প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
কবির য়াহমদ | ২৪ জুলাই, ২০২১
এক সপ্তাহের বেশি সময় ‘ছুটিতে’ ছিল ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। দেশবাসীকে ঈদুল আযহা উদযাপন করিয়ে শুক্রবার ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ ফের ফিরেছে। করোনার সংক্রমণ রোধে ফের শুরু হলো লকডাউন, সরকারি ভাষায় ‘কঠোর বিধিনিষেধ’, আর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় এটা হবে ‘কঠোরতম লকডাউন’।
১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত- এই ক’দিন সরকারের দেওয়া ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ শিথিল করে দেওয়া হয়েছিল মূলত দেশের মানুষদের ঈদ উদযাপনের কথা বিবেচনা করে। কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয় এই ঈদ, এরসঙ্গেও যুক্ত থাকে প্রান্তিক মানুষের অর্থনীতি। সবকিছু বিবেচনা করে সরকার লকডাউনের যে ‘বিরতি’ দিয়েছিল সেই দিনগুলোতে বরাবরের মত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থেকেছে। জনসমাগম হয়েছে, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়েছে। বিধিনিষেধের শিথিলতার সরকারি ঘোষণা থাকায় প্রশাসনেরও করার কিছু ছিল না। অবশ্য বিধিনিষেধের সময়ে যে তারা খুব বেশি তৎপর থাকে সেটাও না। প্রেস রিলিজ দেওয়ার মত কার্যক্রম সম্পাদিত হলেই যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক তৎপরতা সীমিত হয়ে পড়ে সেখানে বিধিনিষেধের শিথিলতার সময়ে তাদের কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করাটাও ভুল হয়ত।
ঈদ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনীতি যে কারণেই হোক বিধিনিষেধের শিথিলতার সময়েও মানুষ করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু সেটা কেউ করেনি। অনেকের কাছে বন্দিত্ব থেকে মুক্তির ঘোষণার মত হয়ে ওঠেছিল ওই দিনগুলো। এতে করে মানুষ আরও বেশি মানুষের সঙ্গে মিশে নিজেদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের এবং পুরো দেশকে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অথচ এই সময়সহ সব সময়ই মানুষ নিজেদের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ঝুঁকিটা অন্তত কমত। কিন্তু সে সুযোগ আর দেখছি না।
বাংলাদেশে করোনার স্থায়িত্বের দেড় বছর হতে চলল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১১ লাখ ৪০ হাজার ২০০ জন; মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৫ জনের। সরকারি এই হিসাবটা মূলত আক্রান্তের নয়, শনাক্তের। শনাক্ত বলতে তাদেরকেই বুঝানো হচ্ছে যারা সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনার পরীক্ষা করেছেন। করোনা পরীক্ষার করেননি আবার করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, সুস্থ হয়েছেন এবং মারাও গেছেন সেই হিসাবটা এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নেই। একই কথা প্রযোজ্য করোনায় মৃত্যুর তথ্যেও, যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সে তথ্যও তাই আসছে না সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
গত বছরের শুরুতে করোনার মৃত্যুর তথ্যপ্রকাশে শুরুর কয়েকদিন যখন তিন-তিন কিংবা সাঁইত্রিশ-চৌত্রিশ-তেতাল্লিশসহ কিছু সংখ্যা একাধিকবার উচ্চারিত হচ্ছিল তখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ওই সন্দেহ কি স্রেফ সন্দেহ নাকি অন্যকিছু সে বিতর্কে যাওয়া উচিত এখনই হবে না বলে অদ্যকার ইঙ্গিতও যাচ্ছে না ওদিকে, তবে গত কয়েকদিন ধরে দুই শতাধিকের ঘরে যেভাবে মৃতের সংখ্যাটা পৌঁছাল তাতে আতঙ্ক ভর করেছে। কতটা বাজে পরিস্থিতি? একই কথা প্রযোজ্য শনাক্তের সংখ্যাতেও। শঙ্কার বিষয় শনাক্তের হারও। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়লে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভেবেছেন কখনও!
বাংলাদেশ করোনায় কতখানি বিপর্যস্ত তার প্রমাণ নিকট অতীতের তথ্য ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। গত মাসে যেখানে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, এ মাসের ২২ দিনেই তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মৃত্যুর তথ্যেও একই চিত্র। জুনে যেখানে মৃত্যু ছিল ১ হাজার ৮৮৪ জনের সেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে এই মহামারিতে। আগেও বলেছি এখনও বলি এগুলো সরকারি হিসাব, অর্থাৎ যারাই করোনার পরীক্ষা করিয়েছেন স্রেফ তাদেরই হিসাব। এর বাইরে যারা করোনার পরীক্ষা করেননি অথচ করোনার উপসর্গ নিয়ে ছিলেন-রয়েছেন তাদের সকলেই এ হিসাবের বাইরে।
করোনার পরীক্ষা নিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। অনেকেই করোনার উপসর্গ থাকলেও অন্য সকলের মত ঘুরে বেড়িয়েছেন, ঘুরে বেড়াচ্ছেন; সামাজিক ভীতি ও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে আবাসস্থলের স্থানিক দূরত্বের কারণে অনেকেই করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখান না। এতে করে একদিকে যেমন তারা সংক্রমণের মাধ্যম হয়ে ওঠেন, অন্যদিকে দেশের করোনার প্রকৃত তথ্যও ওঠে আসে না। এখানে দরকার ছিল উদ্বুদ্ধকরণে সরকারি তরফে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা এবং সরকারি সেবা গ্রহণে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার ঘোষণা দেওয়া। এতে করে করোনার প্রকৃত তথ্য ওঠে আসার পাশাপাশি মানুষ আরও বেশি উদ্বুদ্ধ ও বাধ্য হতো। তবে এখানে প্রধান যে সীমাবদ্ধতা তার মধ্যে রয়েছে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মত ব্যবস্থাপনা; গত দেড় বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে সফল হতে পারেনি।
করোনাকালিন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধিকে প্রায় ‘ছুটিতে’ পাঠিয়ে আত্মবিনাশী পথে আমাদের যে ছুটে চলা তার খেসারত আমাদেরকে কীভাবে দিতে হয় তা সময়ই বলে দেবে। একদিকে করোনার ভয়াল থাবা, আর অন্যদিকে আমরা লকডাউন-লকডাউন খেলছি; কখনও লকডাউন, কখনও ‘লকডাউনের ছুটি’ আবার ছুটি শেষে ফের লকডাউন। এভাবে কি চলে? করোনা কি ঈদ চেনে, করোনা কি উপনির্বাচন চেনে? চেনে না! এর মাশুল ত আমাদেরকেই দিতে হবে!
করোনার পরীক্ষা নিয়ে আমাদের মধ্যে আগ্রহ নেই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমরা আগ্রহী নই, ভ্যাকসিনেও আমাদের অনাগ্রহ; আগ্রহ শুধু নিয়ম ভাঙার আর নিয়ম করে নিয়ম ভাঙার পথ দেখিয়ে দেওয়ার। এভাবে আসলে চলতে পারে না; না কেন্দ্রের, না প্রান্তের!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য