প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ২৩ জুলাই, ২০২১
৫ জুলাই জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা রয়টার্সের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদের শুরুতে উল্লেখ, ‘১৯ জুলাই থেকে করোনা সংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে ব্রিটিশ সরকার। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে আইনি বিধি আরোপ না করে, জনগণের ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধের ওপর ছেড়ে দিতে চাইছে দেশটি, এমনকি মাস্ক পরা, না পরার বিষয়টিও নাগরিকদের ইচ্ছাধীন রাখতে চায় কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু মারের উপস্থাপনায়, আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এসব কথা জানিয়েছেন দেশটির আবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক।’
এই সংবাদের একাংশে বলা হয়েছে, ‘স্কটিশ সরকার মনে করে মাস্কের ‘চলমান প্রয়োজন’ থাকবে।’ ওই দেশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আগামী ৯ আগস্ট সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে। স্কটিশ সরকারের বিশ্বাস গণপরিবহন এবং দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন।’ সংবাদটিতে এও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং আয়ারল্যান্ড সরকার নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলছে। ব্রিটিশ মন্ত্রী বিধিনিষেধ তুলে নিলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের একটা নতুন সময়ে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করতে শেখতে হবে।’ এ ব্যাপারে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চেয়ারম্যান ডা. চান্দ নাগপাল বিবিসিকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে এখন করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলে তা শুধু একটি মারাত্মক ভুল নয়, বরং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪৯ লাখ ৩ হাজার ৪৩৪ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ২২২ জন। অবস্থা দিন দিন অবনতির ফলে করোনা ভাইরাসের সাথে বসবাসের চিন্তা দেশটির রাষ্ট্রযন্ত্রের।
বাংলাদেশে ৫ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জন। মৃত্যু ১৫ হাজার ২২৯ জন। গত ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু ২০১ জন। এদেশে আবহাওয়া, জীবন-যাত্রার ধরন বিবেচনায় আমাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট ভালো। সচেতনতার অভাবে মধ্যম আয়ের এই দেশটিতে করোনা বিধিনিষেধ বার-বার বাড়াতে হচ্ছে; তবে বিধিনিষেধ বাড়িয়ে লাভ হয়নি। দিন দিন অবস্থা অবনতির দিকে এগোচ্ছে। কঠোর লকডাউন চলছে, প্রশাসন কঠোর, জীবনের তাগিদে ভুক্তভোগীদের লুকোচুরিও চলছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দেওয়া এক ভাষণে উল্লেখ করেছেন, ‘করোনা বিধিনিষেধের ফলে দেশের ১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার লোকসান হয়েছে।’ তাঁর এই ভাষণে স্পষ্ট হয়েছে বিষয়টি সরকারের মস্তিষ্কে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু উপায় নেই! বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে দেশের বাস্তবতা জটিল আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ খবর যেমন নিত্যদিনের, তেমনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা বরাদ্দ করা হলেও, প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৭০ টাকার খাবার। একে তো আতঙ্ক, রোগীর কাছে ভিড়ছে না আপনজনরা, এর ওপর খাবারের মান নিম্ন। সঙ্গত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কর্মহীন মানুষের আয়-রোজগার না থাকায় অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সম্প্রতি যাদের পাশে সরকার সংশ্লিষ্টরা দাঁড়ালেও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা ‘সইতেও পারছে না, কইতেও পারছে না;’ অবস্থায় রয়েছে। তাদের খোঁজ-খবর রাখার বিষয়টি এখন সময়ের দাবি।
খবরে প্রকাশ, মুন্সিগঞ্জে সন্তানের খাবার জোগাড় করতে না পারায় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছে এক ভুক্তভোগী। বাচ্চার দুধের টাকা জোগাড় করতে না পেরে, রাস্তায় কান্নারত বাবার করুণ দৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন সাংবাদিক বন্ধুরা। লকডাউনে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে গত কয়েকদিনে প্রায় দেড় শতাধিক জন মানুষকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ে করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে অনেক ভুক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। থানার দালাল হিসেবে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার খবরও প্রকাশ হচ্ছে। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য কান ধরে ওঠ-বস করানোর মত অসভ্য কালচারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জরিমানার টাকা দোকান থেকে পরিশোধ করতে না পারায়, ধার-দেনা করে পরিশোধ করতে বলছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কলেজ শিক্ষক আব্দুল আজিজকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছেন বাঘমারার এসিল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এদেশের ট্যাক্সে লালিত-পালিত আমলারা।
আমরা জেনেছি, ইদ-উল আযহা উপলক্ষে ১ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং লকডাউন চলাকালীন ত্রাণের জন্য ২৩ কোটি টাকার বরাদ্দ রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দুঃখজনক হলেও সত্যি, দেশটি সোনার হলেও মানুষরাই তামার!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য