আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সাঈদ খোকন ও রাজনীতির শিষ্টাচার

জহিরুল হক বাপি  

সাঈদ খোকনের বক্তব্য দেখলাম, শুনলাম এবং কিছুক্ষণের জন্য অবাক হলাম। যদিও আমি সহজে অবাক হই না। সাঈদ খোকন দুর্নীতি করেছেন কি করেননি তার ফয়সালা দেবে আদালত আর আমরা সাধারণ মানুষ দু'পক্ষ হয়ে চায়ের ব্যবসা বাড়াবো, বিকাল কাটাবো, ইন্টারনেট ডাটা খরচ করবো, ঝগড়া তো হবেই। এটা আমাদের বিনোদন।

কয়েকজন এমপি, প্রাক্তন-বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাকে দুদক তলব করেছে, বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। তারা জেরার মুখোমুখিও হয়েছেন। প্রাক্তন মেয়র সাঈদ খোকনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত চেয়েছে দুদক। এ বিষয়ে সাঈদ খোকনের প্রেস কনফারেন্স দেখে মোটামুটি বেআক্কেল হয়ে ছিলাম কিছু সময়ের জন্য! তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে বর্তমান মেয়রের নির্দেশে তাকে দুদক নাজেহাল করছে! সর্বনাশ! যে মুহূর্তে দুদকের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা জন্মাচ্ছ সেই ক্ষণে সাঈদ খোকন এটা কী বললেন! দুদক কি বর্তমান মেয়রের হাতের মোবাইল? বর্তমান মেয়র মোবাইলের নম্বর বের করে কল দেয় আর দুদক কটি-মাস্ক পরে সে দিকে দৌড়ায়? যেহেতু সাঈদ খোকনের হাতে ক্ষমতা নাই তাই বর্তমান ক্ষমতাধরের দ্বারা তিনি নির্যাতিত। সাঈদ খোকনের হাতে যখন ক্ষমতা ছিল তখন তিনি নিশ্চিত এমন "দুদক নিয়ন্ত্রণ" করেছেন। তা না হলে তিনি এত স্পষ্ট করে কীভাবে বলছেন? "দুদকের" নামে তদন্ত হওয়া জরুরি, জরুরি এবং জরুরি।

সাঈদ খোকন জন্ম থেকেই আঙুর। আমাদের মতো আমজনতা না। পারিবারিকভাবেই তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত, সম্মানিত পরিবারের সম্মান। তিনি নিজেও ঢাকার মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তাই তার কথার গুরুত্ব সাধারণ দশজনের চেয়ে অনেক বেশি।

অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্ন করি সাঈদ খোকনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কয়েকজন এমপির বিদেশযাত্রায় নিষেধের কারণ কোন "ক্ষমতাবান"? সরকারদলীয় এমপি। ক্ষমতাবান। তারমানে এদের চেয়ে কোন ক্ষমতাবান কেউ দুদক দিয়ে এদের নাজেহাল করছে। দুদক ক্ষমতাবান মাপে কীভাবে? এ নিয়ে বাংলা সিনেমা হলে নাম হতে পারে: বিধি বলে দাও দুদক কার?

বক্তব্যে সাঈদ খোকন তার বাবার প্রসঙ্গ আনলেন? কেন আনলেন? মেয়র হানিফকে কেউ অসম্মান করেনি, তাকে ভুলেও যায়নি। বরং সাঈদ খোকন ভুলে গেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগে সংস্কার চাওয়া, নতুন দল গড়তে চাওয়া নবীন সাঈদ খোকন পারিবারিক কোটায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকার মেয়র হতে পেরেছিলেন। পারিবারিক কোটা না হলে সাঈদ খোকন হয়ত আমার মতো সাধারণ জনতা হয়ে অন্য কারো বক্তব্য শুনতেন।

এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। আওয়ামী লীগের স্বামী কোটা, স্ত্রী কোটা, ভাই কোটা, পুত্র কোটা, বোন কোটা আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করেছে বারবার। সেটা তাদের দলীয় বিষয়। কিন্তু বেলাশেষে ভোগান্তিতে পড়েছে গণমানুষ, নৃশংসতমভাবে বঞ্চিত হয়েছে যুগের পর যুগ রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে আওয়ামী লীগের চরমতম দুর্দিনে আগলে রাখা নেতারা। আশাহত হয়েছে কর্মী সমর্থক। সাঈদ খোকনের বক্তব্যের ভাষা সম্ভবত এমন হতো না যদি ব্যক্তি যোগ্যতায় ঢাকার মেয়রের মনোনয়ন পেতেন। সাঈদ খোকন বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুখ হা করে যেভাবে অভিব্যক্তি দিলেন তা দেখার সময় কেমন যেন অস্বস্তি হয়েছে। মুখ হা করে এমন অভিব্যক্তি তার বয়স, শিক্ষা, রুচি, অবস্থা, অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত মনে হলো।

সাঈদ খোকনের বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন মেয়র হানিফের বয়স্ক স্ত্রী "লাঞ্ছিত" হলে জনগণ মেনে নেবে না। এ কথা শুনে মাথায় ঠাডা পড়ছে। কাউকে লাঞ্ছিত করা এখন আমরা আর মানি না। রাস্তার কুকুরকেও মারার কারণে এ দেশে এখন প্রতিবাদী মিছিল হয়, গ্রেপ্তারও হয়। আর একজন মানুষকে লাঞ্ছিত করলে আমরা তো প্রতিবাদ করবোই। নিশ্চিত। কিন্তু, দুদক নিয়ে প্রেস কনফারেন্স কেন বর্তমান মেয়রের কথা আসছে তা খুব কষ্টেসৃষ্টে বুঝে নিয়েছি। মানে, গায়ের জোরে বুঝেছি। কিন্তু এই বক্তব্যে সাঈদ খোকনের "মায়ের" প্রসঙ্গ এবং "লাঞ্ছিত" শব্দটা কেন এসেছে গায়ের জোরেও বুঝতে পারছি না। উনার নামেও কি দুদক বা অন্য কোন মামলা হয়েছে? আর লাঞ্ছিত করবে কে? দুদক? পুলিশ? দুদক কি মানুষকে লাঞ্ছিত করে? পুলিশ যে করে তা জানি। কিন্তু এটা কি মগের মুল্লুক যে একজন বয়স্কা মানুষ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হবেন? নাকি লাঞ্ছিত করবে বর্তমান মেয়র?

সাঈদ খোকন তার বক্তব্যে কয়েকবার "জনগণ" শব্দটা ব্যবহার করেছেন। তার সারাংশ করলে অর্থ দাঁড়ায় সাধারণ জনগণ প্রাক্তন মেয়রকে নিয়ে বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুত। যেহেতু আমি এবং আমার আশপাশের সবাই আমজনতা-ঘামজনতা সেহেতু একটা কথা বলতে চাই। এমন কোন অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা আমি কারো মধ্যেই দেখিনি। ডেঙ্গুর সময় চলছে এখন। সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময় ডেঙ্গুর মহামারী হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কয়েল কোম্পানি, বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, মশারি কোম্পানিরগুলোর ছিল রমরমা ব্যবসা, সুদিন। সে সময়কার "মেয়রের" তখন জনগণের কথা একটুও মনে ছিলও না। তার তখনকার বক্তব্য শুনে মনে হতো একটা মানুষ এত নির্দয় কীভাবে হয়? বাকিটা বললাম না।

বর্তমান মেয়রের আমলে ডেঙ্গু নাই। ডেঙ্গুর পিক মৌসুমে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর লাশের সারিও নাই। রোযার ঈদের দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সাদত সালেহকে দেখলাম দলবল নিয়ে রাস্তায়। এগিয়ে গেলাম। ডেঙ্গুর ঘরবাড়ি পর্যবেক্ষণ, ধ্বংস চলছে। যারা ঔষধ ছিটাচ্ছে তাদের দেখে অভিজ্ঞতা বিভ্রান্ত হলো। এরা কারা? স্মার্ট কটি, স্মার্ট পোশাক। ডা. সালেহর উৎপাতের জন্য মানুষজনের কাছে পরিচিত। জিজ্ঞেস করলাম ঈদের দিনও ডিউটি পড়েছে কিনা। হাসি মুখে উত্তর দিলেন- নাহ, নিজ দায়িত্বেই বের হয়েছি। তার মূল বক্তব্য মেয়র স্যারের কড়া নির্দেশ কোনভাবে ডেঙ্গু বাড়তে দেওয়া যাবে না, মানুষকে মশার কামড় খাওয়ানো যাবে না, রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনা জমে থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে মেয়র নাকি 'শকুনের মতো দৃষ্টি' রাখেন। ডা. সালেহও প্রচণ্ড সিনসিয়ার, মানুষ-দেশপ্রেমি। কাজ করে আনন্দ পান। তাই তার সর্বোচ্চ সুপরিয়র বর্তমান মেয়রের কারণে ডা. সালেহর অবস্থা এমনি নাচনি বুড়ি- তার উপর ঢোলের বাড়ি।

আপনাদের কোন্দল, রাজনৈতিক না। কেন শুধু এর মধ্যে জনগণকে টানছেন? কিসের ভিত্তিতে জনগণকে টানলেন সাঈদ খোকন? তার সময়ে ডেঙ্গুতে রক্তের জন্য হাহাকার লেগেছিল। দিন রাত ভোর নাই রক্ত যোগাড়ের জন্য ফোন আসা ফোন করার কথা এখনও জ্বলজ্বলে। তার বিপরীতে এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু দূরে থাক সাধারণ মশার কামড়ও প্রায় নাই। সাধারণ, নির্দলীয়, সাধারণ সমর্থক কেউই সম্ভবত মশার কামড় খেতে চাইবে না, ডেঙ্গু তো অনেক পরের বিষয়।

সাঈদ খোকন তার পরিবারের রক্ত দেওয়ার কথা বললেন। ত্যাগের কথা বললেন। আমরা জানি, মানি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান মেয়রের নামেও যদি আজ, কাল বা ভবিষ্যতে দুর্নীতির একাডেমিক অভিযোগ উঠে, দুদক মামলা করে তবে ১৫ আগস্টে নৃশংসতমভাগে এতিম হবার কারণে, অভুক্ত থেকে, আশ্রয়হীন, নিরাপত্তাহীন হয়ে বেড়ে ওঠার কারণে সব দায় থেকে মুক্তি পাবেন? সাঈদ খোকনের তুলনায় ফজলে নুর তাপসের "কষ্ট, যন্ত্রণার" ইতিহাস কয়েক'শ কোটি গুণ বেশি।

প্রাক্তন মেয়রের সাথে বর্তমান মেয়রের কোন্দল এমনকি ব্যক্তিগত কিলাকিলিও থাকতে পারে। কিন্তু জনসম্মুখে এমন বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে রাজনৈতিক পারিবারিক সব বিষয়েই ময়লা লাগিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের ঘটনা আচরণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলবেই। একজন সমর্থক তার নেতাকে অনুসরণ করবেই। সব কিছুরই স্কুলিং দরকার। রাজনৈতিক জাতীয় পরিচিত ব্যক্তিত্বরা যদি জনসম্মুখে যা তা আচরণ করে তবে- আই হেইট পলিটিক্স প্রজন্ম তৈরি হবেই।

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ