওয়ামী লীগ কখনও কখনও গণমানুষের কথা ভুলে গেছে, সাধারণ সমর্থক, কর্মীদের সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু বাঙালি, গণমানুষ কখনই আওয়ামী লীগ থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে নাই। বারবার এই ভূমি তার প্রমাণ দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের আজ ৭২তম জন্মদিনের দিন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই নিজেও এখন "প্রতিষ্ঠান"। কিন্তু আত্মিক উন্নতি কতটুকু হয়েছে? বাঙালিকে বাঙালি রাখার জন্য, অসাম্প্রদায়িক অবস্থা আগের মতো ফিরিয়ে আনতে হলে "৭২ এর সংবিধানে" ফিরে যাওয়ার বিকল্প কী!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য